আজকের দিনে উচ্চ রক্তচাপ, একটি নীরব ঘাতক হিসেবে পরিচিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি তিনজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের একজন উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। দীর্ঘমেয়াদে এটি হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি রোগ এবং চোখের সমস্যা তৈরি করতে পারে। তবে আশার কথা হলো, নিয়মিত কিছু স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার মাধ্যমে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। এমনই কিছু "সুপারফুড" আছে, যেগুলি নিয়মিত খেলে ওষুধ ছাড়াই রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হতে পারে।
কলায় আছে প্রচুর পটাশিয়াম যা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। পটাশিয়াম শরীরে সোডিয়ামের প্রভাব কমিয়ে দেয়। প্রতিদিন সকালে এক বা দুইটি কলা খেলে রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রায় রাখতে সহায়তা করে। এটি সহজলভ্য, সস্তা এবং সুস্বাদু – এক কথায় একটি 'সুপারফুড'। বিটরুটে রয়েছে নাইট্রেট যা শরীরে নাইট্রিক অক্সাইডে রূপান্তরিত হয় এবং রক্তনালীগুলিকে শিথিল করে। এতে রক্তচাপ কমে যায়। বিশেষ করে কাঁচা বিটের রস প্রতিদিন খেলে দ্রুত ফল পাওয়া যায়। এটি শুধু রক্তচাপই নয়, রক্ত পরিষ্কার করতেও সাহায্য করে। রসুনের মধ্যে অ্যালিসিন নামে একটি যৌগ রয়েছে যা রক্তনালীগুলিকে প্রসারিত করে, ফলে রক্তচাপ হ্রাস পায়। প্রতিদিন সকালে কাঁচা রসুন চিবিয়ে খাওয়া বা গরম জলে রসুন ভিজিয়ে খেলে ভালো ফল মেলে। ওটসের মধ্যে রয়েছে বেটা-গ্লুকান নামক ফাইবার যা কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। এক কাপ ওটসের সঙ্গে কিছু ফল বা বাদাম মিশিয়ে খাওয়া একদিকে যেমন পুষ্টিকর, তেমনই উপকারী। গাজরের রস বা কাঁচা গাজর রক্তচাপ কমাতে কার্যকর। এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর, যা রক্তনালীর গঠন বজায় রাখতে সাহায্য করে। গাজর খেলে হৃদরোগের ঝুঁকিও কমে। দই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। দইয়ের ক্যালসিয়াম এবং প্রোবায়োটিকস রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে কার্যকর। দুপুর বা রাতের খাবারে এক বাটি দই খাওয়ার অভ্যাস রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। অ্যালমন্ড, আখরোট, সূর্যমুখীর বীজ বা ফ্ল্যাক্স সিড – সবই ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে সমৃদ্ধ যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এগুলি হৃদয়বান্ধব ফ্যাট সরবরাহ করে, যা দেহে খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।
"ফিটনেস না বডি শেমিং? সোশ্যাল মিডিয়ার শরীরচর্চা-সংস্কৃতি"
উচ্চ রক্তচাপ কমাতে কেবল খাবারই যথেষ্ট নয়; খাবারের সময়, পরিমাণ ও খাদ্যতালিকায় ভারসাম্য বজায় রাখাও জরুরি। তেল, নুন এবং চিনি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। প্রক্রিয়াজাত খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত। নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে এই খাবারগুলো যুক্ত হলে, উচ্চ রক্তচাপ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। ওষুধ ছাড়াও প্রকৃতিই দিতে পারে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠি। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় উপরের খাবারগুলো যুক্ত করুন। স্বাস্থ্যই সম্পদ – আর সেই সম্পদ রক্ষার শুরু হোক আজ থেকেই।