প্রায় চার বছর আগে আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করলেও এত দিন পর্যন্ত কোনও দেশই সে দেশের তালিবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বীকৃতি দেয়নি। বৃহস্পতিবার প্রথম দেশ হিসাবে তালিবান সরকারকে স্বীকৃতি দিল রাশিয়া। রাশিয়ায় তালিবান নিযুক্ত আফগান দূত গুল হাসান হাসানকেও মস্কোর অতিথি হিসাবে মেনে নিল ভ্লাদিমির পুতিনের প্রশাসন। সাম্প্রতিক ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এটা ক্রেমলিনের কৌশলী পদক্ষেপ বলেই মনে করছেন অনেকে। ২০২১ সালে আমেরিকা এবং পশ্চিমি দুনিয়ার সমর্থনপুষ্ট আফগান সরকারের অপসারণের পর বিশ্বের বহু দেশেই আফগান দূতাবাসের দরজা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। রাশিয়া অবশ্য সে পথে হাঁটেনি। তবে এত দিন মস্কোর আফগান দূতাবাসের সামনে আফগানিস্তানের তিনরঙা পতাকাই দেখা যেত। বৃহস্পতিবার রুশ সংবাদ সংস্থা ‘তাস’ দেখিয়েছে, সেই পতাকা বদলে তালিবানের সাদা পতাকা লাগানো হয়েছে ওই দূতাবাসে। প্রসঙ্গত, চলতি বছরের এপ্রিল মাসেই তালিবানের উপর থেকে ‘সন্ত্রাসবাদী’ তকমা প্রত্যাহার করে নিয়েছিল পুতিন প্রশাসন। তখনই জল্পনা ছড়ায় যে, তালিবান সরকারকে স্বীকৃতি দিতে চলেছে মস্কো।
আফগান সীমান্তে আবার টিটিপির হামলা, বিস্ফোরণে নিহত সহকারী কমিশনার, মহকুমাশাসক-সহ পাঁচ
রাশিয়ার এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন তালিবান সরকারের ভারপ্রাপ্ত বিদেশমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি। তিনি বলেন, “আমাদের (রাশিয়া এবং আফগানিস্তান) ইতিহাসে এটা একটা বড় মাইলফলক হতে চলেছে।“ বৃহস্পতিবারই মস্কোয় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে রাশিয়ায় তালিবানের দূতের সঙ্গে দেখা করেন রুশ উপ বিদেশমন্ত্রী আন্দ্রে রুদেঙ্কো।
আশির দশকে আফগানিস্তানে ক্ষমতা দখলের দ্বন্দ্বে হস্তক্ষেপ এবং গৃহযুদ্ধের তিক্ত ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত রাশিয়া। ১৯৮৯ সালে সেনা প্রত্যাহারের পর থেকে কাবুলের সঙ্গে দীর্ঘ দিন দূরত্বই বজায় রেখেছিল মস্কো। তবে তালিবরা কাবুলের ক্ষমতা দখল করার পর আফগানিস্তানকে কেন্দ্র করে নয়া অক্ষ গড়ে ওঠে। ইরানের সঙ্গে আফগানিস্তানের প্রায় ৯০০ কিলোমিটারের সীমান্ত রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই কারণেও আফগানিস্তানের একটি গুরুত্ব রয়েছে। ভারতের মতো বহু দেশ আনুষ্ঠানিক ভাবে এই সরকারকে স্বীকৃতি না দিলেও কাবুলের সঙ্গে যোগাযোগের দরজা পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়নি। তালিবান শাসিত আফগানিস্তানে মানবাধিকার লঙ্ঘন, নারীদের ক্ষমতা খর্ব করা নিয়ে বার বারই প্রশ্ন উঠেছে। ওয়াশিংটনও বার বার বিষয়গুলি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এই আবহে রাশিয়া বিশ্বের প্রথম দেশ হিসাবে তালিবানের আস্থা অর্জনের পথে কয়েক ধাপ এগিয়ে গেল বলেই মনে করা হচ্ছে।