অগাধ আস্থা রেখেই দ্বিতীয়বারের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে তাঁর ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশটির জনগণের মধ্যে ক্ষোভ এবং অসন্তোষ বাড়তে শুরু করেছে। ট্রাম্পের একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্তে চরম অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে, যা দেশের ভেতরে এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি করেছে।
উলেখ্য, গত শনিবার, ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ আমেরিকার বিভিন্ন শহরে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নামেন। ওয়াশিংটন, নিউ ইয়র্ক, হিউস্টন, ফ্লোরিডা, কলোরাডো, এবং লস অ্যাঞ্জেলসসহ একাধিক জায়গায় বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। ট্রাম্পের দ্বিতীয়বার হোয়াইট হাউসে ফেরার পর এটি ছিল প্রথম বড় ধরনের প্রতিবাদ, যা দেশটির রাজনৈতিক পরিবেশকে আরও উত্তপ্ত করে তোলে। প্রধানত ট্রাম্পের সরকারের কয়েকটি প্রধান সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সরকারের বিপুল হারে কর্মী ছাঁটাই, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে শুল্ক যুদ্ধ শুরু করা, এবং তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি অস্বীকার করা। এছাড়া, ট্রাম্পের গর্ভপাত বিরোধী নীতিও জনগণের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। এসব সিদ্ধান্তে জনগণ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে যে, তাদের নেতার নীতি দেশের সার্বিক উন্নতির জন্য নয়, বরং তার নিজস্ব রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য নেওয়া হচ্ছে। বিক্ষোভকারীরা ট্রাম্পের সরকারের নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়ে ওঠেন। কেউ কেউ ট্রাম্পকে 'বদ্ধ পাগল' হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন, আবার কেউ বলছেন, 'সুবিধা পেয়ে আসা শেতাঙ্গের মনমর্জিতে দেশ নিয়ন্ত্রণ'। তারা সরকারের নীতিতে পরিবর্তন আনার দাবি জানিয়েছেন। লস অ্যাঞ্জেলসে, ট্রাম্পের গর্ভপাত বিরোধী নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা হয়। ডেনভার, কলোরাডোয় বড় বড় পোস্টারে লেখা ছিল, "আমেরিকার রাজার দরকার নেই"। এ ধরনের প্রতিবাদ এবং শ্লোগানগুলো দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রতি জনগণের ক্ষোভ এবং উদ্বেগের প্রতিফলন।
ঢাকা বারের ৮৪ সিনিয়র আইনজীবীকে জেলে পাঠানোর ঘটনা
প্রসঙ্গত, ট্রাম্পের বিদেশি নীতির মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল বিভিন্ন দেশের সঙ্গে শুল্ক যুদ্ধের প্রয়োগ। বিশেষত, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে এ ধরনের নীতি সংঘাত তৈরি করেছে। এতে আমেরিকার অর্থনীতির উপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে এবং আর্থিক মন্দার পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছে। এসব সিদ্ধান্তের ফলে আমেরিকার ব্যবসায়ী এবং সাধারণ জনগণ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। যদিও মার্কিন জনগণ তার সরকারের নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে, তবুও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাদের দাবি প্রত্যাখ্যান করে চলেছেন। তাঁর সরকার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার ব্যাপারে একেবারে অনড়। এর ফলে বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ আরও বাড়ছে। এই প্রতিবাদ আন্দোলন অনেকটাই ২০২০ সালের নির্বাচনের পরের এক নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতার সূচনা হতে পারে। এর মাধ্যমে আরও একটি প্রশ্ন উঠে আসে—কিভাবে এই আন্দোলনগুলি আমেরিকার রাজনৈতিক ভবিষ্যতকে প্রভাবিত করবে? ট্রাম্পের শাসনকাল কি দেশের মধ্যে আরও গভীর বিভক্তি তৈরি করবে, না কি নতুন রাজনৈতিক আদর্শের বিকাশ ঘটাবে? মার্কিন জনগণের বিক্ষোভ এবং ট্রাম্পের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এক ধরনের রাজনৈতিক এবং সামাজিক বিপ্লবের প্রাথমিক ইঙ্গিত হিসেবে দেখা যেতে পারে। তার সরকারী নীতির প্রতি জনগণের এই বিরোধিতা এবং একত্রিত আন্দোলন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসতে পারে। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যদি এ ধরনের বিক্ষোভ অব্যাহত থাকে, তাহলে তার সরকারের জন্য আগামী দিনগুলো আরও কঠিন হতে পারে।