জ্ঞান অর্জন এবং বহির্বিশ্বের সংস্পর্শে আসার জন্য বহু যুগ ধরে এক মাত্র স্থান ছিল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় গুলি। প্রতি প্রজন্ম তাদের জীবনের প্রথম ২৫ বছর কাটিয়েছে ডিগ্রি অর্জন করতে এবং আগামী দিনের উজ্জ্বল ভবিষ্যত তৈরি করতে। তবে আজকে যেভাবে শিক্ষা ব্যবস্থা দেখা যায় তা দুই দশক আগে তেমন ছিল না। প্রাপ্ত ডিগ্রী ছিল কর্মক্ষেত্র নিয়োগ পাওয়ার যোগ্যতার একমাত্র প্রমাণ, যা অবশ্যই বর্তমান যুগে প্রযোজ্য নয়।
তথ্য অনুসারে, প্রায় ৩.৭ কোটি শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষার জন্য নথিভুক্ত রয়েছে একাধিক ডিগ্রি এবং কলেজ গুলিতে। যদিও চাকরির সংখ্যা এবং তথাকথিত সাফল্যের পরিমাপ ১০% এর কম অর্থাৎ ৩৭ লক্ষ শিক্ষার্থী তাদের ডিগ্রি শেষ করার পরেও চাকরি পাচ্ছে না। অর্থনীতির উত্থানের সাথে, কাজের প্রকৃতি ও দক্ষতা ডিগ্রির চেয়ে অনেক বেশি। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের অনুমান অনুযায়ী ১ বিলিয়নেরও বেশি চাকরি, বিশ্বব্যাপী সমস্ত চাকরির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ আগামী দশকে প্রযুক্তির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ডিজিটাল মাধ্যমের ত্বরান্বিত প্রসার ইতিমধ্যে তা সম্ভব করে দেখিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ওষুধ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুলি ইতিমধ্যেই ডিজিটাল হয়ে উঠেছে। এমনকি ছোট দোকান বা খুচরা বিক্রেতারাও তাদের গ্রাহক সংখ্যা বাড়াতে অ্যাপ-ভিত্তিক ব্যবসায় চলে যাচ্ছে। ইন্টারনেট, ডিজিটাল-চালিত বিশ্বে মানুষের কাজ করার জন্য বেশ কয়েকটি পথ খুলে দিয়েছে। সর্বোপরি কোভিড-১৯ আধুনিক অর্থনীতিতে কর্মজীবনকে ত্বরান্বিত করার জন্য ছাত্র এবং পেশাদারদের আপস্কিলিং এবং স্কিলিং প্রোগ্রামে যোগদানের যথেষ্ট কারণ দিয়েছে। কলেজ ডিগ্রী থেকে দক্ষতার দিকে ঝুঁকে পড়ছে অনেক পড়ুয়া কারণ তা ভবিষ্যতে কর্মসংস্থানের পথ খুলে দিয়েছে।এছাড়াও, এটি শুধুমাত্র যোগ্যতা বা ডিগ্রির ভিত্তিতে নয়, তাদের মেধার ভিত্তিতে প্রার্থীদের বাছাই করে ব্যাপক কর্মসংস্থানের শূন্যতা পূরণ করে।
আধুনিক
কর্মক্ষেত্রে সাফল্য লাভের অন্যতম উপায় সফট স্কিল অর্জন করা । বিশ্ব যেহেতু
ডিজিটালাইজেশনের দিকে এগিয়েছে, সফট স্কিল আধুনিক অর্থনীতির চাবিকাঠি হয়ে উঠেছে। একজন ব্যক্তির কমিউনিকেশন স্কিল তার কর্মজীবনের অন্যতম সেরা দক্ষতা হতে পারে। কারণ তার যোগাযোগ করার, বোঝানোর এবং শেষে তার কোম্পানির জন্য চুক্তি গঠনের দক্ষতা যেকোনো ডিগ্রিকে পিছনে ফেলে দিতে পারে।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ফিউচার অফ জবস রিপোর্ট অনুসারে - জটিল সমস্যা সমাধান, সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা, সৃজনশীলতা, লোক পরিচালনা এবং মানসিক বুদ্ধিমত্তা ২০২৫ সালের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতার প্রয়োজন হবে। নতুন যুগের স্টার্টআপগুলির উত্থান প্রমাণ করছে যে একটি ব্যবসায়িক চুক্তি জিততে বা ক্যারিয়ারকে ত্বরান্বিত করতে সফট স্কিল আয়ত্ত করা বর্তমান সময়ের প্রয়োজন হয়ে উঠেছে।
মহামারীর
প্রাদুর্ভাব বিশ্বকে শিখিয়েছে অনলাইন শিক্ষা সম্ভব। প্রকৃতপক্ষে এটি শেখার এবং দক্ষতা অর্জনের জায়গা হয়ে উঠেছে। ডিজিটাল লার্নিং এর সম্ভাবনা দক্ষতা-ভিত্তিক শিক্ষাকে সারা বিশ্বের মানুষের জন্য সহজে অ্যাক্সেসযোগ্য করে তুলেছে। এমনকি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলি ডিজিটাল শিক্ষার সুবিধার্থে এবং আধুনিক শিক্ষা কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের নথিভুক্ত করার জন্য EdTech প্ল্যাটফর্মের সাথে সহযোগিতা করছে। এখন অনেক শিক্ষার্থী অনলাইন কোর্স কেই বেছে নিচ্ছে উচ্চশিক্ষার জন্য। কলেজ নাকি নো-কলেজ এই
দশকের অন্যতম বিতর্কিত বিষয়। এমনকি অনেক বিলিয়নেয়ার এবং সফল উদ্যোক্তা যারা কলেজ ছেড়ে দিয়েছে তারা দাবি করে যে কলেজগুলি তাদের
সারাংশ হারাচ্ছে। সুতরাং, কলেজ ডিগ্রির ক্ষমতার চেয়ে দক্ষতার অবশ্যই আধুনিক অর্থনীতিকে সমর্থন করার অনেক কারণ রয়েছে।