Flash News
    No Flash News Today..!!
Monday, November 10, 2025

"তুমি কোন হরিদাস পাল হে ?" / "কে তুমি হরিদাস পাল?" – এটা কী শুধুই বাঙালির প্রবাদ বাক্য ?

banner

journalist Name : প্রিয়শ্রী

#Pravati Sangbad Digital Desk :

 "তুমি কোন হরিদাস পাল হে ?" / "কে তুমি হরিদাস পাল?" – এটা কী শুধুই বাঙালির প্রবাদ বাক্য ? 

সোমবার, বিধানসভায় মণিপুর নিয়ে নিন্দা প্রস্তাবের পক্ষে বলতে গিয়ে বিজেপি বিধায়কদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা যায়, "এখানে যাঁরা আইন দেখাচ্ছেন, তাঁরা হরিদাস পাল। আইনের কিছু জানেন না। হাঁসের মতন প্যাক প্যাক করে, ঘেউ ঘেউ করে।" 

বিধানসভায় 'হরিদাস পাল' এই শব্দ বলা হলো ! - রাজনৈতিক গোল বেঁধেছে তা নিয়েই। মঙ্গলবার তো শাসক-বিরোধী দু'পক্ষের প্রবল বিতর্ক তৈরি হয়েছে 'হরিদাস পাল' কথাটা অসংসদীয় কি না, সেই ব্যাপারে। ২০১৩-র মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের অধিবেশনে যেমন এক মহিলা সদস্য 'চুদুরবুদুর' কথাটা বললে তুমুল বিতর্ক তৈরি হয়েছিল, এ বার বাংলার বিধানসভাতেও তেমন হরিদাস পাল নিয়ে অতটা না-হলেও ভালো মতো চর্চা শুরু হয়েছে। বর্ষীয়ান তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায় উঠে দাঁড়িয়ে অনুরোধ করেন, 'হরিদাস পাল' শব্দবন্ধটি কোনও অসংসদীয় শব্দ কি না, তা নিয়ে বিধানসভায় যাতে আলোচনা হয়। তাপসবাবুর বক্তব্যে শাসক ও বিরোধী উভয় পক্ষের বিধায়করাই টেবিল বাজিয়ে সমর্থন জানান। 

আসলে ব্যঙ্গ্য বিদ্রূপ করা হলেও, নামটা যেন মাহাত্ম্যেরই পরিচয়বাহক। "কোথাকার হরিদাস পাল হে তুমি যে তোমার কথা শুনতে হবে"... এই কথাতেই বোঝায় যে, "হরিদাস পাল" হলে তোমার কথা শুনতাম...তুমি হরিদাস পালও নও, তোমার কথা শুনতে হবে তার কোনো মানেও নেই।


হরিদাস পাল হল 'পাল' উপাধির একটি বাঙালি হিন্দু ব্যক্তির নাম। কথিত আছে, এই নামের ব্যক্তি একসময় বাংলায় ধনী, মহানুভব এবং উচ্চ মহিমায় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অন্যতম ছিলেন। বিপুল বিত্তশালী হয়েও সৎ ও দয়াবান ব্যক্তি হিসাবে মহৎ চিন্তাভাবনা ও কর্মের জন্য সমাজে অত্যন্ত সমাদর ও গরিমা অর্জনকারী ব্যক্তিকে হরিদাস পাল উল্লেখ করা হত। বর্তমানে বাংলা ভাষায় নামটি বহুল প্রচলিত 'প্রবাদ কথন' বা বাংলা বাগধারায় পরিণত। কোন অযোগ্য ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করতে, ঈর্ষা বশত হেয় প্রতিপন্ন করতে, বস্তুতপক্ষে তুচ্ছতাচ্ছিল্যের সঙ্গে অবজ্ঞাসূচক বাক্যবন্ধে শ্লেষাত্মক ধ্বনিতে ব্যক্ত করতে প্রয়োগ হয় এভাবে - "তুমি কোন হরিদাস পাল হে ?" কিংবা দ্বিতীয় কোন ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করতে- "কে তুমি হরিদাস পাল?" নামক এক সম্মোধনে। এর মধ্যে সামনের ব্যক্তিকে তুচ্ছ করলেও, কিন্তু সর্বজন শ্রদ্ধেয় সেই "হরিদাস পাল" কে তার অসামান্য ক্ষমতার প্রতি অলক্ষ্যে প্রকৃতপক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদনই করা হয়। বাংলায় গত পাঁচ-ছয় দশক ধরে কোন মানুষকে ইচ্ছাকৃতভাবে অযোগ্য ও তুচ্ছ করতে দ্বিধাহীনভাবে বাঙালি ব্যবহার করছে "হরিদাস পাল " নামটিকে। আর ঠিক সেকারণে পাল উপাধিধারী কোন পরিবারে নবজাতকের নাম "হরিদাস" রাখাই হয় না।  #[ সুত্রঃ - উইকিপিডিয়া]

জানা যায়, ১৮৭৬ সালে পশ্চিমবঙ্গের রিষড়ার এক অতি দরিদ্র গন্ধবণিক পরিবারে হরিদাস পালের জন্ম। তার পিতা নিতাইচরণ পাল। পিতার মৃত্যুর পর জীবিকার সন্ধানে মাত্র ১৬ বছর বয়সে হরিদাস ১৮৯২ সালে কলকাতায় এক সোনার দোকানে সামান্য পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কাজ শুরু করেন । ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে হরিদাসের কলকাতা নিবাসী একমাত্র ধনী নিঃসন্তান মামা মারা যাওয়ায়- হরিদাস উত্তরাধিকারসূত্রে মামার সব সম্পত্তি মালিক হয়ে রাতারাতি ধনী হয়ে যান।তিনি বড়বাজারে কাঁচ ও লণ্ঠনের ব্যবসা শুরু করেন ।অত্যন্ত পরিশ্রমী, সৎ ও বুদ্ধিমান হরিদাস কয়েক বছরের মধ্যে তার ব্যবসা অনেক বাড়িয়ে তোলেন।


এক দশকের মধ্যে তার ব্যবসা কলকাতার নানা জায়গায় ও গৌহাটিতে ছড়িয়ে পড়ে ।হরিদাস অত্যন্ত সৎ ও দয়ালু ছিলেন। বিপুল অর্থ তাকে কলকাতার বাবু সমাজে স্থান করে দেয়।তাঁর দান ধ্যান ও পরোপকারের জন্য জনসাধারন তাকে ভালোবাসতো। দাতা হরিদাসের উদার মনোভাব, মার্জিত ব্যবহার, সহানুভূতিশীল ব্যবহারে তার সুনাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে । সাধারণের কল্যাণে তিনি নানা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন ।সমাজে তিনি অত্যন্ত উঁচু সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত হন । প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পান। পটুয়াতলা ও বেনিয়াটোলা অঞ্চলে বেশ কিছু বাড়ি নির্মাণ করেন। যা পরবর্তীতে চলে যায় দানের খাতায়। ১৯৩৩ সালে মাত্র ৫৭ বছর বয়সে হরিদাস কিডনির অসুখে মারা যান ।১৯৬৫ সালে কলকাতা কর্পোরেশন তাঁর সম্মানার্থে কলেজ স্ট্রীটে একটি রাস্তার নাম রাখেন “হরিদাস পাল লেন ” ।

বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিট আর মহাত্মা গান্ধী রোড দুটিকে সংযোগকারী রাস্তা ছিল কলেজ লেন। ১৯৫৬ সালের ১ জুন তাঁর স্মৃতিতে কলেজ লেনের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় হরিদাস পাল লেন। আজও গান্ধী রোড ও হরিদাস পাল লেনের দক্ষিণ পশ্চিম কোণে তাঁর বাড়িটি আপন মহিমায় দাঁড়িয়ে। আর তিনি অমর হয়ে আছেন বাঙালির প্রবাদে।

Related News