সকলকে চমকে আচমকাই কিম জং উনের শত্রু দেশে জারি হয়েছিল সামরিক আইন (মার্শাল ’ল)৷ লক্ষ্য ছিল উত্তর কোরিয়ায় কমিউনিস্ট শক্তির হুমকি থেকে দেশকে রক্ষা করা এবং রাষ্ট্রবিরোধী উপাদানগুলিকে নির্মূল করা৷ কিন্তু দেশজুড়ে প্রবল বিক্ষোভের মুখে সামরিক আইন নিয়ে পিছু দক্ষিণ কোরিয়া৷ এই আইন লাগু হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তা প্রত্যাবার করে নিলেন প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল৷ (South Korea retracts martial law)।
গত মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রেসিডেন্ট ইউন বলেন, ‘‘উত্তর কোরিয়ার কমিউনিস্ট বাহিনীর হুমকি থেকে দক্ষিণ কোরিয়াকে রক্ষা করতে এবং জনগণের স্বাধীনতা ও শান্তি ধ্বংসকারী রাষ্ট্রবিরোধী শক্তিগুলোকে নির্মূল করার জন্য, আমি জরুরি সামরিক আইন ঘোষণা করছি।’’ এই আইন বাস্তবায়নের দায়িত্ব সঁপেন সে দেশের সেনাপ্রধান জেনারেল পার্ক আন-সু-র হাতে। সামরিক আইন জারির মধ্যে দিয়ে তিনি দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে চেয়েছিলেন৷
আইন জারির পাশাপাশি এদিন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধান বিরোধী দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টিকেও আক্রমণ শানান প্রেসিডেন্ট ইউন৷ তাঁর অভিযোগ, শুধুমাত্র ‘ইমপিচমেন্ট, বিশেষ তদন্ত এবং দলের নেতাদের আইনি কোপ থেকে রক্ষা করার’ উদ্দেশ্যে দেশের শাসনব্যবস্থাকে ‘পঙ্গু’ করে রেখেছে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি।তবে, প্রেসিডেন্ট ইউন সামরিক আইন ঘোষণার পরই দেশজুড়ে শুরু হয় ব্যাপক বিক্ষোভ৷ শুধু বিরোধীরাই নয়, শাসক দলের অনেক নেতাও বিক্ষোভে সামিল হন৷ অ্যাসেম্বলি ভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ বাধে জনতার৷ প্রতিবাদের মুখে পড়ে ছয় ঘণ্টার মধ্যে সামরিক আইন প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হন ইউন। সামরিক আইন নিয়ে ভোটাভুটিতেও দেখা যায়, ৩০০ সদস্যের মধ্যে ১৯০ জনই বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘‘কিছুক্ষণ আগে জাতীয় পরিষদ থেকে জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছিল, এবং আমরা সেই সামরিক বাহিনী প্রত্যাহার করেছি, যা সামরিক আইন কার্যকর করার জন্য মোতায়েন করা হয়েছিল।’’
২০২২ সাল থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পদে রয়েছেন পিপল পাওয়ার পার্টির নেতা ইউন সুক-ইওল। পিপল পাওয়ার পার্টির এই নেতা গত নির্বাচনে মাত্র শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ পয়েন্টের ব্যবধানে বিরোধী দলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী লি জা-মিউংকে পরাজিত করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। দক্ষিণ কোরিয়ায় ১৯৮৭ সালে সরাসরি নির্বাচন শুরু করার পর এটিই ছিল দুই প্রার্থীর অত্যন্ত কম ব্যবধানের নির্বাচনী ফল। বিভিন্ন ধরনের বিতর্ক আর কেলেঙ্কারির জেরে সাম্প্রতিক সময়ে দেশটিতে প্রেসিডেন্ট উন সুক-ইওলের জনপ্রিয়তায় ব্যাপক অবনতি ঘটেছে। তার স্ত্রীর বিরুদ্ধেও বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। শেয়ার বাজারে জালিয়াতি এবং একটি প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে বিলাসবহুল ডিওর কোম্পানির হ্যান্ডব্যাগ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। গত মাসে স্ত্রীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের ঘটনায় জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন ইউন সুক-ইওল। ওই সময় তিনি বলেছিলেন, তার স্ত্রীর আরও ভালো আচরণ করা উচিত। জরুরি ভিত্তিতে প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল সামরিক আইন জারি করার পর দক্ষিণ কোরিয়ায় সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। মঙ্গলবার দেশটির সামরিক আইনবিষয়ক কমান্ডার পার্ক আন-সু এক বিবৃতিতে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, জাতীয় সংসদ, স্থানীয় কাউন্সিল, রাজনৈতিক দল এবং রাজনৈতিক দল সংশ্লিষ্ট সংস্থার পাশাপাশি সমাবেশ ও বিক্ষোভসহ সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দেশের সকল গণমাধ্যম এবং প্রকাশনা সামরিক আইন কমান্ডের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। বিবৃতিতে দক্ষিণ কোরিয়ার এই মার্শাল ল কমান্ডার বলেছেন, উদার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে উৎখাত বা অস্বীকার করার চেষ্টা কিংবা ভুয়া খবরের প্রচার, জনমতের বিকৃতি বা মিথ্যা প্রচারও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।