গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশের চট্টগ্রামে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় ধৃত হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, "প্রাণের ভয়ে পালিয়ে আসিনি... চিন্ময়ের হয়ে লড়তে ২ জানুয়ারি ফের চট্টগ্রামের কোর্টে যাব আমি।" কিন্তু গত মঙ্গলবার রাতেই আচমকায় বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় রবীন্দ্র ঘোষ। পরিস্থিতি জানাজানি হতেই বাংলাদেশে একাধিক সংবাদমাধ্যম খবর প্রকাশ করে, "ভারত থেকে ফিরছেন না চিন্ময়ের আইনজীবী!" এদিকে, আইনি প্রতিনিধির অভাবেই প্রশ্ন উঠছে— চিন্ময়ের জামিন প্রসঙ্গে কী সিদ্ধান্ত আসবে?
প্রসঙ্গত, বিষয়টি জটিল হয়ে উঠেছে, কারণ জানুয়ারির ২ তারিখে চট্টগ্রাম আদালতে শুনানি নির্ধারিত। রবীন্দ্র ঘোষ এই মামলার পক্ষে আইনগত লড়াই চালাচ্ছিলেন, তবে তাঁকে বারবার হুমকি এবং বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল। বাংলাদেশ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ সত্ত্বেও, দেশীয় আইনজীবীরা চিন্ময়ের হয়ে দাঁড়াতে সাহস পাচ্ছেন না। নভেম্বর মাসে ৫০-৬০ জন আইনজীবীকে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় যুক্ত হওয়ার জন্য বিস্ফোরক আইনে মামলা দায়ের করা হয়, যার ফলে অনেক আইনজীবী খুনের মামলায় ফাঁসানোর হুমকি পান। তবে, পরিস্থিতি এখনও একেবারে অন্ধকার নয়। জানা গিয়েছে, সনাতনী জাগরণ জোট মঞ্চ ২০-২৫ জন আইনজীবী নিয়ে বিকল্প প্যানেল তৈরি করেছে, যাতে প্রয়োজনীয় আইনি সহায়তা নিশ্চিত করা যেতে পারে। তবে, রবীন্দ্র ঘোষের চিকিৎসা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলেও, আপাতত তাঁর শারীরিক অবস্থা কেমন হবে, সে ব্যাপারে স্পষ্ট কোন পূর্বাভাস নেই।
উলেখ্য, চিন্ময়ের জামিনের শুনানি অব্যাহত থাকবে কি না, তা নিয়েও নানা মত প্রকাশ করা হয়েছে। একটি সূত্র দাবি করছে যে, জামিন সংক্রান্ত শুনানির পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি পক্ষের অনেকেই চান, চিন্ময়কে জামিন না দেওয়া হোক, কারণ তারা চট্টগ্রামে আইনজীবী খুনের মামলায় চিন্ময়কে আসামি হিসেবে যুক্ত করতে চায়। এদিকে, গত ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম আদালত চত্বরে সাইফুল ইসলাম আলিফ নামের এক আইনজীবীর মৃত্যু হয়, যা পরবর্তীতে অস্থির পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। সরকার ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর একাংশ এই খুনের মামলায় নতুন করে চিন্ময়ের বিরুদ্ধে মামলা সাজানোর চেষ্টা করছে। সনাতনী মঞ্চের অভিযোগ, জামিন পাওয়ার জন্য চিন্ময়ের বিরুদ্ধে দাঙ্গা ও অস্থিরতা সৃষ্টির পরিকল্পনা থাকতে পারে। বিশেষত জামায়াতে ইসলামী ও অন্যান্য ধর্মীয় রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে আদালত চত্বরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে, আদালত চত্বরে নাগরিকদের উপস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে, যেন পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত না হয়।
বদলে যাচ্ছে শতাব্দী প্রাচীন স্টার থিয়েটারের নাম
এছাড়া, বাংলাদেশ ফিনানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) জানিয়েছে যে, ইসকন ও চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রায় ২৪০ কোটি টাকার লেনদেন সন্দেহজনকভাবে শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে চিন্ময়ের নিজস্ব অ্যাকাউন্টে খরচ হওয়া প্রায় ৪ কোটি টাকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে, গোয়েন্দারা আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগেও তদন্ত শুরু করতে পারে। অতএব, চট্টগ্রামের আদালতে শুনানির দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই চিন্ময়ের জামিন ও ভবিষ্যত নিয়ে অনিশ্চয়তা বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশের আইনজীবীরা এখনও দ্বিধান্বিত, তবে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ও রাজনৈতিক পক্ষগুলোর চাপও বাড়ছে। পরিস্থিতি যদি এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাহলে তা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচিত হতে পারে।