৯০-এ বাঘা বাইন - স্মরনে রবি

banner

#Pravati Sangbad Digital Desk:

সময়টা ৫০ এর দশক প্রখ্যাত অভিনেতা উৎপল দত্তের পরিচালনায় মঞ্চস্থ হচ্ছে এক নাটক, আর সেই নাটকেই এক সাংবাদিকের ভুমিকাই আত্মপ্রকাশ বাঙালির প্রিয় রবীন্দ্রনাথ ঘোষের, যদিও আপামর বাঙালির কাছে তিনি প্রিয় রবি ঘোষ নামেই, তবে তার আসল নাম রবীন্দ্রনাথ ঘোষ দস্তিদার। বাংলা চলচিত্র জগতে রবি ঘোষ এক অবিস্মরণীয় নাম। শুধু যে সিনেমা তা নয়, বড় পর্দা ছাড়াও পেশাদারি রঙ্গমঞ্চে তিনি সমান দক্ষতার সাথে দাপট দেখিয়ে গেছেন। উত্তম-সৌমিত্র যুগে যখন আপামর বাঙালি সমাজ মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের মতো দুই ভাগে বিভক্ত ঠিক সেই সময় সেই বিভক্ত বাঙালি সমাজ হাহা করে হেসে উঠেছেন রবি ঘোষের অভিনয় দেখে। ৫০এর দশকে মিনার্ভা থিয়েটারে হাউসফুল করানোর জন্য তিনি ছিলেন একাই একশো।


 রবি ঘোষের জন্ম ১৯৩১ সালের ২৪শে নভেম্বর তৎকালীন ইংরেজ শাসিত কলকাতায়। ১৯৪৯ সালে ম্যাট্রিক পাশ করে তিনি আশুতোষ কলেজের বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। এমনকি ১৯৫৩ সাল থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত তিনি বংশাল কোর্টে কাজ করেন। কিন্তু বাঙালির প্রিয় কমেডিয়ান রবি ঘোষ প্রথম জীবনে চেয়েছিলেন বডিবিল্ডার হতে, অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন তার মনে একটুও ছিল না, আর থাকবেই বা কি করে রবি ঘোষের বডি থাকলেও না ছিল রূপ, না ছিল উচ্চতা। কিন্তু সেই মানুষই তার অভিনয় দক্ষতা দিয়ে হয়ে উঠলেন বাঙালির চিরকালের প্রিয় কৌতুকাভিনেতা।


অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় অঙ্গার নাটকে তার অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন। ১৯৫৯ সালে রবি ঘোষ আহবান সিনেমায় একটি ছোট ভুমিকায় অভিনয় করেন, এবং এটিই ছিল তার জীবনের মোড়, এই ছবি দেখেই প্রখ্যাত অভিনেতা তপন সিনহা তার প্রতি বিশেষ লক্ষ্য দেন। ঠিক এর পরেই তপন সিনহা তার চলচ্চিত্র গল্প হলেও সত্যি তে রবি ঘোষকে তুলে ধরেন। এর পরে অবশ্য রবি ঘোষকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি, বাঙালি মননে তিনি তার পাকাপাকি ভাবে জায়গা গড়ে নেন। এরপর তিনি ডাক পান বাঙালির সর্বকালের সেরা পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের কাছে গুপি গাইন বাঘা বাইন (১৯৭০) এর বাঘাকে মনে আছে তো, হ্যাঁ ঠিক সেই বাঘা আজও বাংলা চলচ্চিত্রে এক মাইলফলক। এছাড়া অভিযান (১৯৬২), অরন্যের দিনরাত্রি (১৯৭০), হীরক রাজার দেশে (১৯৮০), গুপি বাঘা ফিরে এলো (১৯৯১), পদ্মা নদীর মাঝি (১৯৯৩), চার মূর্তি (১৯৭৮) আরও অসংখ্য সিনেমার সম্ভার তার ঝুলিতে। ১৯৭০ সালে গুপী গাইন বাঘা বাইন ছবির জন্য তিনি বার্লিন ফিল্ম ফেস্টিবেলে অংশ নেন। তার অভিনয় দক্ষতায় তিনি নজর কেরেছিলেন চিত্র পরিচালক মৃণাল সেনের। ধন্যিমেয়ে ছবির পুরোহিত তোতলা ভট্টাচার্য কিংবা আসিতে আসিও না ছবির সেই ইন্সপেক্টর সবই তার অমলিন কীর্তি। বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করে তিনি দর্শক থেকে শুরু করে পরিচালকদের কাছে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। চলচিত্র নাটক ছাড়াও তিনি টেলিভিশনে সমান পারদর্শী ছিলেন। এরপর তাঁকে কিছু উপমহাদেশখ্যাত ছবি তেও অভিনয় করতে দেখা গেছে। তিনি শুধুই যে অভিনয় করেছেন তা নয়, তিনি দুটি ছবি পরিচালনাও করেন, যেগুলি হল- নিধিরাম সদ্দার এবং কড়চা। অভিনয় জগতে তাঁর অবদানের জন্য তিনি আনন্দলোক অ্যাওয়ার্ড এবং কালাকার অ্যাওয়ার্ড পান। আজও বাঙালি হৃদয়ে তিনি সর্বকালের সেরা কৌতুক অভিনেতার স্থান অর্জন করে আছেন। কাল অর্থাৎ ২৪শে নভেম্বর তাঁর ৯০ তম জন্মবার্ষিকীতে আমারা তাঁকে জানাই বিনম্র প্রণাম।

#Source: online/Digital/Social Media News # Representative Image

Journalist Name : Sabyasachi Chatterjee

Related News