চার নভশ্চরকে নিয়ে বুধবার দুপুরে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছিল স্পেস এক্সের মহাকাশযান ‘ড্রাগন’। তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত নভশ্চর শুভাংশু শুক্ল। ইতিমধ্যেই পৃথিবী থেকে প্রায় ৪১৩ কিলোমিটার দূরে, মহাকাশে ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় কাটিয়ে ফেলেছেন তাঁরা। মহাকাশ থেকে সরাসরি পৃথিবীর সঙ্গে কথোপকথনের সুযোগ পেয়েছেন এই চার নভশ্চর। ভারতীয় সময় অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সকালে অ্যাক্সিয়ম স্পেসের ‘X’ (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডেলে এই লাইভ কথোপকথনের সম্প্রচার হয়। সেখানেই শুভাংশু শোনান মহাকাশযাত্রার প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা।
“যখন যাত্রা শুরু হল, তখন একটা অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছিল,” বললেন শুভাংশু। “খুব ভাল সফর ছিল। কিন্তু মহাকাশে পৌঁছোনোর পর শরীরে কিছুটা অস্বস্তি শুরু হয়। শুনলাম, গতকাল নাকি আমি পড়ে পড়ে ঘুমিয়েছি!”মাধ্যাকর্ষণ-শূন্য পরিবেশে শারীরিক ও মানসিকভাবে অভিযোজন করাটা নভশ্চরদের কাছে অন্যতম চ্যালেঞ্জ। শুভাংশুর কথায়, “শিশুর মতো হাঁটতে শিখছি! শিখছি কীভাবে হাঁটতে হয়, কীভাবে খেতে হয়।” প্রতিটি কাজেই নতুন করে শিখতে হচ্ছে তাঁদের—এটাই মহাকাশবাসের বাস্তবতা।‘অ্যাক্সিয়ম-৪’ অভিযানে শুভাংশুর পাশাপাশি রয়েছেন নাসার প্রাক্তন নভশ্চর এবং বর্তমানে অ্যাক্সিয়ম স্পেসের মানব মহাকাশযান প্রকল্পের ডিরেক্টর পেগি হুইটসন, পোল্যান্ডের নভশ্চর স্লায়োস উজ়নানস্কি-উইসনিউস্কি, এবং ইউরোপীয় নভশ্চর টিবর কাপু। এই অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন হুইটসন নিজেই। ভারতীয় সময় অনুযায়ী বুধবার দুপুর ১২টা ১ মিনিটে আমেরিকার ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে স্পেস এক্স-এর ‘ফ্যালকন ৯’ রকেটে মহাকাশের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন শুভাংশুরা। তাঁদের মহাকাশযান ‘ড্রাগন’ পৃথিবী থেকে প্রায় ৪১৩ কিলোমিটার উচ্চতায়, প্রতি ঘণ্টায় ২৬,৫০০ কিলোমিটার বেগে পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরে চলেছে। বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টার মধ্যে তাঁদের আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছনোর কথা রয়েছে।
সিবিএসই-র দশম শ্রেণির পরীক্ষা দু’দফায়: পড়ুয়াদের মানসিক চাপ কমাতেই অভিনব উদ্যোগ
উলেখ্য, এই অভিযানের মূল উদ্দেশ্য শুধু মহাকাশে মানুষের টিকে থাকার সক্ষমতা নয়, বরং বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষানিরীক্ষা। ১৪ দিনের এই অভিযানে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে থেকে প্রায় ৬০টিরও বেশি গবেষণামূলক পরীক্ষা চালাবেন চার নভশ্চর। জীববিজ্ঞান, চিকিৎসাবিজ্ঞান, পদার্থবিদ্যা সহ একাধিক ক্ষেত্রে এই গবেষণাগুলি ভবিষ্যতের মহাকাশযাত্রার পথ আরও মসৃণ করতে সাহায্য করবে । মহাকাশে একদিন—পৃথিবীর তুলনায় একেবারে আলাদা এক জীবন। শুভাংশু শুক্ল এবং তাঁর সহযাত্রীদের এই অভিজ্ঞতা আগামী প্রজন্মের নভশ্চরদের জন্য নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে। অ্যাক্সিয়ম-৪-এর এই যাত্রা আমাদের আবারও মনে করিয়ে দেয়—মানবসভ্যতার সামনে কোনও গন্তব্যই খুব দূর নয়, যদি বিজ্ঞান ও সাহস একসঙ্গে থাকে।