আগ্রাসী চীনের দাবি অরুণাচল তাদেরই :

banner

#Pravati Sangbad Desk :

প্রথম ভারত-চীন যুদ্ধ ভারত ও চীনের মধ্যে ১৯৬২ সালে সংঘটিত একটি যুদ্ধ। সীমানা নিয়ে বিরোধ থেকে এই যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। যুদ্ধে চীনের কাছে ভারত পরাজিত হয়। চীন তিব্বত দখল করার পর ভারতের বর্তমান অরুণাচল প্রদেশ ও আকসাই চীনকে চীনের অন্তর্ভুক্ত এলাকা বলে দাবী করে, এভাবে যে সীমান্ত সমস্যার শুরু হয় তা শেষ পর্যন্ত যুদ্ধের সূচনা করে। যুদ্ধে চীনজয়ী হয়ে একতরফা যুদ্ধবিরতি জারি করে, আকসাই চীন দখলে রাখে কিন্তু অরুণাচল প্রদেশ ফিরিয়ে দেয়, যুদ্ধের পর ভারত সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। ভারতের শান্তিবাদী বিদেশনীতিও কিছু পরিমাণে পরিবর্তিত হয়। যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্য ভারতকে সমর্থন করে, অন্যদিকে পাকিস্তান চীনের সঙ্গে মিত্রতা বাড়াতে সচেষ্ট হয় |
চীন এবং ভারতের সীমারেখা যা নেপাল, সিক্কিম , অরুণাচল প্রদেশ এবং ভুটান দ্বারা তিন ভাগে বিভক্ত। এই সীমার দৈর্ঘ্য মায়ানমার থেকে ওদিকে পাকিস্তান পর্যন্ত। এই সীমারেখায় কিছু অমীমাংসিত অঞ্চল রয়েছে-- পশ্চিমে আকসাই চীন, যা সুইজারল্যান্ড এর সমান এক অঞ্চল এবং এখানে চীনের সিয়াংকিং এবং তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের সদর রয়েছে (তিব্বত ১৯৬৫ সালে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের মর্যাদা লাভ করে), পূর্বে ভুটান এবং মায়ানমার এবং মধ্যে অরুণাচল প্রদেশ এর একাংশ। দুটি অঞ্চলই চীন ১৯৬২ সালে দখল করেছিল। অরুণাচল প্রদেশ এর পশ্চিম সিয়াং জেলার একাংশ মেচুকা উপত্যকা দখল করেছিল।
যুদ্ধ অধিকাংশ সময়েই অতি উচ্চতায় অবস্থিত স্থানে সংঘটিত হয়েছিল। আক্সাই চিন ৫,০০০ মিটার উচ্চতায় এক সল্ট প্লেটের মরুভূমি। অরুণাচল প্রদেশে ৭০০০ মিটারেরও অধিক উচ্চতায় কয়েকটি শৃংগ আছে। চীনা সেনারা অঞ্চলটির এক বৃহৎ স্থান দখল করে নিয়েছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ইতালীয় ক্যাম্পেইনের মতো এই যুদ্ধে উভয় পক্ষেরই বহু সৈনিক শত্রুর আক্রমণের পরিবর্তে পরিবেশের প্রতিকূলতার জন্যে মৃত্যুমুখে পতিত হয়
যুদ্ধের মূল কারণ ছিল আকসাই চিন এবং অরুণাচলের সার্বভৌমত্ব নিয়ে পারস্পরিক বিবাদ। ভারতের কাশ্মীর অংশের দাবী করা এবং চীনের ছিঞ্ছিয়াঙ অংশের দাবী করা আকসাই চিনে মধ্যে তিব্বত এবং ছিঞ্ছিয়াং কে সংযোগীকারী একটি পথ আছে। চীন এই পথ নির্মাণ করার প্রয়াস চালালে যুদ্ধের আরম্ভ হয় বলে মনে করা হয়।
পুরোনো ইতিহাসে অরুণাচল তিব্বতের অংশ ছিল। এখন অরুণাচল সম্পূর্ণই ভারতের নিয়ন্ত্রণে। স্বাভাবিকভাবে ভারতের তরফ থেকে অরুণাচল নিয়ে কোনো বিতর্কই পাত্তা দেওয়া হয় না। অথচ চীনের স্কাই ম্যাপের মানচিত্রে অরুণাচলকে তাদের দেখানো হয়। স্কাই ম্যাপ দেশটির ডিজিটাল মানচিত্র বানায়। তারা অরুণাচলকে বলে ‘লোয়ার তিব্বত’। কখনো কখনো ‘দক্ষিণ তিব্বত’। চীনের মতে, একসময় দালাই লামারাই লোয়ার তিব্বত শাসন করতেন। যেহেতু তিব্বত এখন চীনের হানদের নিয়ন্ত্রণে, সুতরাং অরুণাচলেরও মালিক তারা।
এই অঞ্চলে ব্রিটিশদের আসার আগে তিব্বত একরূপ স্বাধীনই ছিল। ১৯০৩ সালে লর্ড কার্জন তিব্বতে সৈন্যদল পাঠিয়েছিলেন বলে সাক্ষ্য মেলে। প্রায় এক হাজার তিব্বতি প্রতিরোধকারীকে হত্যা, কিছু সুযোগ-সুবিধা এবং আনুগত্য আদায় করে পরের বছর সেই অভিযান শেষ হয়। রাশিয়া ও নিজেদের মধ্যে একটা অনুগত প্রাচীর হিসেবে তিব্বতকে দেখতে চাইছিল ভারতের তখনকার ঔপনিবেশিক শক্তি। ১৯১০ সালে চীনের কুইং রাজবংশের দখলদারির শিকার হয় তিব্বত। ১৯১২-১৩ সালের দিকে কুইং বংশের পতনের সুযোগ নিয়ে তিব্বত স্বাধীনতা ঘোষণা করে। এ সময় থেকে এই অঞ্চলের সীমানা বিতর্ক ও বিরোধের শুরু। ভারতের ঔপনিবেশিক শাসকেরা ৮৯০ কিলোমিটার লম্বা ‘ম্যাকমোহন লাইন’কে তিব্বতের সঙ্গে সীমানা হিসেবে ঠিক করে। চীনের প্রতিবাদ সত্ত্বেও তিব্বত ১৯১৪ সালের শিমলা কনভেনশনের মাধ্যমে এটা মেনে নেয়। ম্যাকমোহন লাইনের দক্ষিণে ছিল অরুণাচল। এই লাইনকে সীমান্ত মানলে অরুণাচলের ভারতভুক্তি ন্যায্যতা পায়। কিন্তু শিমলা কনভেনশনে ম্যাকমোহনের পাথর দিয়ে টানা সীমান্তকে মেনে আসেনি চীন। তাদের প্রতিনিধি ইভান চেন কনভেনশনের সিদ্ধান্তে শেষ পর্যন্ত স্বাক্ষর করেননি। তিব্বতকে স্বাধীন একটা পক্ষ হিসেবেও মানত না তখন চীন। তিব্বতও সে সময় বলে রেখেছিল, ‘চীন মেনে নিলেই কেবল লাইনটি কার্যকর হবে’। ইতিমধ্যে ওই ‘লাইন’ ধরেই ১৯৩৭ থেকে ভারতীয় মানচিত্র তৈরি হতে থাকে। এই মানচিত্রের জোরেই ভারত অরুণাচলকে নিজের বলছে।
ভারতের ঔপনিবেশিক শাসকেরা ম্যাকমোহন লাইনকে সীমান্ত ধরে অরুণাচলকে আসামভুক্ত করলেও এর ভুটান–সংলগ্ন তাওয়াং এলাকাটি তিব্বতিদের শাসনেই চলতে থাকে। আসামের গভর্নর তাতে আপত্তি তোলেননি কখনো। বৃহত্তর আসাম তখন ‘ফ্রন্টিয়ার এজেন্সি’ নামে পরিচিত ছিল। এর মাঝেই ১৯৪৭ সালে তিব্বতের দালাই লামা (যিনি এখনো বেঁচে) অরুণাচলের আরও কিছু এলাকা দাবি করে ‘ফ্রন্টিয়ার এজেন্সি’-এর কাছে চিঠি লেখেন। এর অর্থ দাঁড়ায় তাওয়াং ছাড়াও অরুণাচলের আরও কিছু এলাকা তিব্বত নিজের মনে করত। এর মধ্যেই ১৯৫১ সালে চীন তিব্বতের দখল নেয়। এই উত্তেজনার মধ্যে ভারত তাওয়াং দখল করে নেয়। অর্থাৎ পুরো অরুণাচল তাদের নিয়ন্ত্রণে আসে।

এর পরের ইতিহাসের বিবরণ না দিলেও চলে। ব্রিটিশ সূত্রে ভারত অরুণাচল নিয়ন্ত্রণ করছে—এই জনপদের সঙ্গে মূল ভারতের কোনোই সাংস্কৃতিক যোগসূত্র ছিল না। একইভাবে চীনও তিব্বতের মালিক ১৯৫১ সালের দখলসূত্রে। দখলদারির আগে মূল চীনের হানদের সঙ্গে তিব্বতের সাংস্কৃতিক যোগসূত্র ছিল সামান্যই।
ইংরেজরা চলে যাওয়ার পর ভারতের অধীনে অরুণাচলের ইতিমধ্যে ৭৩ বছর পেরিয়েছে। এখানকার জনসংখ্যার বড় অংশ স্থানীয় বিভিন্ন আদিবাসী। ১৪ লাখ জনসংখ্যার প্রায় ৭০ ভাগ তারা। তিব্বতি আছেন ১০ ভাগ। বাকিরা আসাম ও নাগাল্যান্ড থেকে যাওয়া অভিবাসী। ধর্মবিশ্বাসে হিন্দুরা সংখ্যালঘু—২৯ ভাগ। বাকিদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রকৃতি পূজারি আদি ধর্মের মানুষ—যাদের একাংশ খ্রিষ্টান হচ্ছেন এখন। প্রায় ১৫ ভাগ বৌদ্ধ আছে সেখানে। ভাষা আছে ৫০টির মতো। হিন্দিভাষী মাত্র ৭ ভাগ।
ভাষা, বিশ্বাস ও জাতিগত পরিচয়ে অরুণাচলের বৈচিত্র্য চীন-ভারত উভয়ের জন্য অসুবিধাজনক। জনপদটি যে ঐতিহাসিকভাবে তাদের, এমন দাবির সাংস্কৃতিক ভিত্তি খুঁজে পাওয়া উভয়ের জন্য কঠিন। সে রকম দাবি কিছুটা করতে পারে তিব্বতের লাসা। অরুণাচলের মুখ্যমন্ত্রী প্রেমা খান্ডুও তাঁর রাজ্যের সঙ্গে চীনের সীমান্তকে নিয়মিত ‘ভারত-তিব্বত সীমান্ত’ বলে উল্লেখ করেন। স্পষ্টত, এটা চীনের জন্য অসহনীয় এক আক্রমণ। প্রেমা খান্ডু অরুণাচলে বিজেপির সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ফলে তাঁর কথার দায় ক্ষমতাসীন বিজেপিকে না নিয়ে উপায় নেই।
১৯৬২-এর চীন-ভারত যুদ্ধের পর গত ১৫ জুনের লাদাখকাণ্ডের আগে পর্যন্ত উভয় দেশের মধ্যে বড় সংঘর্ষ হয়েছে তিনটি। এর দুটি হয়েছে অরুণাচল সীমান্তে। ১৯৭৫ সালে আসাম রাইফেলসের চারজন সৈন্যকে পিপলস লিবারেশন আর্মি হত্যা করে প্রদেশটির পশ্চিমের জেলা তাওয়াংয়ে। একই জেলায় ১৯৮৬ সালের আগস্টে আরেক দফা উত্তেজনা বেধেছিল। এসব সংঘর্ষকে ভারত-চীন প্রকাশ্যে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবেই দেখিয়েছে। অরুণাচলের মালিকানার দাবিও পরস্পরের বক্তৃতা-বিবৃতিতে সীমাবদ্ধ ছিল। লাদাখ অধ্যায়ের পর পরিস্থিতি আমূল পাল্টে গেছে।
অমিত শাহ যখন অরুণাচল যান, চীন প্রবল আপত্তি তোলে। ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরকে তারা ‘সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন’ হিসেবে উল্লেখ করে। বিবৃতির এই ভাষা বলছে, যেকোনো সময় চীন এই অঞ্চল নিয়ে আক্রমণাত্মক কূটনীতিতে যেতে পারে। অরুণাচল থেকে নির্বাচিত লোকসভার এমপি তাপির গাও’ও তা–ই মনে করেন। তিনি ওই অঞ্চলের অঞ্জ জেলায় চীনের সৈন্যদের চলাচল এবং বিভিন্ন অবকাঠামো তৈরির কথা বলছেন প্রায়ই। দেশের নেতৃবৃন্দকে লিখিতও জানিয়েছেন বিষয়টি। ভারতীয় রক্ষীরা তাঁর কথা সত্য নয় বললেও গাওয়ের দাবি অসত্যও নয়। এ বছর এপ্রিলে অরুণাচলের ভেতর থেকে চীনের সৈনিকেরা বেশ কয়েকজন নাগরিককে ধরে নিয়ে গিয়েছিল, যাদের ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা পরে বৈঠক করে ছাড়িয়েছে। চীনের পক্ষ থেকে সীমান্ত লঙ্ঘন ঘটেছে বলেই এমন ঘটতে পারল।
তাওয়ের বিবরণ থেকে জানা যায়, অরুণাচলকে ঘিরে চীন প্রচুর অবকাঠামো বানাচ্ছে। কেবল রাজ্যটির পশ্চিমে নয়, সর্বপূর্বের অঞ্জ জেলায় এবং সর্বোত্তরের আপার-শুভনশ্রীতেও তৈরি হচ্ছে অনেক রাস্তাঘাট-ব্রিজ। অর্থাৎ কৌশলগতভাবে চীন অরুণাচলে পূর্ব-উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে চাপ তৈরি করছে। আপার-শুভনশ্রীর ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার ভেতরেও চীনের সৈনিকদের দেখা যায় বলে স্থানীয় আদিবাসীরা মাঝেমধ্যেই সাংবাদিকদের জানায়। এমপি গাওয়ের ভাষ্যমতে, আপার–শুভনশ্রীর নতুন মাজা এলাকায় একসময় ভারতীয় একটা সীমান্তচৌকি ছিল। ওই পুরো এলাকাটি এখন চীনের নিয়ন্ত্রণে।
এসবের বাইরে চীন তিব্বতে অরুণাচলের গা ঘেঁষে লাসা থেকে লিনজি পর্যন্ত প্রায় ৪৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ রেললাইন বসাচ্ছে। এই রেললাইন ১২০টি ব্রিজ এবং ৪৭টি টানেলের ভেতর দিয়ে যাবে। নিজেদের সীমান্ত লাগোয়া জনপদে চীনের উচ্চাভিলাষী এসব প্রকল্প স্বভাবত ভারতকে উদ্বিগ্ন করে। তবে চীনের জন্য অরুণাচল সীমান্ত থেকে নিজেকে গুটিয়ে আনা প্রায় অসম্ভব। সীমান্তসংলগ্ন লুনজি কাউন্টিতে ৫৮ বিলিয়ন ডলার মূল্যের মূল্যবান খনিজ রয়েছে। সেখানে চীন এরই মধ্যে মাইনিংও শুরু করেছে।

অরুণাচল নিয়ে ভারতের প্রধান সমস্যা হলো চীন ইঙ্গিত দিচ্ছে ম্যাকমোহন লাইন মানে না তারা। চীনের কথা বেশ সোজাসাপ্টা। লাসার লামারা মেনে নিলেও তারা কখনো ম্যাকমোহন লাইন নিয়ে ব্রিটিশদের সম্মতির কথা জানায়নি। এ অবস্থায় অরুণাচল বাঁচাতে ভারতের জন্য বিকল্প থাকে একটাই। বিশ্বের নতুন সামরিক পরাশক্তি চীনের গরম নিশ্বাসের মুখে ভারতকে ব্রিটিশ সূত্রে পাওয়া এলাকাটি রক্ষায় ভরসা করতে হচ্ছে মূলত অস্ত্রপাতি ও সৈন্যদের ওপর। সীমান্তের এপারে অবকাঠামো গড়ছে তারাও। আসাম ও অরুণাচল সীমান্তে দেশটির সবচেয়ে দীর্ঘ সেতু এমনভাবে বানানো হয়েছে, যাতে সেখান দিয়ে ৬০ টন ওজনের ‘অর্জুন’ ও ‘টি-৭২’ ট্যাংক যেতে পারে। নয় কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুর বিপুল বিনিয়োগ যে সীমান্ত পরিস্থিতি মাথায় রেখে তৈরি হয়েছে, তা বোঝা কঠিন নয়। কিন্তু যাঁর নামে সেতুটির নামকরণ করা হয়েছে সেই ভূপেন হাজারিকা যুদ্ধ নয়, বরং শান্তির কথাই বলেছেন আজীবন গানে গানে। তবে আপাতত শান্তির সুযোগ কমে যাচ্ছে। লাদাখের পর প্রায় সব ভারতীয় প্রচারমাধ্যমে চীনবিরোধী জাতীয়তাবাদী রণহুংকার প্রবল এক মাত্রা পেয়েছে। পুরো পরিস্থিতি আলাপ-আলোচনার সংস্কৃতির জোর কমিয়ে দিয়েছে। লাদাখে সন্তানদের একতরফা মরতে দেখে ভারতীয়রা যে গভীর দুঃখ পেয়েছে, তার প্রবল চাপ তৈরি করেছে চীন-ভারত সব ফ্রন্টে। বিশেষ করে অরুণাচলে।
রাত পোহালেই নতুন বছর। তার আগেই নতুন করে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ল ভারত ও চিন। বেশ কিছুদিন ধরেই লাদাখ নিয়ে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তাপের আবহ বর্তমান। তার মধ্যেই অরুণাচল প্রদেশের ১৫ টি জায়গার সরকারিভাবে নতুন নামকরণ করলো চিনা প্রশাসন। চিনের অসামরিক বিষয়ক মন্ত্রকের তরফে, বৃহস্পতিবার এই নামকরণ করা হয়েছে। এমনকি সংশ্লিষ্ট জায়গাগুলিকে চিনের মানচিত্রের অন্দরে দেখানো হয়েছে।
স্বাভাবিকভাবেই এই দাবির তীব্র প্রতিক্রিয়া এসেছে নয়া দিল্লির তরফে। বিদেশমন্ত্রক জানিয়েছে, বেজিংয়ের এই ধরনের দাবিতে কিছুই যায় আসে না। অরুণাচল প্রদেশ ভারতের ‘অবিচ্ছেদ্য’ অঙ্গ। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী জানিয়েছেন, “ভারতীয় ভূখণ্ডকে নিজেদের বলে দাবি করা চিনের তরফে এই প্রথম নয়। ২০১৭ সালেও একই কায়দায় অরুণাচল প্রদেশের বেশ কিছু অংশের নামকরণ করেছিল বেজিং। সবসময়ের মতোই অরুণাচল প্রদেশ দেশের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। বিভিন্ন রকম নামকরণ করে বাস্তবকে বদলানো সম্ভব নয়।”
দীর্ঘদিন ধরেই অরুণাচল প্রদেশকে দক্ষিণ তিব্বতের অংশ হিসেবে দাবি করে এসেছে চিন। ২০১৭ সালেও অরুণাচল প্রদেশের নতুন করে নামকরণ করেছিল চিন। সেই সময় রাজ্যের ছটি জায়গার নামকরণ করা হয়েছিল। দলাই লামার অরুণাচল প্রদেশ সফরের পর প্রতিশোধ চরিতার্থ করতেই ওই পদক্ষেপ নিয়েছিল বেজিং।
নতুন বছরের শুরু থেকেই নতুন সীমান্ত নীতি লাগু করতে চলেছে চিন। তার ঠিক আগেই এই ধরনের নামকরণ দিল্লিকে চিন্তায় ফেলেছে। অক্টোবর মাসেই নয়া সীমান্ত নীতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল ভারত। ভারতের তরফে জানানো হয়েছিল এই ধরনের একতরফা সিদ্ধান্ত দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে পারে।
উল্লেখ্য, লাদাখ নিয়ে দুই দেশের মধ্যেই বিগত কয়েক বছর ধরে উত্তেজনা চলছে। এমন গালোয়ান ভ্যালিতে দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল। সংঘর্ষে দুই পক্ষেরই বেশ কিছু সেনা প্রাণ হারিয়েছিলেন। সম্প্রতি, লাদাখ ইস্যুকে কেন্দ্র করে চীনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির কথা স্বীকার করে নিয়েছিলেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। অরুনাচল প্রদেশ নিয়ে চিনের এই নতুন দাবি দু’দেশের সম্পর্কের ওপর কতটা প্রভাব ফেলে সেটাই এখন দেখার। 

#Source: online/Digital/Social Media News # Representative Image

Journalist Name : Sayantika Biswas

Related News