উৎসব
মুখর বাঙালিদের আটকে রাখা বেশ
কঠিন। তাই করোনাকালীন কঠিন
পরিস্থিতি পেরিয়েও বাঙালির উৎসবের রাশটানা যায়নি। দুর্গা পুজো পেরিয়ে কালীপুজো
ও দোরগোড়ায় এসে উপস্থিত। তবে
তার আগেও রয়েছে আরেক
উৎসব যাকে আমরা ধনতেরাস
বলে জানি।
কিন্তু কি এই উৎসব? এর মাহাত্ম্যই বা কি এবং এই উৎসবের পিছনে পৌরাণিক কাহিনী কি? মূলত কালীপুজোর আগে এই উৎসব আয়োজিত হয়ে থাকে। ধন শব্দের অর্থ সম্পদ ও তেরাস শব্দের অর্থ ত্রয়োদশী। হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুযায়ী তাই কার্তিক মাসের 13 তম কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশী তিথিতে এই উৎসব পালিত হয়। দীপাবলীর আলোর ছটায় যখন মেতে ওঠে 8 থেকে আসি তখন পরিবারের মঙ্গল কামনায় ও ধন-সম্পদের আশায় বহু মানুষ ধনদেবতা কুবের আরাধনা করেন।
ধনতেরাসের
দিন বহু মানুষ মূল্যবান
ধাতুর জিনিস বাসনপত্র নতুন পোশাক কেনেন
কিন্তু কেন তা অনেকেরই
অজানা। এর পিছনে এক
বহুল প্রচলিত পৌরাণিক কাহিনী আছে।বলা হয় রাজা হিম
এর পুত্র সন্তানের বিবাহের চারদিনের দিন মৃত্যু হবে,
এই কথা জেনে তার
পুত্রবধু সারারাত তার স্বামীকে ঘুমাতে
দেননি। সারারাত নানান গল্প বলে, গান
গেয়ে জাগিয়ে রেখে ছিলেন এবং
দরজার বাইরে প্রচুর ধন-সম্পদ, বাসনপত্র,
সোনা রুপোর অলংকার রেখে প্রদীপ জ্বালিয়ে
চারদিক আলো করে দিয়েছিলেন।
মৃত্যুর দেবতা যমরাজ সেদিন সেখানে এলে এত আলোর সমারোহে তার চোখ ধাঁধিয়ে যায় ফলে রাজপুত্র অবধি পৌঁছাতে পারেন না, দরজার বাইরে বসে সারারাত নববধূর গান শুনে বিভোর হয়ে যান এবং পরে দিকভ্রান্ত হয়ে ফিরে যান।
এই ঘটনার পর রাজপরিবারের মানুষ
সোনারূপো প্রভৃতি দিয়ে ধনতেরাস উৎসব পালন করা
শুরু করেন এবং তারা
ধীরে ধীরে সাধারণ মানুষের
মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
ধন দেবতা কুবেরের পাশাপাশি দীপাবলীর দুইদিন আগে লক্ষ্মী দেবীর
পূজা করা হয়। ব্যবসায়ীদের
কাছে এই দিন শুভ
বলে মান্য করা হয়ে থাকে।এই
আরাধনার কেন্দ্রে রয়েছে এক পৌরাণিক গল্প।
সমুদ্র মন্থনের দ্বারা এই দিন দেবতাদের
লক্ষ্মী লাভ হয়েছিল সেই
থেকে ধনতেরাসের দিনে লক্ষী আরাধনার
সূত্রপাত।
মূলত
অবাঙালিদের হলেও ধনতেরাস উপলক্ষে
ধাতু কেনাকাটা এখন বাঙালিরাও গ্রহণ
করে নিয়েছে। কালীপুজোর দিন অশুভ শক্তি
বাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়ে
শুভশক্তির আগমন ঘটে তাই
অনেক বাঙালি এবং সাধ্যমত ধাতু
কেনেন লক্ষ্মী লাভের আশায়।
পৌরাণিক
কাহিনীর আড়ালে উৎসবের সূচনা হলো বর্তমান সময়ে
এই উৎসব যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা রাখে।ধনতেরাস উপলক্ষে কিনা মূল্যবান ধাতু
অসময়ের সঙ্গী গগনচুম্বী সোনার বাজার দর নিয়ে সারা
বছর মনকষাকষি থাকলেও ধনতেরাসের দিন পাওয়া যায়
বিশেষ ছাড় তাই সাধ্যমত
সোনা রুপো কেনার ইচ্ছে
পূরণ হয়।
আবার
শুধু সোনারূপো নয় যে কোন
ধাতুকে শুভ বলে গণ্য
করেন বিশিষ্ট জনেরা তাই কাঁসা পিতলের
বাসন পত্র ইত্যাদির দোকানে
ভিড় লেগে থাকে ধনতেরাসের
দিনে।
তবে
করোনাকালীন পরিস্থিতিতে বাজার খারাপ চলছে তা অকপটে
স্বীকার করেন কিছু ব্যবসায়ী।
আবার অনেকের মত পরিস্থিতি অনুযায়ী
বাজারের ভালো-মন্দ নির্ভর
করে। লাভ-লোকসান নিয়েই
জীবন। তাই পরিস্থিতির সাথে
মানিয়ে চলা উচিত। মা
কালী যেমন অশুভ এর
বিনাশ ঘটান তেমনি লক্ষীদেবী সংসারে শ্রীবৃদ্ধি করেন। বলাবাহুল্য করোনা অতিমারির এমন সময় সুখ-সমৃদ্ধির চেয়ে স্বাস্থ্য সচেতনতাই
প্রাধান্য পাবে বেশি তাই
খরিদারি একটু হলেও কম।