নতুন বছরের শুরুতে উত্তরাখণ্ডে কার্যকর হতে চলেছে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি, যা আইনগত দৃষ্টিতে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনবে রাজ্যের নাগরিকদের জন্য। চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি থেকে এই আইন কার্যকর হতে যাচ্ছে, যা নিয়ে ইতিমধ্যেই সরকারের পক্ষ থেকে বিস্তারিত প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বিশেষত, রাজ্য সরকার একটি নতুন পোর্টাল ও মোবাইল অ্যাপ চালু করেছে, যার মাধ্যমে অভিন্ন দেওয়ানি বিধির আওতায় বিভিন্ন প্রক্রিয়া অনলাইনে সম্পন্ন করা যাবে।
আইন অনুযায়ী, এবার থেকে সব ধরনের বিয়ের ক্ষেত্রে সরকারি রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যদিও রেজিস্ট্রেশন না থাকলেও বিয়ে বৈধ থাকবে, তবে আইনি স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য এবং সরকারি সাহায্য পেতে রেজিস্ট্রেশন প্রয়োজন। বিয়ের পর ছয় মাসের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন করাতে হবে। যদি কেউ রেজিস্ট্রেশন না করে, তাহলে তার বিয়ে আইনি স্বীকৃতি পাবে না। বিয়ের ক্ষেত্রে পুরুষদের জন্য ন্যূনতম বয়স ২১ বছর এবং মহিলাদের জন্য ১৮ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। এই নিয়মটি সব ধর্মের নাগরিকদের জন্য প্রযোজ্য। বিয়ের পরে কেউ দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারবেন না, যদি না প্রথম বিয়ের বৈধ বিচ্ছেদ ঘটে থাকে। এই আইনের মাধ্যমে একদিকে যেমন পারিবারিক সমস্যা কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, তেমনই অপরদিকে সামাজিক চাপও সৃষ্টি হতে পারে।
ফেব্রুয়ারি মাসে আমেরিকা সফরে মোদি ঘোষণা ট্রাম্পের
প্রসঙ্গত, এটি সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয় হয়ে উঠেছে। আইন অনুযায়ী, লিভ ইন সম্পর্ককেও সরকারিভাবে নথিভুক্ত করাতে হবে। এক মাসের মধ্যে নোটিশ দেওয়ার পর লিভ ইন সম্পর্কের রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে হবে। যদি এটি না করা হয়, তবে লিভ ইন যুগলকে শাস্তি দিতে হবে। বাড়ির মালিকরা, যারা লিভ ইন যুগলকে ভাড়া দিচ্ছেন, তাদেরও অবশ্যই তথ্য প্রদান করতে হবে। যদি তথ্য গোপন করা হয়, তাহলে বাড়ির মালিককেও শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। সর্বোচ্চ তিন মাসের জেল এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা হতে পারে। ভুল তথ্য দিলে সাজা আরও কঠোর হবে—ছয় মাসের জেল এবং ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা। এই আইন কার্যকর করার জন্য রাজ্য সরকার এক বিশেষ পোর্টাল ও মোবাইল অ্যাপ চালু করেছে, যার মাধ্যমে নাগরিকরা বিয়ের রেজিস্ট্রেশন বা লিভ ইন সম্পর্কের নথিভুক্তি সম্পন্ন করতে পারবেন। এটি প্রক্রিয়া সহজ করবে এবং নাগরিকদের আইনি সেবা পেতে সাহায্য করবে। সোমবারই এই অ্যাপটির আনুষ্ঠানিক সূচনা হবে, এবং পরে সরকারি কর্মকর্তাদের নতুন আইনের বিষয়ে প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে।
উলেখ্য, এই আইন নিয়ে রাজ্যে বিভিন্ন মহলে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিশেষত, লিভ ইন সম্পর্কের নথিভুক্তি এবং দ্বিতীয় বিয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা অনেকেরই আপত্তি তুলেছে। অনেকের মতে, এটি ব্যক্তিগত স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ হতে পারে, তবে সরকারের যুক্তি হলো, এই আইন ব্যক্তি এবং পরিবারকে আইনি সুরক্ষা প্রদান করবে এবং সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখবে। এটি দেখতে হলে সময়ের সাথে, সাধারণ মানুষ কিভাবে এই আইনের প্রতি প্রতিক্রিয়া দেয়, তা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে।