এনআরএস হাসপাতালে এই পদ্ধতিতে বুধবার দুজন রোগীর অস্ত্রোপচার হয়েছে। দুটি অস্ত্রোপচারই সফল হয়েছে। এই দুই রোগীর নাম হল এন সি বাছাড় (৬৬)। তিনি নদিয়ার বাসিন্দা এবং দ্বিতীয় জন হলেন মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা এন ঘোষ (৭৪)। তাদের প্রস্টেট গ্রন্থি বেড়ে গিয়েছিল। ওজন হয়েছিল যথাক্রমে ৪৮ গ্রাম এবং ৬৫ গ্রাম।
কোনওরকমের কাটাছেঁড়া ছাড়াই একেবারে অভিনব পদ্ধতিতে প্রস্টেটের অস্ত্রোপচার করে নজির গড়ল কলকাতার এনআরএস হাসপাতাল। আর এই অস্ত্রোপচার হয়েছে মাত্র ৫ মিনিটে। এই সম্পূর্ণ অস্ত্রোপচার করা হয়েছে জলীয় বাষ্প বা স্টিমের সাহায্যে। চিকিৎসকদের পরিভাষায় এই পদ্ধতির নাম হল ‘ওয়াটার ভেপার থেরাপি’। হাসপাতালের দাবি, দেশের সরকারি হাসপাতালগুলির মধ্যে এই পদ্ধতিতে প্রথম প্রস্টেটের অস্ত্রোপচার হল এনআরএসে।
১. ইউরিন বা প্রস্রাব বেরনো বন্ধ হওয়া ২. ইউরিন স্বাভাবিকভাবে না বেরনো ৩. ইউরিন ধরে রাখতে না পারা ৪. প্রস্রাবের জায়গায় জ্বালা করা, ব্যথা করা এবং হেমাচুরিয়া বা রক্তপাত হওয়া। অপারেশন ও প্রসিডিওরের প্রচলিত পদ্ধতি দু’টি। একটি টিইউআরপি বা ট্রান্স ইউরেথ্রাল রিসেকশন অব দ্য প্রস্টেট। এক্ষেত্রে বর্ধিত প্রস্টেট কেটে বের করা হয়। দ্বিতীয়টি লেজার। চিকিৎসকদের দাবি, নয়া পদ্ধতি অনেক নির্ঝঞ্ঝাট।
জানা গিয়েছে, এনআরএস হাসপাতালে এই পদ্ধতিতে বুধবার দুজন রোগীর অস্ত্রোপচার হয়েছে। দুটি অস্ত্রোপচারই সফল হয়েছে। এই দুই রোগীর নাম হল এন সি বাছাড় (৬৬)। তিনি নদিয়ার বাসিন্দা এবং দ্বিতীয় জন হলেন মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা এন ঘোষ (৭৪)। তাদের প্রস্টেট গ্রন্থি বেড়ে গিয়েছিল। ওজন হয়েছিল যথাক্রমে ৪৮ গ্রাম এবং ৬৫ গ্রাম। এরপরে তারা এনআরএস হাসপাতালে আসেন। সেখানে চিকিৎসকরা তাদের অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন।
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এই পদ্ধতিতে বিশেষ সূচ বা নিডলের সাহায্যে ১০৩ ডিগ্রি তাপমাত্রায় বাষ্প প্রয়োগ করা হয়। আর তাতে খুব অল্প সময়ে প্রস্টেট গ্রন্থি আগের অবস্থায় ফিরে আসে। রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি জেনারেটর হল এই থেরাপি প্রয়োগের প্রধান যন্ত্র। তার মাধ্যমে জলকে ১০৩ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ফুটিয়ে বাষ্পে পরিণত করা হয়। এছাড়া আরও একটি যন্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। সেটি এক ধরনের হাতে ব্যবহার করা যন্ত্র। এই যন্ত্রের সাহায্যে সূচের মাধ্যমে জলীয় বাষ্প প্রস্টেটে প্রবেশ করানো হয়েছে।
এই পদ্ধতি বিশ্বে প্রথম প্রয়োগ হয়েছিল ২০১৫ সালে। তবে ভারতে চালু হয়েছে ২০২৪ সালে। এনআরএস ছাড়া এর আগে দুটি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে এই পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার হয়েছে। তবে সেই প্রতিষ্ঠানগুলি বেসরকারি। এনআরএস হাসপাতালের ইউরোলজির প্রধান ডাঃ তপন কুমার মণ্ডল জানান, এনআরএসে এই পদ্ধতির প্রয়োগ এই প্রথম।
প্রসঙ্গত, চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন সাধারণ অবস্থায় মানব দেহে প্রস্টেট গ্রন্থির ওজন হয়ে থাকে ২০ থেকে ২৫ গ্রাম। কিন্তু, এর ওজন বেড়ে গেলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। যেমন- প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, ব্যথা করা, রক্তপাত হওয়া এছাড়াও আরও বিভিন্ন সমস্যা। যদিও প্রস্টেটের অস্ত্রোপচারের একাধিক পদ্ধতি রয়েছে। তবে চিকিৎসকদের দাবি, নতুন এই পদ্ধতিটি সবচেয়ে নিরাপদ। অস্ত্রোপচারের মাত্র ১০ মিনিট পরেই রোগীকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া যেতে পারে।