#Pravati Sangbad Digital Desk:
গত ২৩ এ মার্চ, বৃহস্পতিবার, রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে চলতে থাকা এক মানহানি মামলার রায় দিয়েছে সুরাট কোর্ট। ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল ২০১৯ সালে। ২০১৯ সালে কর্নাটকে লোকসভার ভোটের প্রচারের জন্য যান রাহুল। সেখানেই দেশের প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে একটি কটু মন্তব্য করেন তিনি। যা নিয়ে শোরগোল পড়ে যায়। তিনি বলেন," নীরব মোদী, ললিত মোদী,নরেন্দ্র মোদি- সব চোরদের পদবী মোদী হয় কিভাবে?" তার এই বক্তব্যের পর তীব্র সমালোচনা হয়। এই ঘটনার পরে কাকতালীয়ভাবে বিজেপির আরেক "মোদী" গুজরাটের বিজেপি বিধায়ক পূর্নেশ মোদী মানহানির ফৌজদারি অপরাধের মামলা করেছিলেন। দীর্ঘ দুই বছর সুরাট কোর্টে বিচার চলার পর গতকাল বিচারবিভাগীয় মেজিস্ট্রেট এইচ এইচ বর্মা রায় দেন প্রধানমন্ত্রীর মানহানির দায় এ ২ বছরের কারাদণ্ড হবে রাহুল গান্ধীর। এরপরই তার সংসদীয় অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সেই প্রশ্নের অবসান ঘটিয়ে আজ লোকসভা স্পিকার ওম বিড়লা জানান ভারতীয় সংবিধানের ১০২(১)-ই অনুচ্ছেদ এবং জনপ্রতিনিধিত্ব আইন (১৯৫১)-র ৮ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাহুলের সাংসদ পদ খারিজ করা হল। প্রসঙ্গত, বছর দশেক আগে, ২০১৩ সালে কংগ্রেস জমানাতে মনমোহন সিং সরকারের আমলে, 'কোন রাজনৈতিক নেতার কারাদণ্ড হলেও তাঁর সাংসদ পদ থাকবে' এরকম একটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিল, তবে সেই সময়ে এর তীব্র সমালোচনা করেছিলেন রাহুল গান্ধী ,বলেছিলেন অধ্যাদেশটি ছিঁড়ে ফেলে দিতে। মতের অমিল হওয়ায় তখন সেই অধ্যাদেশটি বাতিল করে দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। তবে অধ্যাদেশটি আজ থাকলে বোধহয় রাহুল গান্ধীরই কাজে দিত ,এমন কথা ভেবেই হয়ত আফসোস করছেন কংগ্রেস নেতারা।
উল্লেখ্য, আইপিএল এর দুর্নীতি মামলায় যুক্ত ললিত মোদী কিংবা দেশ থেকে পলাতক নীরব মোদীর সঙ্গে দেশের প্রধানমন্ত্রী এর তুলনা করেছেন রাহুল গান্ধী এমন অপরাধে বিজেপি তুমুল সমালোচনা শুরু করে ।তবে এই প্রথম নয় আরো অনেক সময় রাহুল গান্ধী গুনিমানি ব্যক্তিদের উদ্দ্যেশে অপমানজনক উক্তি করেছেন, যেগুলি শাস্তিযোগ্য,এমনটাই দাবি করেছে গেরুয়া শিবির।
তবে গত ২০২২ সালের ৭ ই সেপ্টেম্বর রাহুল গান্ধির শুরু করা ' ভারত জড়ো আন্দোলন ' সফল হয়েছিল। ভারতের কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত মোট বারোটি রাজ্যে এই আন্দোলন চালান। ১৫০ দিন ধরে এই আন্দোলন চলেছিল। প্রায় ৪০৮০ কিমি যাত্রা করেছিলেন রাহুল গান্ধী। ২৩ সালের জানুয়ারি মাসে এই যাত্রা শেষ হয়। কেরালার তিরুবন্তপুরাম সহ বিভিন্ন রাজ্যের প্রচুর মানুষ এই যাত্রায় যোগ দিয়েছিল। সরকারের ধর্মীয় গোঁড়ামি, সংবিধানের অপব্যাবহার, রাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। এমনকি দেশে বেকারত্বের হার বাড়ার সাথে সাথে পড়াশোনার হার নিম্নমুখী হওয়া নিয়েও সরকারকে সওয়াল করে রাহুল। ভারতের সংবিধানে যেখানে সকল ধর্ম কে সমান মর্যাদা দেওয়া হয়েছে সেখানে বিজেপি ধর্ম দিয়ে মানুষ ভেদ করছে বলেও দাবি করেন কংগ্রেস নেতা। এর আগে ২০১৯ এ কেরালাতে গিয়ে রাহুল বলেন " মোদী ভারতবাসীর জন্য বিষের মত। দেশের জন্য মোদী সঠিক নির্বাচন নয়।"

তবে, সম্প্রতি লন্ডনে গিয়েছিলেন রাহুল। সেখানে গিয়ে তিনি জানান " ভারতের গণতন্ত্র নষ্ট হচ্ছে ।এর ফলে বিরোধী দলের লোকজন কোনো মন্তব্যই করতে পারছেনা ।" আর এই বক্তব্যই ভস্মে ঘি ঢালার মতো কাজ করে। রাহুলের এই মন্তব্যকে বিদেশের মাটিতে দেশের কুখ্যাতি আখ্যা দিয়েছিল বিজেপি। কেন্দ্রীয় সরকার শিবিরে শোরগোল তিব্র আকার ধারন করে। গত ১৩ই মার্চ বাজেট অধিবেশন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দুই পক্ষের বাকবিতণ্ডাতে এক সপ্তাহ অধিবেশন বন্ধ থাকে। ২০ই মার্চ তা পুনরায় শুরু হলেও বিজেপি শিবির ‘’ রাহুল গান্ধী মাফি মাঙ্গো’’ স্লোগান দিতে থাকে। অধিবেশনের মধ্যে তিব্র ধস্তাধস্তি হওয়ার দরুন ৬ দিনে ১০ বার অধিবেশন স্থগিত হয়। তবে, এই ঘটনায় সমগ্র দেশের কংগ্রেস পার্টি এক হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার থেকেও তাজ্জব ব্যাপার দিল্লির শাসনকর্তা আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরওয়াল ও টুইট করে জানিয়েছেন তিনি রাহুল গান্ধীর পাশে রয়েছেন। বাস্তবে আপ পার্টি ও কংগ্রেস এর সম্পর্ক আদায় - কাঁচকলায়। তবে এই ক্ষেত্রে কেজরিওয়াল জানান ," আমাদের মতের বিভেদ থাকলেও আমি রাহুল গান্ধীর পাশে রয়েছি। বিজেপি ইচ্ছাকৃতভাবে অন্যান্য পার্টির মুখ বন্ধের জন্য এমন ব্যবস্থা নিচ্ছে। আইনকে আমরা সম্মান করলেও এই রায় মেনে নিতে পারছিনা। এক আপ পার্টির নেতা বলেন," রাহুল গান্ধী গান্ধী পরিবারের সন্তান। তাই তার সংসদ পদ চলে গেলেও রাজনীতিতে তার ভূমিকা থেকে যাবে। কিন্তু এখন থেকে তো আমাদের মুখ খোলাই দায় হবে।" তবে এখনও পর্যন্ত তৃণমূল সরকার এই নিয়ে কোনরকম মন্তব্য করেনি । সম্প্রতি দিল্লিতে মোদীর পোস্টার নিয়ে প্রচারের জন্য ছয় জন কে গ্রেফতার ও করা হয়। তাদের মুক্তির দাবিতে মোদীর পোস্টার নিয়ে ' মোদী হাটাও,দেশ বাঁচাও ' আন্দোলন শুরু করে বিরোধীরা। আজ সকালেই রাহুল কে দেখা যায় দিল্লি বিমানবন্দরে ।সবার সাথে হাসিখুশি ভাবেই দেখা করেছেন তিনি । বোন প্রিয়াংকা গান্ধী বড়রা বলেছেন ," আমার ভাই সাহসী ওকে কখনোই এভাব আটকানো যাবেনা।" অবশ্য রাহুল গান্ধী তার পরিবারের শিক্ষা কেই মাথায় রাখতে চলেন। তিনি মহাত্মা গান্ধীর অনুরাগী ।তাই অহিংসা ও সততার সাথেই সত্যের জয় চান তিনি । তবে তার সংসদ পদ খারিজের দাবি সরাসরি তোলেনি বিজেপি। এর পেছনে কিছু রাজনৈতিক কারণ রয়েছে বলে মনে করছে রাজনীতি বিশ্লেষকরা। তারা মনে করছেন এই ঘটনায় রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজ হলে মানুষের কাছে এটি সহানুভূতি আদায় করতে পারে। কারণ যেকোনো বিরোধী দলেরই নিরব মোদীর কিংবা ললিত মোদীর প্রসঙ্গ তোলা ভুল কিছু নয় ।ফলে বিজেপি মানুষের গণতন্ত্রে হস্তক্ষেপ করছে এমন টাও মনে হতে পারে সাধারণ মানুষদের। আবার এটি নিয়ে বড়ো বিভেদ করতে পারে বিজেপি।' মোদী ' পদবীর সমস্ত মানুষজন এমন কি পিছিয়ে পড়া ' মোদী ' পদবীর ওবিসি মানুষদের অপমান করেছে কংগ্রেস ,এমন দাবি ও করতে পারে বিজেপি। তবে কারন যাইহোক না কেন, কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তোলা আদানী ইস্যু রাহুল গান্ধির এই মন্তব্যের জেরে বেশ খানিকটা ধাক্কা খেল তা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে।