ভূত চতুর্দশী হল একটি বার্ষিক হিন্দু উৎসব, যা দীপাবলির পাঁচ দিনব্যাপী উৎসবের দ্বিতীয় দিন। এটি হিন্দু পঞ্জিকার কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। পশ্চিম ও দক্ষিণ ভারতে এই তিথিটি নরক চতুর্দশী নামে পরিচিত।
এখানে কালীপুজোর আগের দিনটি ভূত চতুর্দশী হিসাবে পালিত হয়। এমন দিন সম্পর্কে নানান ঘটনা কথিত রয়েছে। অনেকেই মনে করেন, এমন দিনে ১৪ পুরুষের উদ্দেশে জ্বালানো হয় চোদ্দ প্রদীপ। অশুভ শক্তির থেকে মুক্তির জন্যই এমন দিনে চোদ্দ প্রদীপ জ্বালানোর রীতি প্রচলিত। অনেকে আবার মনে করেন, এই দিনে দৈত্যরাজ বলি পৃথিবীতে আসেন পূজা নিতে, তাঁরই সঙ্গে আসে বহু অশুভ শক্তি। তাই এমন দিনে অশুভ শক্তির পরাজয়কে কামনা করে ১৪ প্রদীপ দেওয়া হয়।
চোদ্দ প্রদীপ জ্বালানো ও চোদ্দ শাক খাওয়ার দিন হিসাবে পরিচিত এই ভূত চতুর্দশীর তিথি কখন থেকে শুরু হবে? আগে দেখে নেওয়া যাক, ভূত চতুর্দশীর তিথি।
ভূত চতুর্দশী ২০২৪ তিথি-
বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত মতে পঞ্জিকা অনুসারে বুধবার বাংলা ক্যালেন্ডারের ১৩ কার্তিক পড়ছে ভূত চতুর্দশী। ইংরেজি তারিখ, ৩০ অক্টোবর। সেই দিন বেলা ১ টা ১৭ মিনিট থেকে চতুর্দশী তিথি পড়ছে। চতুর্দশী তিথি শেষ হবে বৃহস্পতিবার, ১৪ কার্তিক। ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, ৩১ অক্টোবর। সেদিন দুপুর ৩ টে ৫৩ মিনিটে।
গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা অনুযায়ী, ১৩ কার্তিক বুধবার অর্খাৎ ৩০ অক্টোবর দুপুর ১২ টা ৫৯ মিনিট, ৪৩ সেকেন্ডে শুরু হচ্ছে ভূত চতুর্দশীর তিথি। চতুর্দশী তিথি শেষ হবে ৩১ অক্টোবর অর্থাৎ ১৪ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার দুপুর ৩ টে ৭ মিনিটে ৪২ সেকেন্ডে।
পুরাণ অনুসারে বলা হয়, ভূত চতুর্দশীর রাতে শিবভক্ত রাজা মহাবলি (দানব রাজা) মানুষের কাছ থেকে পুজো গ্রহণের জন্য পৃথিবীতে নেমে আসেন, সঙ্গে থাকে তার অনুচর ভূতেরা। চতুর্দশী তিথির পূর্ণিমায় চারিদিক অন্ধকার। সেই অন্ধকারে রাজা মহাবলির পরিচারকদের ঘরে প্রবেশ করতে না দেওয়ার জন্য প্রাচীনকালে প্রদীপের আলো জ্বালানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
ভূত চতুষ্টয়’কথার অর্থ ভূত চারটি— ক্ষিতি, অপ , তেজ ও মরুৎ । চার্বাক দর্শনে ব্যোম্ নামক পঞ্চম ভূত স্বীকার করা হয় না । কারণ ব্যোম্ প্রত্যক্ষের বিষয় নয় । ক্ষিতি, অপ , তেজ ও মরুৎ এই চারটি জড়ভূতই জগতের মূল তত্ত্ব । জগৎ এবং জাগতিক বস্তুসমূহ সবই এই চারটি প্রত্যক্ষ গ্রাহ্য জড়ভূত দ্বারা গঠিত — এরূপ মতকেই ভূতচতুষ্টয়বাদ বলে । চার্বাক দর্শনে ভূতচতুষ্টয় দ্বারা কেবল জাগতিক বস্তু যেগুলি অচেতন তারই ব্যাখ্যা করা হয়নি । আপাতভাবে যে বিষয়গুলিকে চেতন বলে আমরা বিশ্বাস করে যেমন— আত্মা, মন ইত্যাদি সেগুলিকে জড়বাদে জড়ভূত চারটি দ্বারাই সৃষ্ট বলে মনে করা হয় । ক্ষিতি প্রভৃতি ভূত চারটি জড় হলেও এদের মিশ্রণের মধ্য দিয়ে যাবতীয় বস্তু এমনকি মানব দেহ , প্রাণী শরীর সবই সৃষ্টি হয়েছে । আবার , এগুলি নিজ নিজ ভূত পরমাণুতে যখন মিশে যায় তখন যাবতীয় বিষয়ের বিনাশ ঘটে । কাজেই , ভূত পরমাণুর সংযােগই সৃষ্টি আর , ভূত পরমাণুর বিয়ােগই ধ্বংস । ভূত চারটি জড় হওয়ার পারস্পরিক মিলনের ক্ষেত্রে ভূত চতুষ্টয়বাদে কোন নিমিত্ত কারণ বা কৰ্ত্তার অস্তিত্ব স্বীকার না করে ভৃতচারটির স্বভাবের কথা বলেছেন । ভূত পরমাণুগুলি স্বভাববশত যান্ত্রিক ভাবে পরস্পরের সাথে সংযােগ ঘটিয়ে সৃষ্টিকার্য সম্পন্ন করে।