বুধবার, লন্ডনে ব্রিটিশ বণিকসভার সঙ্গে লগ্নি বৈঠকের আগে ভারতীয় হাই কমিশনে এক অনুষ্ঠানে বাংলার অভূতপূর্ব অগ্রগতির কথা তুলে ধরলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, বাংলার মাটি বিশ্বের বিভিন্ন শিল্পের জন্য এখন সেরা ঠিকানা। ক্ষুদ্র শিল্প থেকে তথ্যপ্রযুক্তি, প্রতিটি সেক্টরে রাজ্য অবিচ্ছিন্নভাবে এগিয়ে যাচ্ছে এবং ভারতের অন্যতম প্রধান শিল্প স্থাপনের জায়গা হয়ে উঠেছে বাংলা।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বাংলায় বর্তমানে আইটি হাব তৈরি হচ্ছে। নিউটাউন যেমন প্রযুক্তির কেন্দ্র হয়ে উঠছে, তেমনি খড়গপুর আইআইটি, যা পড়াশোনার এক গুরুত্বপূর্ণ জায়গা, তার মতো আরও অনেক সুযোগ তৈরি হচ্ছে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, “বাংলার মাটিতে বিনিয়োগের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে, এবং এক্ষেত্রে এই রাজ্যই ভারতের সেরা।”লন্ডন সফরের সময় মুখ্যমন্ত্রী একদিকে বাংলার শিল্পের উন্নয়ন এবং বিনিয়োগের সুযোগ তুলে ধরেছেন, অন্যদিকে রাজ্যের ঐতিহ্যকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরার পরিকল্পনাও প্রকাশ করেছেন। তিনি প্রস্তাব দিয়েছেন, লন্ডনে ‘বিশ্ববাংলা হাব’ তৈরি করার। তাঁর মতে, এই হাবটি শুধু একটা স্টল হবে না, বরং বাংলার ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক হবে, যেখানে থাকবে বাংলার সেরা মিষ্টি যেমন দই, সন্দেশ, এবং আরও নানা ঐতিহ্যবাহী খাবার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও উল্লেখ করেন, লন্ডন থেকে কলকাতা সরাসরি উড়ান চালু করা উচিত। তিনি জানান, কলকাতা এবং লন্ডনের দূরত্ব মাত্র ৮ ঘণ্টা, কিন্তু ব্রেক জার্নির কারণে তা ১৮ ঘণ্টায় পৌঁছে যায়, যা যাত্রীদের জন্য অস্বস্তিকর। ব্রিটিশ এয়ারওয়েজও মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন জানায়।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন কলকাতা-লন্ডন সম্পর্কের গভীরতা বোঝাতে বাংলার ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর’ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যয়ের নাম উল্লেখ করেন। তিনি জানান, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন এবং তার উপস্থিতি কলকাতা-লন্ডন সম্পর্কের আরও উন্নতি ঘটাবে। মুখ্যমন্ত্রী তার ভাষণে বাংলার শিক্ষাব্যবস্থা, শিল্প, কর্মসংস্থান, নারী উন্নয়ন এবং সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের উন্নতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি বলেন, “বাংলায় সব ধর্মের মানুষ একত্রে বসবাস করতে পারেন এবং রাজ্যে সকলের সমান অধিকার রয়েছে।” তিনি জানিয়ে দেন, বাংলায় যে সমস্ত ধর্মীয় উৎসব পালিত হয়, সেখানে তিনি ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত থাকেন এবং সকলের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে রাজ্য সরকার বদ্ধপরিকর। মুখ্যমন্ত্রী মাদার টেরেসার সেবা এবং কলকাতার ঐতিহ্য তুলে ধরে জানান, "প্রথমবার সাংসদ থাকার সময় মাদার টেরেসার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা ছিল।" তিনি আরও জানান, নিউটাউনে মাদার টেরেসার সম্মানে মিউজিয়ামের নামকরণ এবং সিস্টার নিবেদিতার দার্জিলিঙের বাড়ি রাজ্য সরকার কর্তৃক সংরক্ষণ করা হয়েছে।
বড় দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেল আপ বনগাঁ লোকাল
মুখ্যমন্ত্রী লন্ডনে বক্তব্য রাখার সময় ভারত-ব্রিটেন সম্পর্কের ঐতিহাসিক গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “কলকাতা ছিল এক সময় ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী। কলকাতার সঙ্গে লন্ডনের সম্পর্ক শতাব্দী প্রাচীন।” তিনি আরও বলেন, “কলকাতার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং ইতিহাসের সঙ্গে লন্ডনের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য।” ভারতীয় হাই কমিশনের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীকে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানান ভারতীয় হাই কমিশনার বিক্রম দোরাই স্বামী। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর আঁকা ছবি এবং ‘কবিতাবিতান’ বই উপহার দেন হাই কমিশনারকে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লন্ডন সফর শুধু বাংলার শিল্প ও সংস্কৃতির প্রসারে নয়, ভবিষ্যতে রাজ্যের আরও উন্নতির সম্ভাবনা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে চলেছে। তাঁর বক্তব্য, বাংলার উন্নতি, বিশেষ করে শিল্প, প্রযুক্তি, কর্মসংস্থান এবং নারী উন্নয়নে আরও এক ধাপ এগিয়ে যেতে সহায়ক হবে। এদিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে লন্ডন সফরে ছিলেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, শিল্প সচিব বন্দনা যাদব এবং অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।