কয়েকদিন আগে ওড়িশায় ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনার পর, ফের বাংলার এক প্রতিবেশী রাজ্যে ঘটে গেল এক ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা। ঝাড়খণ্ডের সাহেবগঞ্জে ঘটে যাওয়া এই দুর্ঘটনা আবারও রেল নিরাপত্তার প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। দুটি মালবাহী ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষের পর আগুন লেগে যায়, যা ঘটনায় প্রাণ হারান অন্তত দু'জন। এর মধ্যে একজন ট্রেনের লোকো পাইলট এবং অন্যজনও একজন কর্মী। এছাড়া বেশ কয়েকজন সিআইএসএফ জওয়ানও আহত হয়েছেন।
প্রসঙ্গত, দুর্ঘটনাটি ঘটেছে আজ ভোররাত সাড়ে তিনটা নাগাদ, সাহেবগঞ্জ জেলার বারহাইত থানা এলাকায়। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, একটি মালবাহী ট্রেন লাইনের উপর দাঁড়িয়ে ছিল। সেই সময়ে, লালমাটিয়া থেকে আসা একটি অন্য মালবাহী ট্রেন সেই দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনটিকে তীব্র গতিতে ধাক্কা মারে। এর ফলে ট্রেনের ইঞ্জিনসহ কয়লা বোঝাই বগিতে ভয়াবহ আগুন ধরে যায়।এ ঘটনায় ভারতীয় রেলের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি জারি করা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে যে এই দুর্ঘটনার সঙ্গে ভারতীয় রেলের কোনও সম্পর্ক নেই, কারণ ঘটনাটি এনটিপিসির প্রাইভেট লাইনে ঘটেছে। এনটিপিসির এই রেলপথের উপর গত কয়েক মাসে একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে একটি বোমা বিস্ফোরণও ছিল, যা একটি কয়লা বোঝাই ট্রেনের লাইনচ্যুতি ঘটিয়েছিল। ঘটনাস্থলে দ্রুত উদ্ধারকার্য শুরু হয়। এনটিপিসির পক্ষ থেকে সাহায্য চাওয়া হলে, ভারতীয় রেলের মালদা ডিভিশন থেকে দ্রুত একটি ক্রেন পাঠানো হয়। ফায়ার ব্রিগেডের কর্মীরা জানান, ট্রেনের ইঞ্জিনে মোট সাতজন কর্মী ছিলেন। তাদের মধ্যে দুজন মারা গেছেন এবং চারজন গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়া, এক কর্মী ইঞ্জিনে আটকে পড়েছিলেন, তাঁকে উদ্ধার করার চেষ্টা চলছে। অহতদের স্থানীয় বারহাইত সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, যেখানে তাদের চিকিৎসা চলছে। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রেল প্রশাসন ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং তথ্য সংগ্রহ করছে।
পাথরপ্রতিমায় বাজি বিস্ফোরণে মৃত বেড়ে ৮
উলেখ্য, এটি প্রথম ঘটনা নয়, যখন এনটিপিসির এই রেলপথে দুর্ঘটনা ঘটল। গত কিছু দিন আগেই অপরাধীদের দ্বারা বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে রেলপথ উড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, যার কারণে একটি কয়লা বোঝাই ট্রেন লাইনচ্যুত হয়েছিল। এই সমস্ত ঘটনাগুলি রেল নিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলে ধরছে। সাহেবগঞ্জের এই দুর্ঘটনা আরও একবার আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে যে রেলপথের নিরাপত্তা এবং নিয়ম-নীতি কতটা গুরুত্বপূর্ণ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এই ধরনের দুর্ঘটনা রোধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো প্রিয়জনকে এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাতে না হয়। এ দুর্ঘটনাটি আমাদেরকে আবারও স্মরণ করিয়ে দেয় যে, একমাত্র সঠিক নজরদারি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ট্রেন চলাচলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব। প্রয়োজনীয় সংস্কারের দিকে আরও মনোযোগ দেওয়ার সময় এসেছে।