আজ গুরু নানক জয়ন্তী, জানুন এর মাহাত্ম

banner

#Pravati Sangbad Digital Desk:

শিখ ধর্ম একেশ্বর বাদী ধর্ম। এক ওমকারের উপাসনায় বা ‘ওয়াহেগুরু’ তেই শিখ ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাসী। নিরাকার ব্রাহ্ম সমাজ ও আর্য সমাজের মতোই তাঁরা মূর্তি পূজাতে বিশ্বাসী নন। শিখ ধর্ম গুরু নানকের হাত ধরেই গড়ে ওঠে এবং তাঁর মাধ্যমেই প্রচার ও প্রসার লাভ করে। আমাদের সনাতন ধর্মে যেমন গুরুদেবকেই ‘পরমব্রহ্ম’ বলা হয়, শিখরাও তাই মনে করেন। বস্তুত শিখ ধর্ম হিন্দু ধর্মের একটি অংশ বলেই মনে করা হয়। যেমন বৌদ্ধ ধর্ম বা জৈন ধর্ম। শিখেরা মনে করেন, ওয়াহেগুরু হল সাক্ষাৎ ঈশ্বরের প্রতীক এবং সর্বব্যাপী । তাই ওয়াহেগুরু আরাধ্য। অমৃতসরের স্বর্ণ মন্দির এই ধর্মের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থাপত্য।


আজ নানক জয়ন্তী। আজকের এই তিথিতে ১৪৬৯ সালে অবিভক্ত ভারতবর্ষে পাঞ্জাব প্রদেশে তালবন্দি গ্রামে ক্ষত্রিয় বংশে নানকের জন্ম হয়। স্থানটি বর্তমানে পাকিস্তানের লাহোরের কাছে। ছোটবেলা থেকেই তিনি ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট ও সাধু-সন্তদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। পরবর্তী জীবনে তিনি প্রচুর তীর্থ পরিভ্রমণ করেন। অনেক হিন্দু পণ্ডিত ও মৌলবিদের সান্নিধ্যে আসেন। এরপর তিনি শিখ ধর্ম গঠন করেন। তিনি বলেন, ‘ঈশ্বর–প্রেমই মানুষের মুক্তিলাভের একমাত্র উপায়’। বহু মানুষ নানকের ধর্মমতে অনুপ্রাণিত হন। ১৫৩৮ খ্রীঃ এই গুরু নানকের দেহবসান হয়। তাঁর উপদেশ সংগ্রহ করে শিখদের প্রধান ধর্ম গ্রন্থ ‘গ্রন্থসাহেব’ রচিত হয় । শিখদের মধ্যে দশ জন মহান গুরুর আবির্ভাব হয়- যাঁদের বানী আজও শিখরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। এই দশ জন গুরু হলেন - ১) গুরু নানক ২) গুরু অঙ্গদ ৩) গুরু অমরদাস ৪) গুরু রামদাস ৫) গুরু অর্জুন মল ৬) গুরু হরগোবিন্দ ৭) গুরু হররায় ৮) গুরু হরকিশন ৯) গুরু তেগবাহাদুর ১০) গুরু গোবিন্দ সিং। গুরু নানক  ছিল ১০ শিখগুরুর মধ্যে প্রথম, যিনি শিখ ধর্মের প্রবর্তন করেছিলেন। এই বিশেষ দিনে তাই তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে থাকে শিখ জাতি। তাঁদের বিশ্বাস গুরুনানকজি গোটা বিশ্বকে আলোকিত করে রেখেছে, আর তাই তাঁরই আশীর্বাদ পেতে আয়োজন করা হয় বিশেষ প্রার্থণার।


গুরু নানকের জন্মদিন গুরু নানক জয়ন্তী হিসাবে উদযাপন করে থাকেন।চলতি বছর গুরুনানক জয়ন্তী  পড়েছে ১৯ নভেম্বর ২০২১। এবছর ৫৫২ তম বর্ষে পা দিল গুরু নানক জয়ন্তী। এই উৎসব সারা বিশ্বজুড়ে শিখরা বিশেষ সমারোহে শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করেন। গুরু নানক জয়ন্তী পালনের দিনটি পালিত হয় হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে কার্তিক পূর্ণিমায় অর্থাৎ কার্তিক মাসের পূর্ণিমা তিথিতে। সাধারণ ভাবে এই তারিখটি পড়ে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে। তিনদিন ব্যাপী এই উৎসব শিখদের পবিত্র গ্রন্থ গুরু গ্রন্থসাহেব পাঠের মাধ্যমে সূচনা হয়। একটানা ৪৮ ঘন্টা ধরে কোনও রকম বিরাম না দিয়ে এই গ্রন্থসাহেব পাঠ করা হয় একে অখন্ড পাঠ বলে। গুরু নানক জয়ন্তীর আগের দিনে এই পাঠ সমাপ্ত করা হয়। তারপর প্রভাত ফেরির আয়োজন করা হয়। এই প্রভাত ফেরি গুরুদুয়ারা থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন লোকালয়ের দিকে যায়। মিছিলের আগে আগে পাঁচ জন সশস্ত্র রক্ষী নিশান সাহিব পতাকা বহন করে নিয়ে যায়। তারা একটি পালকিও বহন করে নিয়ে চলে যার মধ্যে থাকে ফুল দিয়ে সুসজ্জিত গুরু গ্রন্থসাহেব। মিছিলে অংশগ্রহনকারীরা ধর্মীয় গান গাইতে গাইতে এগিয়ে চলেন। দুপুরে গুরুদুয়ারায় উপস্থিত লোকজনদের লঙ্গরখানায় বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হয়। প্রচুর শিখ ধর্মালম্বী সেবা ও ভক্তি প্রদর্শনের জন্য স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে কাজ করে থাকেন।


#Source: online/Digital/Social Media News # Representative Image

Journalist Name : Sangita Rana