দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে আরও নিরাপদ এবং নির্ভুল করার উদ্দেশ্যে কেন্দ্রের পরিকল্পনা, আধার ও ভোটার তালিকা সংযুক্তিকরণ নিয়ে গড়ে উঠছে বিতর্ক। আগামী মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৫, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকার বৈঠকে বসতে চলেছে। বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব, আধার কমিশনের সিইও, সংসদ বিষয়ক মন্ত্রকের সচিব, এবং কেন্দ্রীয় আইন সচিব।
এই বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য হল, আধার এবং ভোটার তালিকা সংযুক্তিকরণের সম্ভাবনা এবং তার ফলস্বরূপ নির্বাচন ব্যবস্থায় কী ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করা। বৈঠকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে রাজনৈতিক দলগুলির মতামত এবং পরামর্শের ওপর। নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে যে, তারা এই বিষয়ে সব জাতীয় এবং আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলির সাথে আলোচনা করবে। তৃণমূল কংগ্রেস এবং অন্যান্য বিরোধী দলগুলি এই সংযুক্তিকরণের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলেছে। তাদের দাবি, আধার কার্ডকে ক্লোন করে ‘ডুপ্লিকেট’ ভোটার কার্ড তৈরি করা হচ্ছে, যা দেশের ভোটিং ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করতে পারে। বিরোধীরা আরও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে, এতে দেশের নাগরিকদের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তার ঝুঁকি বাড়বে। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন একটি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, তারা তিন মাসের মধ্যে ভোটার তালিকা সংশোধন করবে এবং প্রতিটি ভোটারের জন্য ইউনিক এপিক নম্বর ইস্যু করবে।
প্রসঙ্গত, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, তারা ভোটার তালিকা সংশোধন এবং আধার সংযুক্তিকরণের পথেই এগোচ্ছে। কমিশন পুরোপুরি আধার সিস্টেমে বিশ্বাস রাখছে এবং আধারের সঙ্গে ভোটার কার্ডের সংযুক্তি ঘটাতে চায়। এটি বিশেষভাবে সুনিশ্চিত করবে যে, একটি ভোটারকে একাধিকবার ভোট দেওয়ার সুযোগ থাকবে না এবং ভোটিং ব্যবস্থার সঠিকতা নিশ্চিত হবে। এই প্রক্রিয়া ভোটার কার্ডের ক্ষেত্রে ‘ডুপ্লিকেট’ তৈরির অভিযোগ থেকে রক্ষা করবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে, এই পরিবর্তন কার্যকর করার আগে, এটি একটি বড় প্রযুক্তিগত ও আইনি পদক্ষেপ। নির্বাচনী ব্যবস্থায় আধার সংযুক্তিকরণের ফলে যে কোনো ধরনের নিরাপত্তা বা গোপনীয়তার প্রশ্ন উঠতে পারে। সেক্ষেত্রে, এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা এবং পরিকল্পনা করতে মঙ্গলবারের বৈঠকটি গুরুত্বপূর্ণ হবে। নির্বাচনী আইন এবং আধার সিস্টেমের মধ্যে সেতু গড়তে কী ধরনের আইনি সংশোধন প্রয়োজন হবে, তা নিয়েও আলোচনা হবে।
গাজা ভূখণ্ডে ইজরায়েলি বাহিনীর নতুন হামলা, নিহত শতাধিক প্যালেস্টাইনি
উলেখ্য, তৃণমূল কংগ্রেসসহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলো এই বৈঠকে অংশগ্রহণ করবে এবং তাদের উদ্বেগ তুলে ধরবে। এর পরেই নির্বাচন কমিশন এই বিষয়ে একটি সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত নেবে। বিশেষ করে, বিরোধীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে কমিশন কি সিদ্ধান্ত নেয় তা দেশে নির্বাচন ব্যবস্থার ভবিষ্যতের দিকে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। মঙ্গলবারের বৈঠক শেষেই, আধার এবং ভোটার তালিকা সংযুক্তিকরণের পরবর্তী পদক্ষেপ ও নিরাপত্তার বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে। সরকারের পক্ষ থেকে ভোটার তালিকা সংক্রান্ত এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হতে পারে। তবে, বিরোধী দলগুলির চাপ এবং জনসাধারণের উদ্বেগের বিষয়টি অবশ্যই নিরসন করতে হবে যাতে নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে স্বচ্ছ ও নির্ভুল হয়।