মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার আঁচ যখন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে, তখন ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলিতে আমেরিকার ভয়াবহ ‘বাঙ্কার ব্লাস্টার’ হামলা যেন পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলল। এবারই প্রথমবার ইরানের মাটিতে ব্যবহার হল বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী নন-নিউক্লিয়ার বোমা— **GBU-57 ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, ইরানের ফোরদো, নাতানজ এবং ইসফাহান-এর ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক কেন্দ্রে এই বিধ্বংসী অস্ত্র প্রয়োগ করা হয়েছে। অন্তত ৫-৬টি GBU-57 বোমা ফেলা হয় বলে দাবি ট্রাম্পের।
বিশ্বের সবচেয়ে ভারী ও বিধ্বংসী কনভেনশনাল বোমাগুলির মধ্যে অন্যতম GBU-57। এর বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপ:
পুরো নাম: GBU-57 Massive Ordnance Penetrator
দৈর্ঘ্য: ২০.৫ ফুট
ব্যাস: ৩১.৫ ইঞ্চি
ওজন: প্রায় ১৩,৬০০ কেজি (৩০,০০০ পাউন্ড)
বিস্ফোরক উপাদান: ৫,৩০০ পাউন্ড উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরক
ধ্বংসক্ষমতা: কংক্রিটের স্তর ভেদ করে ২০০ ফুট গভীর গর্ত তৈরি করতে সক্ষম। ইস্পাতে তৈরি ভূগর্ভস্থ বাঙ্কারও ধ্বংস করতে পারে।
ইরান-ইজরায়েল সংঘাতে জড়িয়ে পড়ল আমেরিকা, পরমাণু কেন্দ্র লক্ষ্য করে হামলা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা
এই বোমা ছুড়তে ব্যবহৃত হয় শুধুমাত্র B-2 স্পিরিট স্টেলথ বোমারু বিমান, যা রাডার ও এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমকে ফাঁকি দিতে সক্ষম। প্রতিটি বিমান দু’টি করে GBU-57 বহনে সক্ষম। আমেরিকার এই অভিযানকে ‘সফল ও প্রয়োজনীয়’বলে ব্যাখ্যা করেছেন ট্রাম্প। হামলার পরনিজের সেনাদের ‘অভিনন্দন’ জানান তিনি। একই সঙ্গে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “ইরানের আরও বেশ কিছু এলাকা আমাদের টার্গেটে রয়েছে। যদি তারা শান্তির পথে না ফেরে, তাহলে ফলাফল ভয়াবহ হবে।” এই পদক্ষেপের পরেই ট্রাম্পের ‘সাহসী সিদ্ধান্ত’-এর প্রশংসা করেছেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু। তাঁর দাবি, “ইতিহাস এই দিনটিকে মনে রাখবে। আমেরিকা বিশ্বের শান্তির পক্ষে একটি সঠিক বার্তা দিয়েছে।” তবে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহল এমন হামলার পরিণতি নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, এই ধরনের সামরিক পদক্ষেপ পরিস্থিতিকে এমন জায়গায় নিয়ে যেতে পারে, যেখানে যুদ্ধ এড়ানো প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠবে। ইরানের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই পাল্টা প্রতিক্রিয়ার ইঙ্গিত মিলেছে। তারা স্পষ্ট জানিয়েছে, “আমেরিকা যুদ্ধ শুরু করেছে, শেষ করবে ইরান।” প্রশ্ন এখন একটাই—এই উত্তেজনা শান্তি আলোচনা দিয়ে মীমাংসা হবে, নাকি আরও ভয়াবহ সংঘাতের দিকে এগিয়ে যাবে বিশ্ব।