পারস্পরিক শুল্ক নীতি কার্যকর হওয়ার মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক বড়সড় ঘোষণা দিলেন। চিন বাদ দিয়ে বাকি দেশগুলির ক্ষেত্রে ৯০ দিনের জন্য পাল্টা শুল্ক আরোপে স্থগিতাদেশ জারি করেছেন তিনি। তবে, চিনের ক্ষেত্রে শুল্কের হার বাড়িয়ে তা ১২৫ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে, যা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হয়েছে। ট্রাম্প এই সিদ্ধান্তের পেছনে কূটনৈতিক সমঝোতার বিষয়টি তুলে ধরেছেন। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, “৭৫টিরও বেশি দেশ মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোনও প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেয়নি।” এই কারণ দেখিয়েই তিনি পারস্পরিক শুল্ক নীতিতে তিন মাসের বিরতি ঘোষণা করেছেন।
প্রসঙ্গত, মার্কিন প্রশাসনের নতুন পদক্ষেপে চিনের উপর শুল্কের হার ১০৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করা হয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় বেজিংও পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। চিনা প্রশাসন জানিয়েছে, মার্কিন পণ্যের উপর নতুন শুল্কহার ৮৪ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনা আবারও চরমে উঠছে। ট্রাম্প তাঁর Truth Social পোস্টে লিখেছেন, “বিশ্ববাজারের প্রতি চিন যে অসম্মান দেখাচ্ছে তার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চিনের উপর কঠোর শুল্ক আরোপ করছে। চিনকে বুঝতে হবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশকে ঠকানোর যুগ শেষ হয়ে এসেছে।”যদিও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই শুল্ক স্থগিতাদেশের পেছনে কূটনৈতিক সহযোগিতার যুক্তি দেখিয়েছেন, তবে বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, এই সিদ্ধান্তের আসল কারণ ভিন্ন হতে পারে। মার্কিন শেয়ার বাজারে সাম্প্রতিক শুল্কনীতির প্রভাবে যে ব্যাপক ধস নেমেছে, সেটিই হয়তো ট্রাম্প প্রশাসনকে পিছু হঠতে বাধ্য করেছে।
চাকরিহারাদের আশ্বাস মুখ্যমন্ত্রীর, বেতন সংক্রান্ত সংকটে পাশে থাকার বার্তা রাজ্যের
উলেখ্য, ওয়াল স্ট্রিটে টানা দরপতন, বিনিয়োগকারীদের আতঙ্ক এবং মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কায় সাধারণ মার্কিন নাগরিকরা আগেভাগেই পণ্য মজুত করতে শুরু করেছেন। ভোক্তাদের এই আচরণ এবং বাজারের টালমাটাল পরিস্থিতি প্রশাসনের উপর চাপ বাড়িয়েছে বলেই মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। ট্রাম্পের এই শুল্কনীতি বিশ্ববাজারেও প্রভাব ফেলেছে। আন্তর্জাতিক পুঁজিবাজারে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, ইউরোপ ও এশিয়ার স্টক এক্সচেঞ্জগুলোতেও নেতিবাচক প্রবণতা দেখা গেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি মার্কিন-চিন বাণিজ্যযুদ্ধ আরও তীব্র হয়, তাহলে তা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বড়সড় ধাক্কা দিতে পারে। চিন বাদে অন্য দেশগুলোর ক্ষেত্রে ৯০ দিনের শুল্ক বিরতি ট্রাম্পের কৌশলী পদক্ষেপ হলেও, এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব নির্ভর করবে চিনের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক আলোচনার উপর। তবে আপাতত বলা যায়, এই সিদ্ধান্তে মার্কিন প্রশাসন কিছুটা সময় কিনেছে, কিন্তু বাজার ও জনগণের উদ্বেগ এখনো পুরোপুরি কাটেনি।