বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন উপলক্ষে : গোটা রাজ্য তথা দেশ জুড়ে পালিত হচ্ছে কবিগুরুর জন্মজয়ন্তী!

banner

#Pravati Sangbad Digital Desk:

যে অমর কবির নাম তাঁর কবিতায় বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেছে এবং বিশ্বের দরবারে নোবেল পুরষ্কারের সন্মানে ভূষিত হয়েছেন তিনি হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর,যাকে আমরা শ্রদ্ধার সাথে কবিগুরু বলে উল্লেখ করি। জন্মের প্রথম শুভক্ষণ দেখা দিক বারবার, তাই প্রত্যেক বছর পালিত হয় ২৫শে বৈশাখ। শৈশব থেকেই কবিতা লেখার শখ ছিল তাঁর। মহান কবি হওয়ার পাশাপাশি তিনি মানবতাবাদী, দেশপ্রেমিক, চিত্রশিল্পী, ঔপন্যাসিক, গল্প লেখক, শিক্ষাবিদ ও দার্শনিকও ছিলেন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘হে নূতন’ গানে চির নতুনের মধ্যে দিয়ে তার নিজের পৃথিবীকে আগমনের শুভক্ষণকে তুলে ধরেছিলেন। আজ সেই পঁচিশে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১ -তম জন্ম-জয়ন্তী। বাঙালীর মানসপটে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সদাই বিরাজমান। তিনি আমাদের অহংকার। বাঙালির জীবনের যত ভাবনা,বৈচিত্র্য আছে, তার পুরোটাই লেখনী, সুর আর কাব্যে তুলে ধরেছেন কবিগুরু। রবীন্দ্রজয়ন্তী বা পঁচিশে বৈশাখ বাঙালি জাতির একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক উৎসব। বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে, প্রতি বছর বৈশাখ মাসের ২৫ তারিখে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে এই উৎসব পালিত হয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সহ অন্যান্য রাজ্য এবং বাংলাদেশে ও বাঙালি অধ্যুষিত অঞ্চলে বিপুল উদ্দীপনার সঙ্গে এই উৎসব পালন করা হয়।

বহির্বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের বসবাসকারী বাঙালিরাও এই উৎসব পালন করেন। পিতা দেবেন্দ্রনাথ দেশ ভ্রমণের নেশায় বছরের অধিকাংশ সময় কলকাতার বাইরে অতিবাহিত করতেন। তাই ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান হয়েও রবীন্দ্রনাথের ছেলেবেলা কেটেছিল ভৃত্যদের অনুশাসনে। শৈশবে তিনি কলকাতার ওরিয়েন্টাল সেমিনারি, নরম্যাল স্কুল, বেঙ্গল একাডেমি ও সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজিয়েট স্কুলে পড়াশোনা করেন। ছেলেবেলায় জোড়াসাঁকোর বাড়িতে অথবা বোলপুর ও পানিহাটির বাগানবাড়িতে প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে ঘুরে বেড়াতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। ৮ বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৮ সালে ব্যারিস্টারি পড়ার উদ্দেশে তিনি ইংল্যান্ড যান। সেখানে তিনি ব্রাইটনের একটি পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন। ১৮৭৯ সালে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনে আইনবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। প্রায় দেড় বছর ইংল্যান্ডে কাটিয়ে ১৮৮০ সালে কোনো ডিগ্রি না নিয়ে দেশে ফিরে আসেন। ১৮৮৩ সালের ভবতারিণীর সঙ্গে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বিবাহিত জীবনে ভবতারিণীর নামকরণ হয়েছিল মৃণালিনী দেবী। 


এর মধ্যেই চলতে থাকে তার সাহিত্যচর্চা। ১৮৯১ সাল থেকে পিতার আদেশে নদিয়া, পাবনা, রাজশাহী ও উড়িষ্যার জমিদারি তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ। কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে তিনি দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেন। ১৯০১ সালে রবীন্দ্রনাথ সপরিবারে শিলাইদহ ছেড়ে চলে আসেন বীরভূম জেলার বোলপুর শহরের উপকণ্ঠে শান্তিনিকেতনে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পৌঁছে দিয়েছেন বিকাশের চূড়ান্ত সোপানে। বাংলা ভাষার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথকে গুরুদেব, কবিগুরু ও বিশ্বকবি অভিধায় ভূষিত করা হয়। রবীন্দ্রনাথের ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস ও ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসংকলন তার জীবদ্দশায় ও মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়েছে। নিরিবিলি পরিবেশ, নিভৃত বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চল কুষ্টিয়ার শিলাইদহে কবিগুরুর সাহিত্য চর্চায় জীবনের বেশকিছু মূল্যবান সময় কেটেছে।  ‘যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে' এ বিখ্যাত সংগীতসহ ২ হাজার ২৩২টি গানের অধিকাংশই কুষ্টিয়ার এ শিলাইদহে বসে লিখেছেন কবি। এখানে বসে রচিত গীতাঞ্জলি কাব্যই রবীন্দ্রনাথকে এনে দিয়েছে নোবেল পুরষ্কার আর বিশ্বকবির মর্যাদা। এছাড়াও তিনি এখানে বসেই আমাদের জাতীয় সঙ্গীতসহ অসংখ্য কালজয়ী সাহিত্য রচনা করেছেন। কুঠিবাড়িতে সংরক্ষণ আছে সেসব দিনের নানা স্মৃতি। করোনার কারণে গত দুই বছর এখানে কোন আনুষ্ঠানিকতা ছিলনা। এবার কুঠিবাড়ীতে জাতীয়ভাবে তিনদিনের নানা অনুষ্ঠান মালার আয়োজন করা হয়েছে। 

যে কুঠিবাড়ী রবীন্দ্রনাথকে পূর্ণতা দিয়েছে সেই কুঠিবাড়িতে আবারো আসতে পেরে খুশি রবীন্দ্রপ্রেমী ও দর্শনার্থীরা। এ ব্যাপারে শিলাইদহ রবীন্দ্র কুঠিবাড়ির কাস্টোডিয়ান মুখলেছুর রহমান ভুইয়া জানান, বিশ্বকবির ১৬১তম জন্ম জয়ন্তী উপলক্ষে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় এবং কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে জাতীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হবে। কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক সাইদুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন মহামারী করোনা প্রাদুর্ভাবে বন্ধ ছিলো সকল আয়োজন। কোভিড পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসায় এবছরে কবিগুরুর স্মৃতি বিজড়িত শিলাইদহে জাতীয়ভাবে বিশ্বকবির ১৬১তম জন্মজয়ন্তী উদযাপন করা হবে। ইতোমধ্যে তিনদিন ব্যাপী অনুষ্ঠানের সকল প্রস্ততি সম্পন্ন করা হয়েছে।
প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত কুষ্টিয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমি রবীন্দ্র সংসদসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনে রবীন্দ্রনাথের লেখা গান, কবিতা ও নাটক নিয়ে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। কুঠিবাড়ির বাইরে বসেছে বিশাল জায়গা জুড়ে গ্রামীণ মেলা। মেলায় রয়েছে নাগরদোলা, চরকি, গলম জিলাপি, রবীন্দ্রনাথের ছবি সম্বলিত ক্যাপ, টি -শার্টসহ হরেক রকমের পসরা। সারা বিশ্বের বাঙালিরা তাঁর স্মরণে বেশ কয়েকটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে উদযাপন করে। নাটক, নৃত্যনাট্য, কবিতা এবং গান, সবই কিংবদন্তীর নিজের লেখা ও সুর করা, এই দিনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও থিয়েটারে পরিবেশিত হয়। কলকাতায়, উৎসবটি পঁচিশে বৈশাখ হিসাবে পালিত হয় এবং সমস্ত সাংস্কৃতিক কার্যক্রম জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি (কবিগুরুর পৈতৃক বাড়ি) এবং রবীন্দ্র সদনে ( বিশ্বকবির নামাঙ্কিত সাংস্কৃতিক কেন্দ্র) অনুষ্ঠিত হয়। পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের শান্তিনিকেতনেও মহাসমারোহে পালিত হয় কবিগুরুর জন্মদিবস,সে স্থান যে তাঁরই হাতে গড়ে উঠেছে,তিনিই তো রূপকার।
                 ।। "তুমি আমাদের গর্ব,
                   তুমি আমাদের মহাগুরু,
                      তুমি সেই কবিগুরু"।।

#Source: online/Digital/Social Media News # Representative Image

Journalist Name : Debopriya Banerjee