২০২৬-এর পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজ্য রাজনীতিতে ঝড় তুললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এক বছর আগেই নির্বাচনী সুর বেঁধে দিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার আলিপুরদুয়ারের জনসভা থেকে সরাসরি রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়ে পাঁচটি ‘বিপদ’ চিহ্নিত করলেন, যা তাঁর মতে বাংলার বর্তমান শাসনব্যবস্থার পরিণতি।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী বাংলার পাঁচ ‘বিপদ’ হল:
১. সমাজে হিংসা ও অরাজকতা।
২. মহিলাদের নিরাপত্তার অভাব ও অপরাধের বাড়বাড়ন্ত।
৩. বেকারত্বের আশঙ্কাজনক বৃদ্ধি।
৪. প্রশাসনিক দুর্নীতি ও জনভরসার পতন।
৫. গরিবের অধিকার হরণ ও শাসকদলের স্বার্থান্বেষী রাজনীতি।
এই সমস্ত ইস্যু তুলে ধরে মোদির স্লোগান: “বাংলার মাটির চিৎকার, আর লাগবে না নির্মম সরকার।‘’
পালটা জবাব তৃণমূলেরঃ
বিজেপির এই আক্রমণের জবাবে পালটা কৌশলে ময়দানে নামল তৃণমূল কংগ্রেস। এক্স (পূর্বতন টুইটার) হ্যান্ডেলে তৃণমূল জানায়, "মোদিজি যদি বাংলার পাঁচ বিপদের কথা বলেন, তাহলে আমরা বলি ভারতের পাঁচ সংকটের কথা।" এরপর একে একে তারা কেন্দ্রের ব্যর্থতা তুলে ধরে।
তৃণমূলের চিহ্নিত পাঁচটি ‘সংকট’ হল:
১. মণিপুরে দীর্ঘদিন ধরে চলা অশান্তি – তৃণমূলের কটাক্ষ, “দু’বছর ধরে মণিপুর জ্বলছে। আগে নিজের রাজ্য সামলান।”
২. মহিলা নিরাপত্তার অভাব – হাতিয়ার করা হয়েছে হাথরস ও উন্নাওয়ের ধর্ষণকাণ্ড।
৩. নিট দুর্নীতি ও শিক্ষাক্ষেত্রে অব্যবস্থা – ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত বলে দাবি ছাত্রছাত্রীদের।
৪. বেকারত্ব বৃদ্ধি – দেশের ৪৫ শতাংশ তরুণ কর্মহীন বলে তৃণমূলের অভিযোগ।
৫. কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিহিংসার রাজনীতি – বাংলার জন্য ১০০ দিনের কাজ ও আবাস যোজনার অর্থ আটকে রাখার অভিযোগ।
এলন মাস্কের ট্রাম্প প্রশাসন থেকে ইস্তফা
উলেখ্য, তৃণমূল আরও দাবি করেছে, মোদি সরকারের অর্ধেক মন্ত্রী জামিনে মুক্ত, যা ‘দুর্নীতিমুক্ত’ প্রশাসনের দাবিকে হাস্যকর করে তোলে। এই রাজনৈতিক পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে স্পষ্ট, ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচন কার্যত শুরু হয়ে গেছে। বিজেপি যেখানে রাজ্যের শাসনব্যবস্থাকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাচ্ছে, সেখানে তৃণমূল কেন্দ্রের ব্যর্থতা ও আক্রমণের রাজনীতির বিরুদ্ধে সুর চড়াচ্ছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই দ্বন্দ্বমূলক প্রচার আগামী এক বছরে আরও তীব্র রূপ নেবে। বাংলায় বিজেপি তাদের সংগঠন মজবুত করতে মরিয়া, অপরদিকে তৃণমূল তাদের প্রশাসনিক কাজকর্ম ও কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগকে সামনে রেখে জনসমর্থন ধরে রাখতে চায়। ২০২৬ সালের লড়াই হবে ‘পাঁচ বিপদ’ বনাম ‘পাঁচ সংকট’-এর। কে বেশি বিশ্বাসযোগ্য – শাসকদলের অভিজ্ঞতা না বিরোধীর বার্তা – তা স্থির করবে বাংলার জনগণ। তবে একটা বিষয় নিশ্চিত, ভোটের একবছর আগেই রাজনৈতিক উত্তাপ চরমে পৌঁছে গেছে।