এক মাসের মধ্যে ফের এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটল নয়াদিল্লি রেল স্টেশনে। গত শনিবার রাতে প্রয়াগরাজগামী ট্রেনে ওঠার জন্য হুড়োহুড়ির মধ্যে পদপিষ্ট হয়ে কমপক্ষে ১৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন। মৃতদের মধ্যে ১১ জন মহিলা, ৪ জন শিশু রয়েছেন। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, এই ঘটনায় বেশ কয়েকজন গুরুতর আহতও হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে তিনজনকে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য লেডি হার্ডিং হাসপাতালে পাঠানো হয়, সেখানে তারা মারা যান। তবে, রেল কর্তৃপক্ষ প্রথমে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা অস্বীকার করলেও, পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে পরে তারা সেই তথ্য স্বীকার করেন।
ঘটনার সূত্রপাত হয়, যখন হাজার হাজার মানুষ প্রয়াগরাজগামী ট্রেনে ওঠার জন্য স্টেশনে ভিড় জমান। স্টেশনে প্রয়াগরাজ এক্সপ্রেস এবং স্বতন্ত্র সেনানী এক্সপ্রেস দুটি ট্রেন এসে দাঁড়ায়, আর তাদের মধ্যে হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়। ১৪ এবং ১৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মে প্রবল ভিড় জমেছিল, এবং ট্রেনের দরজায় ঝুলে ওঠার মতো দৃশ্যও সামনে আসে। কিছু মানুষ শিশুদের কাঁধে বসিয়ে ছোটাছুটি করছিলেন, আর অনেকে মালপত্র নিয়ে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। এই বিশৃঙ্খলার মাঝেই দুর্ঘটনাটি ঘটে। এছাড়া, রাত ৯টা নাগাদ এক অঘটন ঘটে, যখন স্টেশনে যাত্রীদের মধ্যে ভিড় ব্যাপকভাবে বাড়তে থাকে। স্টেশন চত্বরে প্রয়োজনীয় পুলিশ বা রেল পুলিশের উপস্থিতি ছিল না, ফলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, "১২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ট্রেন আসার কথা ছিল। হঠাৎ ঘোষণা করা হয় যে, ট্রেন ১৬ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ঢুকবে, আর তার ফলেই দুটি দিক থেকে হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়।" এটি ছিল মূল কারণ যার জন্য এই অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটেছে।
ঈশ্বরীপুর এলাকা থেকে উদ্ধার ১৯০ রাউন্ড কার্তুজ, ৪ গ্রেফতার
এটা এক ভয়াবহ পরিস্থিতি যা কেবল হুড়োহুড়ির ফলেই সৃষ্ট হয়েছে। ভিড়ের মধ্যে অনেক যাত্রী আহত হয়েছেন এবং স্টেশনের অব্যবস্থাপনা বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে, কুম্ভমেলা চলাকালীন সময়ে, যেখানে হাজার হাজার মানুষ একসঙ্গে প্রয়োজনীয় গন্তব্যে যাচ্ছেন, সেখানে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এর আগে ২৯ জানুয়ারি, উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে কুম্ভমেলা প্রাঙ্গনে পদপিষ্ট হয়ে ৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। যদিও সরকারি হিসাব অনুযায়ী, মৃতের সংখ্যা ৩৩ হলেও, প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি বলে দাবি করা হয়েছে। কুম্ভমেলা সংক্রান্ত হুড়োহুড়ি থেমে নেই, এবং এর প্রভাব নয়াদিল্লি রেল স্টেশনেও পড়েছে।
এখন প্রশ্ন উঠছে, এমন বিপুল পরিমাণ ভিড় সামলাতে কীভাবে রেল কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ বাহিনী আরও দক্ষ পদক্ষেপ নিতে পারে? জনসংখ্যা ও নিরাপত্তার মধ্যে একটি ভারসাম্য বজায় রাখা এবং বড় স্টেশনগুলোর দিকে নজরদারি বাড়ানো যে একান্ত প্রয়োজন, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এছাড়া, একটি ট্রেন স্টেশন এবং বিশেষত হাই ভোলিউম যাত্রীদের জন্য প্ল্যাটফর্মে সঠিক পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এই দুর্ঘটনাটি শুধু নয়াদিল্লির রেল স্টেশনেই নয়, গোটা দেশেই রেল যাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।