মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক কমিশন (ইউএসসিআইআরএফ) সম্প্রতি তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে ভারতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বৈষম্য ও হয়রানির অভিযোগ তুলেছে। কমিশনের এই প্রতিবেদন ভারতের জন্য নতুন এক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে, যার মধ্যে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হত্যার সঙ্গে ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (র) এর জড়িত থাকার বিষয়টিও রয়েছে। এর মাধ্যমে ভারতীয় সরকারের ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রতি সংবেদনশীলতার বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
প্রসঙ্গত, মার্কিন কমিশনের প্রতিবেদনে ২০২৪ সালে ভারতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও বৈষম্য বাড়ার কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও শাসকদল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) মুসলিম এবং অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক বক্তব্য ও গুজব ছড়ানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব অভিযোগের ফলে ভারতের মানবাধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে। সিএএ নিয়ে মার্কিন কমিশন প্রশ্ন তুলেছে, যা রাষ্ট্রসংঘও 'মৌলিকভাবে বৈষম্যমূলক' হিসেবে বর্ণনা করেছে। প্রতিবেদনটি জানায়, সিএএ মুসলিমদের নাগরিকত্বের অধিকার হরণ করতে পারে এবং এটি ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্য সৃষ্টি করতে সহায়ক হতে পারে। কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের সরকারের ভূমিকা নিয়েও সমালোচনা করা হয়েছে। কমিশন বলেছে, এই পদক্ষেপের ফলে কাশ্মীরের জনগণের ধর্মীয় স্বাধীনতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
২০২৩ সাল থেকে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে আমেরিকা এবং কানাডায় ভারতের 'কথিত পদক্ষেপ' দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করেছে। এই বিষয়টির ফলস্বরূপ ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তা বিকাশ যাদবের বিরুদ্ধে একটি ব্যর্থ ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে। যদিও ভারত এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে, তবুও এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ভারত-আমেরিকা সম্পর্কের উপর প্রভাব ফেলছে। প্রতিবেদনটি বিশেষভাবে ভারতের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মার্কিন কমিশনের ভাষ্য অনুযায়ী, ভারতের সরকারের ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষায় যথেষ্ট পদক্ষেপ নেয়া হয়নি এবং সাধারণ জনগণের ধর্মীয় স্বাধীনতা ক্রমশ ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। এই কারণে ভারতের বিরুদ্ধে "বিশেষ উদ্বেগের রাষ্ট্র" হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
বাংলার অগ্রগতির কথা তুলে ধরলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লন্ডনে
উলেখ্য, সরকার এই প্রতিবেদনকে অস্বীকার করেছে এবং দাবি করেছে যে তাদের সরকার সকল সম্প্রদায়ের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বহুবার আন্তর্জাতিক মঞ্চে দাবি করেছেন যে তাঁর সরকারের প্রকল্পগুলি সমস্ত সম্প্রদায়ের জন্য উপকারী এবং কোনো ধর্মীয় বৈষম্য নেই। মার্কিন কমিশনের রিপোর্টের ফলে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের উপর প্রভাব পড়তে পারে। যদিও এই প্রতিবেদনটি রাজনৈতিক বা কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে, তবুও ভারতের সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবেদনটি অস্বীকার করার পাশাপাশি, নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করা হয়েছে। তবে, প্রতিবেদনটি দেশের আন্তর্জাতিক ইমেজ এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষায় ভবিষ্যতের পদক্ষেপগুলোর উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলতে পারে। মার্কিন আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা কমিশনের প্রতিবেদনটি ভারত সরকারের ধর্মীয় স্বাধীনতা, সংখ্যালঘুদের প্রতি আচরণ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রতি একটি গভীর সমালোচনা হিসেবে উঠেছে। এ ধরনের প্রতিবেদন ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে, এবং ভারত সরকারকে আরও সতর্ক ও দায়িত্বশীল পদক্ষেপ নিতে হতে পারে।