বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন (ডিসএবিলিটি) পড়ুয়াদের জন্য শিক্ষকদের নিয়োগের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি এক গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গসহ দেশের সব রাজ্যকে এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। ১৯ মার্চ, ২০২৫ তারিখে বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া এবং বিচারপতি কে বিনোদ চন্দ্রনের বেঞ্চের নির্দেশে বলা হয়েছে, আগামী ২৮ মার্চের মধ্যে রাজ্যগুলিকে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়াদের শিক্ষায় উপযোগী শিক্ষকদের সংখ্যা নির্ধারণ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে। এরপর সেই বিজ্ঞপ্তি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিতে হবে এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া আরসিআই (Rehabilitation Council of India)-এর নিয়ম মেনে সম্পন্ন করতে হবে। যারা ইতোমধ্যে চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন, তাদের নিয়োগের যোগ্যতা যাচাই করে, তাদেরও স্থায়ী শিক্ষকের বেতন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে, প্রক্রিয়াটি সুপ্রিম কোর্টের রায় ঘোষণার ১২ সপ্তাহের মধ্যে শেষ করতে হবে।
প্রসঙ্গত, গৌরাঙ্গকুমার দাস, যিনি এই মামলার একজন আবেদনকারী, জানিয়েছেন যে পশ্চিমবঙ্গেও অনেক চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়াদের জন্য কাজ করছেন। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, তাদের যোগ্যতা যাচাইয়ের পরেই স্থায়ী পদে তাদের নিয়োগ ও বেতনক্রমের সুবিধা প্রদান করা হবে। তবে, পূর্ববর্তী চাকরির অভিজ্ঞতা বেতনের ক্ষেত্রে গন্য হবে না। তবে, চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকদের মধ্যে যারা বহু বছর ধরে কর্মরত, তাদের বয়সজনিত ছাড় দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্ট এই মামলার পরবর্তী শুনানিতে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়াদের জন্য ছাত্র-শিক্ষক অনুপাতের বিষয়ে জানতে চেয়েছিল। কেন্দ্রীয় সরকার কোর্টে জানিয়েছে, প্রাথমিক স্তরে ১০ জন ছাত্রের জন্য ১ জন শিক্ষক এবং মাধ্যমিক স্তরে ১৫ জন ছাত্রের জন্য ১ জন শিক্ষক থাকতে হবে। এছাড়াও, রাজ্যগুলির মধ্যে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়াদের সংখ্যা সম্পর্কিত তথ্য আদালতে জমা পড়েছে। সর্বাধিক সংখ্যা উত্তরপ্রদেশে (প্রায় ৩ লক্ষ) এবং তার পরেই পশ্চিমবঙ্গ, যেখানে প্রায় ১ লক্ষ ৩৫ হাজার বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ছাত্র রয়েছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লন্ডন সফর: প্রশাসনিক ব্যবস্থা এবং বিশেষ টাস্ক ফোর্স গঠন
উলেখ্য, এই মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বলা হয়েছে, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়াদের জন্য শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতা যাচাই কমিটিতে যারা উপস্থিত থাকবেন তাদের তালিকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কমিটিতে রাজ্যের প্রতিবন্ধী কমিশনার, শিক্ষা সচিব এবং আরসিআই-এর একজন প্রতিনিধি থাকবেন। এছাড়া, রাজ্যের প্রতিবন্ধী কমিশনারের পদ খালি থাকলে, রাজ্যের ল’ রিপ্রেজেন্টেটিভ বা আইন সচিব কমিটিতে যোগদান করবেন। এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়াদের জন্য শিক্ষকের অভাব মেটাতে সহায়ক হতে পারে। এই নির্দেশনা কার্যকর হলে, রাজ্যগুলোতে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ছাত্রদের জন্য শিক্ষার মান বৃদ্ধি পাবে এবং তাদের জন্য উপযুক্ত শিক্ষা পরিবেশ তৈরি হবে। এর মাধ্যমে দেশে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়াদের শিক্ষার ক্ষেত্রে সমতা এবং মানের দিক থেকে নতুন দিগন্ত খুলে যাবে।