কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কারনি শপথ নেওয়ার পর প্রথমবারের মতো কানাডা-আমেরিকা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে হুঙ্কার দিয়েছেন। তার মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দীর্ঘকালীন সম্পর্ক এখন 'শেষ' হয়ে গেছে। আমেরিকার শুল্কনীতি এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবনতির প্রেক্ষিতে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
আগামী ২ এপ্রিল থেকে কানাডার উপর বিরাট অঙ্কের শুল্ক চাপানোর ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরই মধ্যে মার্ক কারনি চূড়ান্ত প্রতিরোধের সঙ্কেত দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার জরুরি বৈঠকে বসেন কানাডার ক্যাবিনেট সদস্যরা এবং পরবর্তীতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। কারনি বলেন, "আমাদের বহু বছরের সম্পর্ক ছিলো, যা সামরিক সহযোগিতা, নিরাপত্তা ও অর্থনীতির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল। কিন্তু এই সম্পর্ক এখন আর টিকে থাকবে না। আমেরিকার ভবিষ্যত আচরণ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেই। তবে আমরা জানি, কানাডারও নিজস্ব ক্ষমতা রয়েছে এবং নিজেদের দেশে আমরা নিজেরাই রাজা।"মার্ক কারনি ১৪ মার্চ কানাডার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরই তাকে এমন একটি পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে, যেখানে চড়া মার্কিন শুল্কনীতির মোকাবিলা করা ছাড়া কোন বিকল্প নেই। ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করা সম্ভব হলেও, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতি হবে কিনা, সেই বিষয়ে আশাবাদী নয় কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী। প্রথম থেকেই কানাডার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ট্রাম্পের সঙ্গে কোনো বৈঠক করেননি কারনি। তবে শুল্কযুদ্ধের আবহে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তিনি। কিন্তু তিনি স্পষ্ট জানান, আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক আর আগের মতো বিশ্বাসযোগ্য নয়। এর মধ্যে একাধিকবার আমেরিকা কানাডার উপর বিভিন্ন শুল্ক চাপিয়েছে এবং কানাডা এর বিরুদ্ধে পালটা পদক্ষেপ নিয়েছে।
মিশরে লোহিত সাগরে ডুবে গেল পর্যটকবাহী ডুবোজাহাজ: কমপক্ষে ৬ জনের মৃত্যু, ৯ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক
প্রসঙ্গত, ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকেই কানাডাকে ‘অনুপ্রবেশে মদত’ দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন এবং কানাডার উপর একাধিক শুল্ক আরোপ করেছেন। তবে, কারনি সরকারও পালটা পদক্ষেপ নিতে এক মুহূর্তও দেরি করেনি। সাম্প্রতিক সময়ে কানাডা আমেরিকার উপর পালটা শুল্ক চাপানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও এই শুল্কের সিদ্ধান্ত আপাতত স্থগিত রেখেছে আমেরিকা, তবুও আগামী দিনে এ বিষয়ে আর কোনো স্থগিতাদেশ আসবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কানাডার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কারনির সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ। একদিকে আমেরিকা, অন্যদিকে তার নিজের দেশের জনগণের স্বার্থ রক্ষা—এই দুইয়ের মাঝে ভারসাম্য বজায় রেখে তাকে নীতির সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যদিও কানাডার প্রধানমন্ত্রী শুল্কযুদ্ধের পরিণতি নিয়ে আশাবাদী নন, তবে তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, কানাডা কোনভাবেই আমেরিকার চাপের সামনে মাথা নত করবে না। ভবিষ্যতে, তার নেতৃত্বে কানাডা আন্তর্জাতিকভাবে আরও দৃঢ় অবস্থান নিতে পারে, তবে সেটা কতটা সফল হবে, তা সময়ই বলবে। কানাডার জনগণের কাছে এখন প্রধান প্রশ্ন হল, এই নতুন শুল্কযুদ্ধ কি তাদের দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও সংকটাপন্ন করে তুলবে, নাকি এটি তাদের জন্য একটি নতুন রাজনৈতিক শক্তির উদ্ভব ঘটাবে?