আপত্তিকর মন্তব্যের জেরঃ বিদেশনীতিতে বড় ধাক্কা

banner

#Pravati Sangbad Digital Desk:

 “হেথায় আর্য হেথা অনার্য হেথায় দ্রাবিড় চীন,
  শক হূণ দল পাঠান মুঘল এক দেহে হল লীন”
কবিগুরুর এই উপলব্ধি আজকের ভারতবর্ষে একইসঙ্গে খুব প্রাসঙ্গিক এবং অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। কারণ এই চিন্তন, এই সহিষ্ণুতার যে প্রয়োজনীয়তা তা আজ খুব প্রাসঙ্গিক, কিন্তু এই বিশ্বাস যে আজ কিছু মানসিকতা থেকে বিলুপ্ত সেই পরিপ্রেক্ষিতে এই লাইনগুলি যেন মূল্য হারিয়েছে। এই ফিচার প্রবন্ধের কেন্দ্রবিন্দুতে আছে অতি সাম্প্রতিক একটি বেলাগাম, দায়িত্বজ্ঞানহীন,অপ্রীতিকর মন্তব্য যার দৈর্ঘ্য হয়ত খুব ছোটো,কিন্তু প্রস্থ এবং গভীরতা সুদূরপ্রসারী।
বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র নূপুর শর্মা, ২৬-শে মে একটি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেলে সম্প্রচারিত এক বিতর্কসভায় পয়গম্বর কে নিয়ে একটি বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন যার জেরে তোলপাড় দেশীয় তথা আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং অবশ্যই ধাক্কা খেয়েছে বিদেশনীতি। বিতর্কিত টুইটের মাধ্যমে,নূপুরের মন্তব্যের পদাঙ্ক অনুসরণ করেছেন দিল্লি বিজেপির মুখপাত্র শ্রী নবীন জিন্দল এবং উভয়েই বর্তমানে সাসপেন্ডেড। এই ঘটনার প্রভাব হিংসা-প্রতিহিংসার মাধ্যমে বিস্তারলাভ করে কানপুরে শুক্রবারে নামাজ-পরবর্তী সময়ে উগরে দেওয়া বিক্ষোভে যে ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে ১৫০০ জনের বিরুদ্ধে যেখানে ধরা পড়েছেন ২৯ জন। ৪ঠা জুন, ওমানের গ্র্যান্ড মুফতির টুইট ব্যাক্ত করছে যে এই মন্তব্য ইসলামিক শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধঘোষণার সংকেতপ্রদান করছে। মধ্যপ্রাচ্য ও পশ্চিম-এশিয়ার বাজারগুলি ধীরে ধীরে বয়কট করতে শুরু করেছে ভারতীয় পণ্য, বন্ধ হতে পারে তেলের আমদানি।  বৈদেশিক ও কূটনৈতিক সম্পর্কের বিপন্নতা লক্ষ্য করে ৫ই জুন অর্থাৎ মন্তব্যের ১০ দিন পর বিজেপির পক্ষ থেকে বিবৃতিতে দলের সর্বধর্মসহিষ্ণুতার এবং সার্বভৌমতার বার্তা প্রেরণ করা হয়েছে। দল থেকে বিতর্কের দুই মুখের অপসারণ সত্ত্বেও সমালোচনা পিছু ছাড়ছে না মোদী সরকারের। ইসলামিক দেশগুলি ভারতের ক্ষমাপ্রার্থনার দাবি  জানালেও বিরোধী দলগুলির মতামত ভিন্ন ,তাঁদের বক্তব্য যে রাজনৈতিক গোষ্ঠী এখন সরকারে আসীন তাঁদের ক্ষমা চাওয়া উচিত, কোনো ব্যাক্তিগত মন্তব্যের দায় ভারত সরকার নেবে না।
 একইসঙ্গে বিরোধী দলগুলি সরকারের প্রতি আক্রমণ শানিয়েছে, যেমন সোমবার কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী  বলেন বিজেপির ধর্মান্ধতা ভারতকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অবক্ষয়ের দিকে এগিয়ে দিচ্ছে এবং আমাদের মাতৃভূমি ঝাঁজরা হয়ে যাচ্ছে । তেলেঙ্গানার মন্ত্রী কে টি আরের বক্তব্য এহেন মন্তব্য গুলিতে প্রছন্ন ও পরোক্ষ প্রশ্রয় আছে শীর্ষস্থানিয়দের, তাঁদের সমর্থন ছাড়া এই বিতর্কগুলি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারেনা। সার্বভৌমত্ব, সৌ-ভ্রাতৃত্ব সবকিছু গৈরিকিকরণের ফলে  বিলুপ্তির পথে এমনটাই মনে করছেন তাঁরা। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর পোষিত মতামত হল এ মন্তব্য হিন্দুধর্মের উদারপন্থার পরিপন্থি।বিএসপি নেত্রী মায়াবতীও গর্জে উঠেছেন নবীন- নূপুরের কারাদণ্ডের সপক্ষে। উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছে মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডও।
সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে ভারতীয় চাকরিপ্রার্থী,বণিকসম্প্রদায়ের আধিক্য আছে,পাকিস্তান সহ পশ্চিম এশিয়ার একাধিক দেশগুলির সঙ্গে সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রয়েছে ভারতের। ছিল শিক্ষা,সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান, দেশনায়কদের মধ্যে সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎকার সব মিলিয়ে একটি সখ্যের ছবি পরিস্ফুট ছিল এতদিন। এখন কি সেই ছবি মলিন হয়ে যাবে? এর উত্তর একমাত্র দিতে পারে সময় এবং দলের তথা শীর্ষস্থানীয়দের নমনীয় মনোভাব। যদিও তাঁর মন্তব্যের স্বপক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করে ক্ষমাপ্রার্থী নূপুর ,তবুও ইসলামবিদ্বেষী এই মন্তব্যে ভারতের সম্পর্কে বিরূপ ধারণা পোষণ করছেন অধিকাংশ রাষ্ট্রনায়কেরা, যার ফলে শুরু হয়েছে বাকবিতণ্ডা এবং উত্তর প্রত্যুত্তর যা অগ্নিস্ফুলিঙ্গের কাজ না করলেই সর্বতভাবে মঙ্গল।

#Source: online/Digital/Social Media News # Representative Image

Journalist Name : Suchismita Dasgupta

Tags:

Related News