"রথ টানলে দুর্গা আসে"—এই কথাটি শুধু একটি লোককথা নয়, বরং গ্রামবাংলার মানুষের হৃদয়ের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এক গভীর বিশ্বাস। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুরের নানা অঞ্চলে এই বিশ্বাস আজও শক্তভাবে দাঁড়িয়ে আছে। রথযাত্রা কেবল জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তিকে টেনে নেওয়ার ধর্মীয় আয়োজন নয়, এটি হয়ে উঠেছে এক ঐতিহ্য, এক আবেগ এবং কিছু মানুষের জীবনের আশার আলো।
অনেকে বলেন, যারা সারাবছর কোনও মন্দিরে দুর্গাপূজো করতে পারেন না বা যাদের বাড়িতে দুর্গাপূজো হয় না, তারা রথের রশিতে হাত রাখেন এই বিশ্বাসে—"রথ টানলে মা দুর্গা একদিন ঠিক আসবেন।" সেই মা হয়ত আধ্যাত্মিক রূপে, অথবা জীবনের নতুন আনন্দ ও আশীর্বাদের রূপে। রথের দিন তাই শুধু রথ টানার নয়, এটা একরকম মানসিক প্রস্তুতিও। অনেকে মনে করেন, এই রথযাত্রা মানেই একরকম অদৃশ্য আহ্বান—মাকে আসার ডাক দেওয়া। তারই ধারাবাহিকতায় দেখা যায়, অনেক পরিবারে সত্যিই রথ টানার পরের বছর দুর্গাপূজোর আয়োজন শুরু হয়। কেউ নিজের বাড়িতে ছোট করে প্রতিমা গড়ে, কেউ বারোয়ারি পূজোয় যুক্ত হন। তাই এই বিশ্বাস আজও হারায়নি।
দিঘায় ঐতিহাসিক মুহূর্ত: জগন্নাথ মন্দিরে প্রথম রথযাত্রা, তুঙ্গে ভক্তি ও উদ্দীপনা
শুধু গ্রামেই নয়, শহরেও অনেক মানুষ আজও মনে করেন, রথ টানা মানে এক পবিত্রতা ছোঁয়া। সেই মুহূর্তে ঈশ্বরের সঙ্গে সরাসরি এক আত্মিক যোগাযোগ তৈরি হয়, যা তাদের জীবনে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি বয়ে আনে। আজকের আধুনিক সমাজে যেখানে অনেক বিশ্বাস হারিয়ে যাচ্ছে, সেখানে "রথ টানলে দুর্গা আসে"–এই একটি বাক্য যেন ধরে রেখেছে বাংলার লোকবিশ্বাস, সংস্কৃতি এবং এক গভীর আবেগ। রথযাত্রার মেলা, উৎসবের আনন্দ আর সেই রশিতে হাত রাখা মানুষগুলোর চোখে মিশে থাকে অপেক্ষা—মায়ের ফিরে আসার, এক নতুন শুরু হওয়ার।