বর্তমানে ডিভোর্স বা বিবাহবিচ্ছেদের পর খোরপোশের বিষয়টি সামাজিক মাধ্যমে এবং আদালতে বহু আলোচিত হচ্ছে। এমনকি এই বিষয়টি অনেক ক্ষেত্রেই বিতর্কের কারণ হয়ে উঠছে। কিছু ক্ষেত্রে স্ত্রীরা মোটা অঙ্কের খোরপোশের দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন, আবার অনেকেই এতে দ্বিধা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠে, যদি একজন স্ত্রীর পক্ষে খোরপোশ দাবি করা যথার্থ হয়, তাহলে কি স্বামীও স্ত্রীর কাছ থেকে প্রতি মাসে খোরপোশের টাকা দাবি করতে পারেন?
ভারতের হিন্দু ম্যারেজ অ্যাক্ট অনুযায়ী, স্বামীও আইনগতভাবে স্ত্রীর কাছ থেকে খোরপোশ দাবি করতে পারেন। এই বিষয়টি অনেকের কাছে অজানা হলেও, ভারতীয় আইনে এটি পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। হিন্দু ম্যারেজ অ্যাক্টের ২৪ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো স্বামী আর্থিকভাবে অসচ্ছল বা কর্মহীন হন, তাহলে তিনি স্ত্রীর কাছ থেকে মামলা লড়ার জন্য খরচ দাবি করতে পারেন। এছাড়া, এই আইনের ২৫ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, এমনকি স্বামী যদি স্থায়ীভাবে কর্মহীন বা আয়হীন হয়ে যান, তাহলে তিনি স্ত্রীর কাছ থেকে স্থায়ীভাবে খোরপোশ পাওয়ার অধিকারী হতে পারেন। তবে, এ ক্ষেত্রে কিছু শর্ত রয়েছে। আইন অনুযায়ী, যদি স্বামীর যথাযথ আয় না থাকে বা তিনি কর্মহীন থাকেন, এবং স্ত্রী ভালো আয়ের অধিকারী হন, তাহলে স্ত্রীর কাছ থেকে খোরপোশ দাবি করার অধিকার স্বামীর রয়েছে। তবে, এই বিধি তখনই কার্যকর হবে যদি ডিভোর্সের ব্যাপারে দুই পক্ষের মতানৈক্য না থাকে এবং দুই পক্ষই একে অপরের কাছে খোরপোশ দাবি না করেন। এছাড়া, যদি বিবাহবিচ্ছেদ স্বেচ্ছায়, মিউচুয়াল কনসেন্টের মাধ্যমে হয়, বা কেউই খোরপোশের পক্ষে না যায়, তবে এই বিধি প্রযোজ্য হবে না।
স্বস্তি ফিরল মইপিঠে, বনকর্মীর ওপর হামলা করা বাঘ ধরা পড়ল ভোররাতে
সাধারণত, খোরপোশের বিষয়ে মানুষের ধারণা থাকে যে, স্ত্রীই স্বামীর কাছে টাকা দাবি করতে পারেন, কিন্তু বর্তমান আইনে এটি পাল্টে গেছে। এখন স্বামীও যদি আর্থিকভাবে অসচ্ছল হন এবং স্ত্রীর আয় যথেষ্ট হয়, তাহলে তার কাছ থেকে খোরপোশের অধিকারী হতে পারেন। এই আইনটি তখনই প্রযোজ্য হবে যখন স্বামী আর্থিকভাবে বিপদে থাকবেন বা কর্মহীন অবস্থায় থাকবেন, আর স্ত্রীর আয়ের পরিমাণ বেশি হবে। আরেকটি শর্ত হল, বিবাহবিচ্ছেদ মিউচুয়াল কনসেন্টে হলে এই বিধি প্রযোজ্য হবে না। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কারণ ভারতীয় সমাজে সাধারণত স্ত্রীরা খোরপোশ দাবি করেন এবং এই প্রক্রিয়া সাধারণত পুরুষের ক্ষেত্রে কখনোই সচল হয় না। তবে, আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে, স্বামীও যদি যথাযথ কারণে অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল হন, তাহলে তিনি স্ত্রীর কাছ থেকে খোরপোশ পাওয়ার অধিকারী।
প্রসঙ্গত, এখানে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়, সামাজিক ও আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে স্বামী এবং স্ত্রীর মধ্যে খোরপোশ দাবি করা কিভাবে একটি নতুন বাস্তবতায় পরিণত হচ্ছে। আদালত ও আইন যদি স্বামীকে খোরপোশ পাওয়ার অধিকার দেয়, তাহলে প্রশ্ন উঠতে পারে, কীভাবে এই নতুন বাস্তবতা সমাজের চিরন্তন সম্পর্কের রীতির সঙ্গে খাপ খায়।