আরজি কর-কাণ্ডের পরেও কেন সন্দীপকে তড়িঘড়ি ‘‘পুনর্বাসন’’? উঠছে নানা প্রশ্ন
আরজি কর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের পদত্যাগ পত্র গ্রহণ করল না স্বাস্থ্য ভবন। বরং তাঁকে দেওয়া হল ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষের দায়িত্ব। সেখান থেকে সরলেন অজয় রায় । তাঁকে কোন জায়গায় স্থানান্তরিত করা হল তা নিয়ে সুনিশ্চিত কিছু জানায়নি স্বাস্থ্য ভবন। অপরদিকে আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে অধ্যক্ষের দায়িত্বে আসলেন সুরিতা পাল ৷
আরজি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসক পড়ুয়ার খুন ও ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে প্রথম থেকেই অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবি উঠেছিল । সোশাল মিডিয়া জুড়ে একাধিক পোস্ট ছড়িয়ে পড়েছিল এই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। সেই সব কথা উল্লেখ করে সোমবার নিজের পদত্যাগের কথা জানিয়েছিলেন, আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। স্বাস্থ্য ভবনে গিয়ে নিজের পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছিলেন। সেই পদত্যাগ পত্র জমা দেওয়ার পরেই স্বাস্থ্য ভবনের শুরু হয় বৈঠক। তাঁর পদত্যাগ পত্র গ্রহণ না করা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সেই বৈঠকের পরে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হল স্বাস্থ্য ভবনের তরফে। সেখানে জানিয়ে দেওয়া হল পদত্যাগ নয় বরং অন্য হাসপাতালের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পাচ্ছেন তিনি। অধ্যাপক সন্দীপ ঘোষ এবার থেকে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হসপিটাল এর অধ্যক্ষ। এর আগে স্বাস্থ্য ভবনের তরফে বদলে দেওয়া হয়েছে আরজিকর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের উপাধ্যক্ষকেও। তাকেও বদল করে পাঠানো হয়েছে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে।
বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ বলেন, "আসলে মুখ্যমন্ত্রী এটা ধরেই নিয়েছেন যে উনি এই ঘটনার কুলকিনারা করতে পারবেন না। উনি দোষীকে সাজা দিতে পারবেন না। এরা সবাই দলের লোক। তাই তিনি সিবিআইয়ের কথা বলছেন। আসলে উনি হাত তুলে নিয়েছেন।" অন্যদিকে, বিজেপির নেতা সজল ঘোষ প্রশ্ন তোলেন, "মুখ্যমন্ত্রী এই বিষয়ে এত সক্রিয় কেন ? কেন কামদুনি ঘটনার পরে ওঁর মনে হল না যে এই ঘটনাতেও সিবিআই দরকার ? এই সমস্তটাই ওঁর নাটক। উনি বাংলাদেশ দেখে ভয় পেয়েছেন। আর তা না হলে এমন কোনও ঘটনা ভিতরে আছে সেটাকে ধামাচাপা দিতেই তিনি সিবিআই তদন্তের কথা বলছেন। এখান থেকেই তো সন্দেহ জাগছে যে মুখ্যমন্ত্রী হঠাৎ এতটা পালটে গেলেন কেন ?"
এদিকে সন্দীপের এই নিয়োগ নিয়ে প্রতিবাদ শুরু হয় নতুন করে। মঙ্গলবার সকাল থেকেই প্রতিবাদে তপ্ত হচ্ছে চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ (CNMC)। সেখানেও নয়া প্রিন্সিপালকে দায়িত্ব নিতে দিতে চাইছেন না পড়ুয়ারা। এক সন্দীপ নামেই ফুঁসছে আরজি কর থেকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল।
প্রশাসনিক ভবনের সামনে মঙ্গলবার সকাল থেকে পড়ুয়ারা বসে। এদিকে এই পথ দিয়েই দায়িত্বভার নিতে যেতে হবে অধ্যক্ষকে। যে গেট দিয়ে অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের ঢোকার কথা, সেই গেট সোমবার রাত থেকে তালাবন্ধ।
পড়ুয়ারা বলছেন, আমরা কেউ ওনাকে প্রিন্সিপাল বলে মানব না। কোনওভাবেই মানব না। আরজি কর তো তিন বছর আগে পূর্ব ভারতের বেস্ট মেডিক্যাল কলেজের তকমা পেয়েছিল। আজ তো আরজি করের তকমা জানি। আমরা চাই না সিএনএমসির সেটা হোক। আমাদের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস জড়িয়ে, অনেক ঐতিহ্যের সাক্ষী। সেটা আমরা কালিমালিপ্ত হতে দেব না।”
মেডিক্যাল কলেজের দরজা এবং অধ্যক্ষের দরজায় তালা দিয়ে দেন আন্দোলনরত পড়ুয়ারা ।
সকাল থেকে সিএনএমসির মূল ফটকে বেনিয়াপুকুর থানার পুলিশের ভিড়। কলকাতার এসিপি পদমর্যাদার একজন রয়েছেন। এরইমধ্যে হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান এলাকার বিধায়ক স্বর্ণকমল সাহা যেতেই অশান্ত হয় ক্যাম্পাস। আসেন মন্ত্রী জাভেদ খানও। স্বর্ণকমলবাবু সেখানে পৌঁছতেই ওঠে গো ব্যাক স্লোগান। মহিলা ডাক্তারি পড়ুয়ারা জানান, ওনার মতো অপদার্থ ব্যক্তি হাসপাতালের অধ্যক্ষ হলে আমাদের মা - বাবারা রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবেন না। পালটা স্বর্ণকমলবাবু বলেন, ঘটনার সঙ্গে তো সন্দীপবাবুর কোনও যোগ নেই। তখন পড়ুয়ারা স্পষ্ট করে দেন, উনি মহিলা চিকিৎসককে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।