বাংলা এক নতুন সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলো। এবার তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনে দেশব্যাপী কেন্দ্রীয় সমীক্ষার ফলাফলে শীর্ষে উঠে এসেছে দুটি বাংলা কেন্দ্র। দেশের ২০১টি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে, পুরুলিয়ার সাঁওতালডিহি এবং বক্রেশ্বর যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে, যা বাংলা রাজ্যের শক্তির সাফল্যের আরেকটি প্রমাণ। এছাড়া, দেশের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে সাগরদিঘি এবং ব্যান্ডেল যথাক্রমে চতুর্থ ও নবম স্থানে অবস্থান করছে। বাংলার এই চারটি কেন্দ্র, দেশের শীর্ষ দশে স্থান পেয়ে, রাজ্যকে শক্তির দুনিয়ায় এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। এটি বাংলার জন্য একটি বড় সাফল্য, যা রাজ্যবাসীর জন্য গর্বের বিষয়।
প্রসঙ্গত, শক্তি মন্ত্রকের ২০২৪-২৫ সালের সেন্ট্রাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটির (সিইএ) সমীক্ষা অনুযায়ী, সাঁওতালডিহি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্মক্ষমতার দিক দিয়ে শীর্ষস্থান অধিকার করেছে। এখানকার প্ল্যান্ট লোড ফ্যাক্টর (পিএলএফ) ৯৪.৩৮ শতাংশ, যা দেশের অন্যান্য কেন্দ্রের তুলনায় উল্লেখযোগ্য। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বক্রেশ্বরের পিএলএফ ৯৩.৩ শতাংশ। এর মানে, এই কেন্দ্রগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে এবং সর্বোচ্চ ক্ষমতায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে, যা জাতীয় শক্তি পরিকাঠামোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান। আরও দুটি বাংলার তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, সাগরদিঘি ও ব্যান্ডেল, যথাক্রমে চতুর্থ ও নবম স্থান অর্জন করেছে। সাগরদিঘির উৎপাদন ক্ষমতা ৯০.৮৬ শতাংশ, যা তাকে দেশের শীর্ষ দশে স্থান করে দিয়েছে। ব্যান্ডেল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রও ৯০ শতাংশের কাছাকাছি উৎপাদন ক্ষমতা নিয়ে নবম স্থানে রয়েছে। এই সাফল্য শুধু তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির সীমিত নয়, পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ পর্ষদ নিগম (WBPDCL) ও কেন্দ্রের বিচারে শীর্ষস্থান অধিকার করেছে। সেন্ট্রাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটির রিপোর্ট অনুযায়ী, WBPDCL গড়ে ৮৮.৯ শতাংশ বিদ্যুৎ সরবরাহ করে দেশের শীর্ষ বিদ্যুৎ সংস্থা হিসেবে স্থান পেয়েছে। এনটিপিসি, ডিভিসি, আদানি, রিলায়েন্সের মতো বড় বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সংস্থাগুলোকে পিছনে ফেলে WBPDCL এই সম্মান অর্জন করেছে।
ইউনুস-মোদী বৈঠক: থাইল্যান্ডে সম্ভাব্য দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নতুন দিগন্ত
উলেখ্য, এ সাফল্যের পেছনে রাজ্য সরকারের অবদান যেমন রয়েছে, তেমনি রাজ্যের বিদ্যুৎ কর্মীদের অবদানও অগ্রগণ্য। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই সাফল্যকে বাংলার শক্তির নতুন যুগ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে এক্স হ্যান্ডেলে জানিয়েছেন, এই সাফল্য এসেছে রাজ্যের সর্বস্তরের বিদ্যুৎকর্মীদের নিরলস পরিশ্রমের ফলে। বিশেষ করে, ইঞ্জিনিয়ার থেকে শুরু করে সাধারণ বিদ্যুৎকর্মী, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলার তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি এমন সাফল্য অর্জন করেছে। এটি বাংলার জন্য শুধু প্রযুক্তিগত সাফল্য নয়, সাধারণ মানুষের জন্যও এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিদ্যুৎ সরবরাহের উন্নতি ও নির্ভরযোগ্যতা রাজ্যের অর্থনৈতিক উন্নতি এবং সামাজিক সুরক্ষার এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এর মাধ্যমে রাজ্যে নতুন কর্মসংস্থানও তৈরি হবে এবং সাধারণ মানুষ আরো উন্নত জীবনযাত্রার সুযোগ পাবে। বাংলার এই শক্তির সাফল্য শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদন নয়, বরং একটি বড় সাংগঠনিক দক্ষতা, পরিশ্রম এবং সমন্বয়ের ফল। রাজ্যের প্রত্যেকটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং বিদ্যুৎকর্মীদের এই অবদান বাংলার শক্তির অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে, রাজ্য আজ এক নতুন দিগন্তে পৌঁছেছে।