ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার আবহে একদিকে যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একের পর এক মধ্যস্থতার দাবি জানিয়ে চলেছেন, ঠিক তখনই তার বিরোধিতা করে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের পক্ষে মত দিল রাশিয়া। বিষয়টি আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে, এবং কিছুটা অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে হোয়াইট হাউসের জন্য।
সঙ্গত, সম্প্রতি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের বিশেষ সহকারী সৈয়দ তারেক ফাতিমি রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন। বৈঠকের পর রুশ বিদেশ মন্ত্রক যে বিবৃতি প্রকাশ করেছে, তাতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, "ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে পারস্পরিক আস্থা গড়ে তুলতে সরাসরি আলোচনা প্রয়োজন।" অর্থাৎ, এই বিষয়ে তৃতীয় পক্ষের কোনো ভূমিকা নয়, বরং দুই দেশের মধ্যেই সমাধান খোঁজার উপর জোর দিয়েছে মস্কো। ভারতের দীর্ঘদিনের অবস্থান—কাশ্মীর কিংবা ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্ব—সবই দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বিষয়, এবং তাতে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপের কোনো জায়গা নেই। সেই অবস্থানেই কার্যত সিলমোহর দিল পুতিনের রাশিয়া। এই অবস্থান ভারতের কূটনৈতিক দিক থেকে যেমন ইতিবাচক, তেমনই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একাধিক 'মধ্যস্থতা দাবি'কে কার্যত প্রশ্নের মুখে ফেলে দিল। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, তাঁর মধ্যস্থতাতেই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি ঠেকানো সম্ভব হয়েছে**। এমনকি কাশ্মীর নিয়ে আলোচনার জন্য নরেন্দ্র মোদি তাঁকে আহ্বান জানিয়েছিলেন বলেও দাবি করেন ট্রাম্প।
আরসিবি’র বিজয় মিছিলে ভয়াবহ দুর্ঘটনা: পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু অন্তত সাতজনের, আহত বহু
উলেখ্য, তবে এই দাবি ভারত সরকার বারবার খণ্ডন করেছে। বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর, বিদেশ সচিব এবং প্রধানমন্ত্রী মোদি স্পষ্ট করে দিয়েছেন—এই বিষয়ে কোনো তৃতীয় পক্ষকে ভারত আহ্বান জানায়নি। এই প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার অবস্থান বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, একদিকে রাশিয়া ঐতিহ্যগতভাবে ভারতের দীর্ঘদিনের মিত্র, অন্যদিকে সম্প্রতি পাকিস্তানের সঙ্গেও রাশিয়ার বাণিজ্যিক ও কৌশলগত সম্পর্ক ক্রমেই ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে রাশিয়ার এই নিরপেক্ষ অথচ ভারতের অবস্থান-সমর্থিত দৃষ্টিভঙ্গি আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের কূটনীতিকে আরও জোরদার করল। ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে যখন নানা মত, তখন রাশিয়ার সরল ও দ্বিপাক্ষিক সমাধানমূলক অবস্থান স্পষ্ট করে দিল, নয়াদিল্লির নীতিই যথার্থ। ফলে একদিকে যেমন আন্তর্জাতিক সমর্থনের পাল্লা ভারতে পড়ছে, অন্যদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের “মধ্যস্থতা দাবি” আরও বেশি করে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক অস্বস্তির জায়গায় চলে যাচ্ছে।