বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে রয়েছেন বিদেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ে। গত ৫ আগস্ট ‘গণ অভ্যুত্থান’-এর মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই তিনি দেশের বাইরে, এবং আপাতত ভারতে অবস্থান করছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, এমন এক পরিস্থিতিতে, হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে তৎপর হয়েছে মহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার। দেশের পুলিশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (NCB) ইতিমধ্যেই ইন্টারপোলের কাছে রেড কর্নার নোটিস জারির জন্য আবেদন জানিয়েছে। শুধু শেখ হাসিনাই নন, এই তালিকায় রয়েছেন ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামি লিগ সরকারের আরও ১১ জন শীর্ষস্থানীয় নেতা ও প্রাক্তন মন্ত্রী। তাঁদের মধ্যে অনেকেই বর্তমানে বিদেশে পলাতক। জানা গিয়েছে, তাদের প্রত্যর্পণের জন্য তিনটি পৃথক ধাপে আবেদন করেছে এনসিবি। বর্তমানে বাংলাদেশ রাজনৈতিকভাবে এক অত্যন্ত অনিশ্চয়তার সময় অতিক্রম করছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামি লিগ সরকারের পতনের পর থেকে রাজনৈতিক মাঠে ফের সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে দলটি। দেশজুড়ে বিভিন্ন জায়গায় মিটিং-মিছিল সংগঠিত হচ্ছে, বিশেষ করে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের তরফে। এই মিছিলগুলি নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে, বিশেষত সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজ ঘিরে। যদিও মিছিলে অংশগ্রহণকারী অনেককে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ভিডিও দেখে শনাক্ত করে কয়েকজনকে আইনের আওতায় এনেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
হাসিনার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত শতাধিক মামলা দায়ের হয়েছে। এর মধ্যে গণহত্যা, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং হত্যার মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে, যা বিচারাধীন রয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। ইউনুস সরকার ইতিমধ্যেই ভারতের কাছে কূটনৈতিক স্তরে বারবার চাপ সৃষ্টি করেছে শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য। কিন্তু নয়াদিল্লির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া মেলেনি। বিশ্লেষকদের মতে, হাসিনার বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলির স্বচ্ছতা ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিচার না করে তাঁকে প্রত্যর্পণ করা ভারতের পক্ষে কূটনৈতিকভাবে সহজ নয়। তবে এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সরকার আগের হাসিনা আমলের বন্দি বিনিময় চুক্তির দিকেই ইঙ্গিত করছে। যেসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে, বিশেষ করে ভারত, যুক্তরাজ্য ও মালয়েশিয়ার সঙ্গে, তাদের সাহায্য চেয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
গাজ়ায় যুদ্ধ থামানোর কোনও সম্ভাবনা নেই: হুঁশিয়ারি নেতানিয়াহুর, আরও রক্তক্ষয়ের আশঙ্কা
উলেখ্য, এই মুহূর্তে প্রশ্ন উঠছে—আন্তর্জাতিক মহল শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের আবেদনকে কীভাবে দেখবে? রেড কর্নার নোটিস জারি হলে তাঁর গন্তব্যস্থল দেশে কি গ্রেপ্তার সম্ভব হবে? কিংবা ভারত সরকার তাদের মিত্র দেশ হিসেবে ইউনুস সরকারের এই দাবিকে কতটা গুরুত্ব দেবে? একদিকে শেখ হাসিনার অনুগামীদের পথে নামা, অন্যদিকে সরকারের দৃঢ় অবস্থান—বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোনদিকে যাবে, তার দিক নির্দেশ করতে পারে আসন্ন কিছু সপ্তাহ। এদিকে, দেশে ফের ভোটের প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গেছে, যদিও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এখনও অনিশ্চিত।