রাজ্যের অন্যতম জনপ্রিয় সমুদ্র শহর দিঘায় বৃহস্পতিবার লেখা হল এক নতুন ইতিহাস। নবনির্মিত জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনের পর এই প্রথমবার আয়োজিত হতে চলেছে রথযাত্রা, আর সেই উপলক্ষে গোটা দিঘা এখন উৎসবের আমেজে মাতোয়ারা।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই দিঘায় পৌঁছে গিয়েছেন এবং বৃহস্পতিবার সকালে তিনি রথযাত্রার নিরাপত্তা ও পরিকাঠামো নিয়ে প্রস্তুতি বৈঠক সারেন জগন্নাথ মন্দির ট্রাস্ট কমিটির সঙ্গে। মন্দিরের ৭ নম্বর গেট থেকে ৩ নম্বর গেট পর্যন্ত পায়ে হেঁটে যান মুখ্যমন্ত্রী, রাস্তার সঙ্গে রথের মাপ খতিয়ে দেখেন হাতে ফিতে ধরে। তাঁর সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের পাঁচ মন্ত্রী—অরূপ বিশ্বাস, ইন্দ্রনীল সেন, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, সুজিত বসু ও স্নেহাশিস চক্রবর্তী—এছাড়া ছিলেন হিডকোর ভাইস চেয়ারম্যানও। মুখ্যমন্ত্রী জানান, রথযাত্রার দিন পুণ্যার্থীরা জগন্নাথ মন্দিরে প্রবেশ করতে পারবেন। মন্দিরে পাথরের বিগ্রহই পূজিত হবেন, আর রথে স্থাপন করা হবে নিমকাঠের বিগ্রহ। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে শুরু হবে পূজার্চনা, দুপুর ২টা থেকে ২.৩০-র মধ্যে হবে বিশেষ আরতি। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও দুপুরের মধ্যেই মন্দিরে উপস্থিত হবেন বলে জানানো হয়েছে। দুপুর আড়াইটে নাগাদ শুরু হবে রথযাত্রা। প্রায় পৌনে এক কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করে রথ পৌঁছবে 'মাসির বাড়ি'। পথে পথে রথ থামানো হবে যাতে ভক্তরা রথ ও দেবতার দর্শন করতে পারেন। বিশাল জনসমাগমের কথা মাথায় রেখে প্রশাসনের তরফে নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। গোটা রুটে থাকবে ব্যারিকেড। তবে ব্যারিকেডের সঙ্গে ছোঁয়ানো থাকবে রথের রশি, ফলে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখেও ভক্তরা সেই পবিত্র রশিতে হাত রাখতে পারবেন।
উলেখ্য, জগন্নাথ দেব স্নানযাত্রার পর ১৫ দিন ‘অনসরে’ ছিলেন, ফলে মন্দিরের দরজা ছিল সাধারণের জন্য বন্ধ। বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৬টায় সেই ‘অনসর’ পর্ব শেষ করে মন্দিরের গর্ভগৃহের দরজা খোলা হয় এবং দেবতাকে নবসাজে দর্শন দেন ভক্তরা। দিনটি চিহ্নিত হল ‘নেত্র উৎসব’ হিসেবে। ভোরে মঙ্গল আরতির পর জগন্নাথকে নিবেদন করা হয় ঐতিহ্যবাহী ৫৬ ভোগ—যার মধ্যে ছিল নানা প্রকার ভাজা, খিচুড়ি, ডাল, সুক্তো, মোচার তরকারি, পটলের তরকারি, বৈতালের ঘন্ট এবং বাংলার বিখ্যাত মিষ্টান্ন ও পায়েস। বিকেলে হবে রশি পূজা, যেখানে উপস্থিত থাকতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই। গোটা অনুষ্ঠান ঘিরে সাধারণ মানুষের আগ্রহ এবং ভক্তির জোয়ার রাজ্যের ইতিহাসে এই রথযাত্রাকে স্মরণীয় করে তুলছে।