তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি দলীয় কার্যক্রমে নতুন একটি দৃষ্টিকোণ যোগ করার উদ্দেশ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ কমিটি গঠন করেন, যা ‘ভূতুড়ে ভোটার’ শনাক্তকরণের জন্য বিশেষভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত মেগা বৈঠকে এই কমিটির কথা ঘোষণা করেছিলেন মমতা, যেখানে তার পাশে ছিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে, এই কমিটির প্রথম বৈঠকেই দেখা গেল যে, অভিষেক উপস্থিত ছিলেন না। বৈঠক শেষে, দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী সংবাদ মাধ্যমকে জানালেন, অভিষেক ১৫ মার্চের মধ্যে জেলা নেতাদের নিয়ে আলাদা বৈঠক করবেন।
প্রসঙ্গত, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে তৃণমূলের মধ্যে ‘ভূতুড়ে ভোটার’ পরিষ্কারের জন্য ৩৬ সদস্যের একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি মূলত ভোটার তালিকা পরিষ্কার করার কাজ করবে, যাতে অপ্রাসঙ্গিক বা ভূতুড়ে ভোটারদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া যায়। নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। কমিটির প্রথম বৈঠক শুরুর সময় থেকেই রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, ‘কী কারণে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এই বৈঠকে উপস্থিত হননি?’ তিনি দলের শীর্ষ নেতৃত্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হলেও, প্রথম বৈঠকে তার অনুপস্থিতি একদিকে রাজনৈতিক দিক থেকে একটি প্রশ্নবোধক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বিশেষত, এই পরিস্থিতি কিছুদিন ধরে দলের অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক নিয়ে যে জল্পনা চলছে, তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
লন্ডনে বিদেশমন্ত্রী এস জয় শঙ্করের উপরে খালিস্তানি হামলা
উলেখ্য, এই বিষয়টি নিয়ে অভিষেকের বক্তব্যও পরিষ্কার ছিল, যেখানে তিনি নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, “আমার গলা কেটে দিলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম বেরবে।” তার এই মন্তব্যে তিনি শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য এবং দলের সুপ্রিমোর সঙ্গে তার সম্পর্কের গভীরতা স্পষ্ট করেছেন। বৈঠক শেষে, সবার দৃষ্টি চলে আসে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা নিয়ে, যেখানে সুব্রত বক্সী জানান, অভিষেক ১৫ মার্চের মধ্যে দলের জেলা নেতাদের নিয়ে একটি আলাদা বৈঠক করবেন। তবে, প্রশ্ন উঠেছে যে, এই পৃথক বৈঠকটি কেন প্রয়োজন হল, যখন একটি বৈঠক ইতোমধ্যেই অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মানে কি শুধুই সংগঠনগত সিদ্ধান্ত, না কি দলের মধ্যে কিছু অগোচর অস্বস্তি বা পরিবর্তনের ইঙ্গিত?১৫ মার্চের বৈঠকটি তৃণমূলের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। এখানেই স্পষ্ট হবে, অভিষেকের নেতৃত্বের প্রতি দলের নেতাদের অবস্থান কী রকম এবং এই বৈঠকে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে কোনো ধরনের দূরত্ব বা সম্পর্কের অবনতির সূচনা ঘটে কি না। এতসবের মাঝে, তৃণমূলের ভবিষ্যৎ একদিকে যেমন পরিষ্কার, তেমনি দলের অভ্যন্তরীণ সম্পর্কের জটিলতা আরও বাড়ছে। রাজনৈতিক মহলে এই নতুন পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে সবকিছুই এখন নির্ভর করছে ১৫ মার্চের সেই বৈঠকের ফলাফলের উপর।