Flash news
    No Flash News Today..!!
Saturday, May 11, 2024

যুদ্ধের নাটক মূকাভিনয়

banner

#Kolkata:

সৃষ্টির প্রারম্ভ থেকেই মূকাভিনয়ের উৎপত্তি। কারণ আদিমকালে মানুষ আর কোন ভাষা ছিল না। হয়তো শব্দ উচ্চারণ করতে পারতো কিন্তু তা বাক্যে বা ভাষায় পরিণত হতো না। কিন্তু মনের ভাব প্রকাশের জন্য তারা বিভিন্ন উপায় বার করেছিল। শারীরিক বিভিন্ন অঙ্গ ভঙ্গি করে মনের ভাব প্রকাশ করত। নানা মানসিক ভাবাবেগ যেমন ভয়, আনন্দ, ঘৃণা, উত্তেজনা, রাগ, যন্ত্রণা, উল্লাস প্রভৃতি চোখের মাধ্যমেও হাত নেড়ে প্রকাশ করত। এই ভাষা হল "মূক" ভাষা। 

মূক ভাষার প্রতিশব্দ হলো "Gesture" যা ল্যাটিন "Gestus" থেকে এসেছে। "Gestus" হলো " To more or to act. Convay of feeling or a mimitic expressing through the action of head and eyes." এই হল জেসচার ল্যাঙ্গুয়েজের সংজ্ঞা এবং সম্ভবত ইহা প্রাচীনতম মূকাভিনয় কে বোঝায়। মাইম (Mime) একটি ফরাসি শব্দ। এই মাইমের সাথেই "Gesture Language" কে ধীরেধীরে মডিফাই করে পারফর্মিং আর্ট রূপে গড়ে তোলা হয় যা পরবর্তীকালে খ্রিস্টীয় সপ্তম অষ্টম শতকে "যুদ্ধের নাটক" নামে এক মূকাভিনয়ের জন্ম দিয়েছিল এবং অভিনয়ের আভাস পাওয়া যায় দক্ষিণ ভারতের কথাকলি নৃত্যের মধ্যেও। অর্থাৎ মাইম আদপে তিন হাজার বছরের পুরনো হলেও আধুনিক মাইম বেশি দিনের নয়।


মূকাভিনয় আদিমকালের হলেও একক মূকাভিনয় আধুনিককালের। শুধু তাই নয় চলচ্চিত্রের আবির্ভাব কালেও মূকাভিনয় ছিল একমাত্র সম্বল। আইনস্টাইনের "ব্যাটেলশিপ পটেমকিন”, "অক্টোবর" কিংবা "স্ট্রাইক" অবিস্মরনীয় নির্বাক সৃষ্টি। আর চলচ্চিত্রজগতে নির্বাক কালের অন্যতম মহৎ শিল্পী চার্লি চ্যাপলিন যিনি নীরব ভাষায় হাসিয়েছেন বা কখনো কাঁদিয়ে আমাদের ভরিয়ে দিয়েছেন। 

শুধুমাত্র পারফর্মিং আর্ট রূপেই মূকাভিনয়ের ক্ষেত্রটি সীমিত নয় বরং সভ্যতার বিকাশের সাথে সাথে মানুষকে আনন্দ দেওয়ার পাশাপাশি প্রতিবাদী মুখ হিসেবেও পরিচিত এই মূকাভিনয়। চলচ্চিত্রকে যেমন গণমাধ্যম রূপে কাজ করে মূকাভিনয় তেমন গণমাধ্যম রূপে কাজ করে। শুধু তফাত একটি সবাক আরেকটি নির্বাক। প্রতিবাদী কন্ঠস্বর কে দমন করা গেলেও নির্বাক কণ্ঠস্বরকে দমন করা যায় না। প্রতিবাদী মূকাভিনয় এই জন্য স্বতন্ত্র। 


প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায় ফরাসি বিপ্লবের পটভূমি। ফরাসি বিপ্লব কালে যখন সাধারন মানুষের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল তখন মূকাভিনয়ের প্রচলন হয়েছিল খুব বেশি। কারণ মুখের কথা বন্ধ করা গেলেও মূকাভিনয় বন্ধ করা যায়নি। এই মূকাভিনয়ের মাধ্যমে গ্রামে গঞ্জে শহরে ফরাসি বিপ্লবকে জ্বালিয়ে রাখা হয়েছিল। বিপ্লবী ফরাসি জনগণ এই মাইমের মাধ্যমে বিক্ষুব্ধ ও অনুপ্রাণিত হয়ে ফরাসি বিপ্লবকে সাফল্যের পথে নিয়ে গেছিল।


মূকাভিনয় সম্পর্কে বলতে গেলে মূলত কয়েকটি বিষয়ে আলোচনা করা জরুরি। পোশাক, মেকআপ, মঞ্চ, আলো, মিউজিক, শারীরবিজ্ঞান ও অভিনয়শিল্প। অন্যান্য শিল্পের তুলনায় মূকাভিনয় স্বয়ংসম্পূর্ণ ও স্বতন্ত্র। নৃত্যশিল্প এ যেমন মুদ্রার ব্যবহারের ক্ষেত্রে দর্শককে মুদ্রা সম্পর্কে ধারণা রাখতে হয় তবেই সে মুদ্রা ব্যবহারের কারণ বোঝা যায় মূকাভিনয়ের ক্ষেত্রে তা একেবারেই নয়। দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত হস্ত সঞ্চালনই এখানে ব্যবহৃত হয় ফলে দর্শকদের বুঝতে কোনো অসুবিধা হয় না। মূকাভিনয়ের মঞ্চের পেছনে গাঢ় রঙের পর্দা ব্যবহৃত হয়। শিল্পীর অঙ্গভঙ্গি যাতে স্পষ্ট বোঝা যায় তাই "বডিলাইন" বোঝানোর ক্ষেত্রে শিল্পীরা আঁটোসাঁটো পোশাক পরেন ও সাদা কালো মেকআপ করেন। মেকআপের ক্ষেত্রে চোখ ভুরু ঠোঁট কালো রং দিয়ে "এনলার্জ" করে আঁকা হয়, যাতে মুখের প্রতিটি অভিব্যক্তি দর্শক স্পষ্ট বুঝতে পারেন। 


ইতালি থেকে মূকাভিনয়ের উৎপত্তি হলেও পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মূকাভিনেতা হলেন ফরাসি শিল্পী মার্সেল মার্সো। ভারতে মূকাভিনয়ের জন্ম দেন যোগেশ দত্ত। তিনি কেবল ইহা প্রচলিত করেননি বরং বড় করে তুলেছেন সস্নেহে। থিয়েটারে অভিনয় করা কালীন মধুরভাষী, বাকপটু কৌতুকাভিনেতা যোগী দৃষ্টিতে যে কোন সাধারণ বিষয় সহসা জটিল, কুটিল, মেকি, ঠুনকো ও হাস্যকর রূপে ধরা দিত। পঞ্চাশের দশকের বিখ্যাত মূকাভিনেতা মার্সেল মার্সো যখন কলকাতায় আসেন তখনই নির্বাক শিল্পের টানে যোগেশ দত্ত থিয়েটার ছেড়ে পাড়ি দেন মূকাভিনয়ের পথে। বলাই বাহুল্য চার্লি চ্যাপলিনের মত তিনিও নির্বাক শিল্পকে ভারতে আরো বেশি জনপ্রিয় করে তোলেন।


#Source: online/Digital/Social Media News # Representative Image

Journalist Name : Satarupa Karmakar

Related News