ডায়েট, ফিটনেস ও স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা চললেই অনেকের মুখে আসে ডাবের জলের কথা। স্নিগ্ধ স্বাদ আর প্রাকৃতিক গুণে সমৃদ্ধ ডাবের জল যেন আজকের স্বাস্থ্য সচেতন প্রজন্মের নতুন 'সুপার ড্রিঙ্ক'। তবে প্রশ্ন উঠছে, ওজন কমানোর লক্ষ্যে এই পানীয় কতটা কার্যকর? শুধুই কি স্বাদ ও ঠান্ডা ভাবের জন্য এত জনপ্রিয়, নাকি এর পিছনে সত্যিই লুকিয়ে রয়েছে ওজন নিয়ন্ত্রণের রহস্য? ডাবের জল মূলত একটি প্রাকৃতিক ইলেক্ট্রোলাইট যা শরীরে পানিশূন্যতা দূর করে। গ্রীষ্মকালে তীব্র রোদ ও ঘামে ক্লান্ত শরীরকে দ্রুত চাঙ্গা করতে এর জুড়ি মেলা ভার। কিন্তু ওজন কমাতে এর কার্যকারিতা নিয়ে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় কিছু চমকপ্রদ দিক। এতে ফ্যাট নেই বললেই চলে, ক্যালোরিও খুব কম। ১০০ মিলি ডাবের জলে মাত্র ১৮-২০ ক্যালোরি থাকে, যা সাধারণ সফট ড্রিঙ্ক বা মিষ্টি পানীয়ের তুলনায় অনেকটাই নিরাপদ।
ডাবের জলে থাকা পটাশিয়াম ও অন্যান্য খনিজ উপাদান শরীরের মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে। যার ফলে খাদ্য হজম হয় দ্রুত, শরীরে চর্বি জমার হারও কিছুটা কমে। আবার এটি প্রাকৃতিকভাবে শরীরকে হাইড্রেট রাখে, ফলে অনেক সময় অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতাও কমে আসে। অনেক সময় আমরা পিপাসা ও ক্ষুধাকে গুলিয়ে ফেলি। বারবার জল বা ডাবের জল খেলে এই বিভ্রান্তি দূর হয় এবং অকারণে অতিরিক্ত খাওয়া এড়ানো যায়। তবে কেবল ডাবের জলের উপর ভরসা করে ওজন কমানো সম্ভব নয়। এটি সাহায্যকারী মাত্র। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম ও নিয়মিত রুটিন ছাড়া শুধুমাত্র এই পানীয়ই ওজন হ্রাসের ম্যাজিক সমাধান নয়। বরং যারা কোমল পানীয় বা মিষ্টি জুসে অভ্যস্ত, তারা যদি সেগুলোর পরিবর্তে ডাবের জল বেছে নেন, তাহলে নিঃসন্দেহে শরীরের জন্য উপকারই হবে। তবে কিছু সতর্কতাও আছে। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বা যাদের রক্তে শর্করার পরিমাণ অনিয়ন্ত্রিত, তাদের জন্য অতিরিক্ত ডাবের জল খাওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। কারণ এতে প্রাকৃতিক চিনি থাকলেও, অতিরিক্ত মাত্রায় তা গ্রহণ করলে রক্তে গ্লুকোজ বেড়ে যেতে পারে।
চিরসুন্দর ত্বকের খোঁজে: মুখের দাগছোপ বা পিগমেন্টেশন দূর করার ১১টি কার্যকর উপায়”
উলেখ্য, আজকের দিনে ‘ওজন কমানো’ যেন শুধু শারীরিক নয়, সামাজিক চাপও। এই দৌড়ে অনেকেই ভরসা করছেন তথাকথিত ফিটনেস ড্রিঙ্ক কিংবা কৃত্রিম সাপ্লিমেন্টে। তার বদলে যদি এক গ্লাস প্রাকৃতিক, সতেজ, পুষ্টিকর ডাবের জল বেছে নেওয়া যায়, তাহলে তা নিঃসন্দেহে শরীর ও মনের জন্যই মঙ্গলজনক। সবশেষে বলা যায়, ওজন কমাতে ডাবের জল খাওয়া নিঃসন্দেহে একটি ভালো সিদ্ধান্ত—যদি তা সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার সঙ্গে তাল মিলিয়ে করা যায়। অতএব, প্রতিদিনের জীবনে যদি একটু সতেজতা আর স্বাস্থ্যকর পানীয় যোগ করতে চান, তবে ডাবের জল হতে পারে আপনার রোজকার ডায়েটের প্রকৃত সহচর।