ওভার দি টপ অর্থাৎ OTT। নয়া জমানা নয়া প্ল্যাটফর্ম। পুরোনো সিনেমাহলগুলোর দেওয়ালে কান পাতলেই শোনা যাবে “শোলে“ সিনেমাটি যখন পর্দায়, হয়তো তার ৫০ তম প্রদর্শন করছে এবং হঠাৎই অমিতাভ বচ্চনের আপিয়ারিং সিন দেখা যাচ্ছে তখন আগামী পাঁচ মিনিট সিটির আওয়াজ আর চিৎকারে হয় তো কিছু শোনা যায়নি। কিন্তু সেই সিনেমা হলগুলির বর্তমান অবস্থা কি?
করোনা পরিস্থিতির বহু আগে থেকেই সিনেমা হলে সিনেমা দেখার প্রবণতা একটু একটু করে কমতে শুরু করেছিল এই যান্ত্রিক শহরে। ক্যাসেটের জায়গায় সিডি এসে গেলো, সিডি প্লেয়াড় এসে গেলো। মানুষের বেডরুমে টিভিতে বসে বসে সিনেমা দেখতে শুরু করলো। কিন্তু তখনও সিনেমা হল মরে যায়নি। তারপর এলো ছোট্ট চৌকো পাতলা একটা ডিভাইস। নাম স্মার্ট ফোন। সেই স্মার্ট ফোনে এলো 4G। কিন্তু তখনও টিকে থাকার লড়াই করতে হচ্ছে না সিনেমা হলগুলিকে। যেকোনো ভালো সিনেমার ফার্স্ট ডে ফার্স্ট শো এর চিন্তা করতে হচ্ছিলো না হল মালিককে। কিন্তু তারপরেই এলো অতিমারী, লকডাউন।
আর কি লড়াই করা সম্ভব হচ্ছে সিনেমা হলগুলোর? এদেশে কৃষকদের আত্মহত্যায় আমরা অভ্যস্ত। যদিও আমাদের দেশ কৃষি প্রধান দেশ। কিন্তু সেই দেশেই করোনা পরিস্থিতিতে কী হাল হল মালিক এবং কর্মচারীদের?
করোনার জেরে এই নিয়ে দুবার বন্ধ হয়ে যায় সিনেমা হল, শপিং মল, থিয়েটার হল এবং রেস্তোরা। ধীরে ধীরে রেস্তোরা আর শপিং মল খুলে গেলেও প্রত্যেকবার দেরী করেই খোলা হচ্ছে থিয়েটার ও সিনেমা হল, তাও ৫০% সিট নিয়ে।
আর এইসবের মাঝেই একের পর এক বিগ বাজেট মুভি রিলিজ পাচ্ছে OTT প্ল্যাটফর্মে। অফিস ট্রেন চালু হলেও মানুষে নিজেকে অভ্যস্ত করে নিয়েছে ওয়ার্ক ফ্রম হোমে। পড়াশোনাও অনলাইনে চলেছে বিগত দুই বছর ধরে। সেখানে মানুষে বিনোদন বাড়ি বসেই পেয়ে যাচ্ছেন সামান্য মূল্যে। কিন্তু তাতে পেট কি চলবে হল কর্মচারীদের।
এই বছর জুলাই মাসের রিপোর্টিং অনুযায়ী “অজন্তা”র কর্ণধার রতন সাহা গলা কাঁপা আবেগ নিয়ে জানিয়েছিলেন, ‘‘এ বার আমাদের আত্মহত্যা করতে হবে। যাঁরা আজ অনলাইনে ছবি মুক্তি করে দিলেন, তাঁদের কি আমাদের কথা এক বারের জন্যও মনে পড়ল না? আমাদের কি সংসার নেই? আমাদের কর্মচারীদের মাইনে দিতে হয় না? কী করব আমরা? আমাদের কর্মচারীরাই বা কী করবে?’’
অন্যদিকে “অশোকা” সিনেমা হলের মালিক প্রবীর রায় হতাশ হয়ে বলেছিলেন, ‘‘দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে আমাদের। এর পর যখন হল খোলার কথা ঘোষণা করবে সরকার, তখন আদৌ কত জন কাজ করতে পারবেন তা নিয়ে সন্দেহ আছে। সিনেমা দেখানো না হলেও প্রতিটি সিনেমা হলের তো মাসিক একটা মেনটেন্যান্স খরচ রয়েছে, ধোয়ামোছার ব্যাপার রয়েছে। তা নেহাত কম নয়।“
তবে পুজোর সময় থেকেই একের পর এক বড় বাজেটের সিনেমা প্রকাশ পাচ্ছে হলে। তাতে পাল্লা দিয়ে হলি বলি টলি প্রত্যেকেই আছে। গত মাসেই হলগুলি মেতে উঠেছিল বাংলা সিনেমা ' বিনিসুতোয়, ' গোলন্দাজ ' ও ইংরাজি সিনেমা জেমস বন্ড সিরিজের শেষ সিরিজ ' নো টাইম টু ডাই ' নিয়ে এবং বর্তমানে সিনেমা হলগুলি মেতে আছে ' সূর্যবংশি ' হিন্দি সিনেমায়।
হলমালিকদের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, হল খুললে মানুষে আসবে এবং মানুষ এসেছে। কিন্তু হলে সিনেমা দেখার প্রবণতা কমে গেছে অনেকটাই। একের পর এক এক OTT প্ল্যাটফর্ম তাঁদের স্লোগান মানুষের মধ্যে বপন করে দিতে সক্ষম হয়েছে। মানুষে "Netflix and chill " কে ট্রেন্ড বানিয়ে নিয়েছে। ওদিকে Hotstar এককালে জানিয়েই দিয়েছিলো, সিনেমা হল খোলার অপেক্ষা করার দরকার নেই মানুষজনের। বর্তমানে অনির্বাণ ভট্টাচার্য পরিচালিত ' মন্দার ' সিনেমা চর্চায় আছে বেশ। সেটিও প্রকাশ পাচ্ছে হইচই এর প্ল্যাটফর্মে। আর ঐযে একটি ব্রহ্মাস্ত্র এই প্ল্যাটফর্ম নিজেদের কাছে রেখে দিয়েছে, ওয়েব সিরিজ।
হাতে একটি গোটা সিনেমা দেখার মতো সময় নেই কিন্তু কিছু বিনোদন পেতেও মন করছে। রয়েছে একের পর এক তাবড় তাবড় ওয়েব সিরিজ। আসলে যন্ত্রের অধীনে মাথা ঝুঁকিয়ে নিয়েছিল মানব সমাজ বহুকাল আগেই। এখন বোধয় শুধু গ্রাস পর্ব চলছে।