ভারতের রেলওয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবহন ব্যবস্থা, যা গোটা দেশে যাতায়াতের একটি অন্যতম স্তম্ভ। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত বিভিন্ন রুটে বিস্তৃত রেলপথ প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষের যাতায়াতের মাধ্যম হয়ে থাকে। তবে, রেলযাত্রীরা প্রায়ই লক্ষ্য করেন যে, ট্রেনের কোচগুলি বিভিন্ন রঙের হয়। লাল, নীল, সবুজ – এদের প্রত্যেকটির পিছনে রয়েছে বিশেষ কিছু প্রযুক্তিগত কারণ।
লাল রঙের কোচকে "লিঙ্ক হফম্যান (Link Hoffmann)" বা "LHB কোচ" বলা হয়। এই ধরনের কোচগুলি বিশেষভাবে জার্মানিতে তৈরি হয়েছে এবং ২০০০ সালে ভারতীয় রেলওয়ে এই কোচগুলো আমদানি করে। বর্তমানে এই ধরনের কোচ পাঞ্জাবের কাপুরথালায় তৈরি হয়। এই কোচগুলো অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি, যা অন্য কোচের তুলনায় অনেক হালকা। এর ফলে, এগুলো উচ্চ গতিতে চলতে সক্ষম। এই কোচে ডিস্ক ব্রেক ব্যবহৃত হয়, যা ট্রেনের গতি বাড়াতে সহায়ক। LHB কোচের ট্রেন গতি ২০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। এই কোচগুলি প্রধানত রাজধানী এবং শতাব্দী ধরনের ট্রেনে ব্যবহৃত হয়, যেখানে উচ্চ গতি ও নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ।
১. নীল রঙের কোচ (ICF কোচ)
নীল রঙের কোচ ভারতীয় রেলওয়ে ট্রেনগুলির মধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত। এই কোচগুলি মূলত *মেল এক্সপ্রেস* বা *সুপারফাস্ট* ট্রেনগুলিতে ব্যবহৃত হয়। নীল রঙের কোচগুলো সাধারণত লোহার তৈরি এবং এদের মধ্যে এয়ার ব্রেক থাকে। এসব কোচের গতি ৭০ থেকে ১৪০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা পর্যন্ত হতে পারে। নীল রঙের ICF (ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরি) কোচের নির্মাণ শুরু হয়েছিল ১৯৫২ সালে তামিলনাড়ুর চেন্নাইয়ে। ICF কোচের মধ্যে কিছু উন্নত প্রযুক্তি রয়েছে, যা এটি সুস্থ এবং দ্রুত গতিতে চলতে সহায়ক করে।
২. সবুজ রঙের কোচ
সবুজ রঙের কোচ সাধারণত ভারতীয় রেলওয়ের গরিব রথ ট্রেনগুলিতে ব্যবহৃত হয়। এদের উপর অনেক সময় চিত্রকলা করা হয়, যা দেখে যাত্রীদের মনোরঞ্জন হয়। সবুজ রঙের কোচের ব্যবহারের একটি বিশেষ ক্ষেত্র হল ছোট লাইনে চলা মিটার গেজ ট্রেন। এসব কোচের ডিজাইন সাধারণত আকর্ষণীয় এবং চিত্তাকর্ষক থাকে, যা যাত্রীদের জন্য একটি বিশেষ অভিজ্ঞতা প্রদান করে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লন্ডন সফর পিছিয়ে গেলো হিথরো বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ডের কারণে
৩. নিরাপত্তা ব্যবস্থার পার্থক্য
যাত্রা পথে নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দুর্ঘটনার সময় কোন কোচ সবচেয়ে নিরাপদ তা জানাও জরুরি। এখানে ICF কোচ এবং LHB কোচের মধ্যে মূল পার্থক্য দেখা যায়। ICF কোচের মধ্যে বিশেষ একটি সিস্টেম ব্যবহৃত হয়, যা "ডুয়াল বাফার সিস্টেম" নামে পরিচিত। এই সিস্টেমটি দুর্ঘটনার সময় কোচগুলির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক হয়। এর ফলে কোচগুলি একে অপরের উপর উঠে যাওয়া থেকে রোধ করা যায়। অন্যদিকে, LHB কোচে একটি "সেন্টার বাফার কলিং সিস্টেম" ব্যবহৃত হয়, যা দুর্ঘটনার সময় কোচগুলোকে একে অপরের উপর উঠে যেতে দেয় না। এর ফলে জানমালের ক্ষতি কম হয় এবং যাত্রীরা নিরাপদ থাকে।
প্রসঙ্গত, ভারতের রেলওয়ে কোচের বিভিন্ন রঙের ব্যবহারের পেছনে শুধু ডিজাইন বা সৌন্দর্য নয়, বরং প্রযুক্তিগত এবং নিরাপত্তামূলক কারণও রয়েছে। লাল, নীল, এবং সবুজ রঙের কোচ প্রতিটি ট্রেনের গতি, সুবিধা এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তৈরি করা হয়েছে। ভবিষ্যতে আরো উন্নত প্রযুক্তি এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার মাধ্যমে ভারতের রেলপথের উন্নতি হবে এবং যাত্রীদের অভিজ্ঞতা আরও উন্নত হবে।