চিনে যাওয়ার পথে আজ জাপানে পৌঁছলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দু’দিনের সফরে একগুচ্ছ কর্মসূচি রয়েছে তাঁর। দেখা করবেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সঙ্গে। ভারত এবং জাপান দু’জনেই কোয়াডের সদস্য। দুই কোরিয়ার মধ্যে শান্তি ফেরবে ??
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বৈঠকে বসবেন চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে। মোদির এই চিন সফর মূলত এসসিও বৈঠকের জন্যই। তিয়ানজিনে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসবেন দুই রাষ্ট্রপ্রধান। এই বৈঠকগুলির দিকে গোটা বিশ্ব তাকিয়ে থাকবে, কারণ এটি এমন এক সময়ে হচ্ছে যখন ভারতের অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টালমাটাল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতের রপ্তানিপণ্যের উপর ব্যাপক শুল্ক বাড়িয়েছেন। এর পেছনে ছিল তার বারবার হুঁশিয়ারি এবং রাশিয়ার তেল কেনা নিয়ে আপত্তি, যা ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে অব্যাহত রেখেছে ভারত।
২০২০ সালে গালওয়ান সংঘাতের পর এটাই হতে চলেছে মোদির প্রথম চিন সফর। পাশাপাশি সম্প্রতি ভারতের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যার বিরোধিতা করে ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে বেজিং। এবার সেই অগ্রগতিকে ধরে রাখতেই মোদি-জিনপিং বৈঠকে বসতে চলেছেন বলে মত বিশ্লেষকদের। এই অবস্থায় মোদির সফরের দিকে বাড়তি নজর গোটা বিশ্বের। এই সফর প্রসঙ্গে মোদিকে অভ্যর্থনা জানিয়ে চিনের বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র গুয়ো জিয়াকুন বলেন, ‘এসসিও তিয়ানজিন শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিন স্বাগত জানায়। আমরা বিশ্বাস করি সকল পক্ষের যৌথ প্রচেষ্টায় এই সম্মেলন ঐক্য, বন্ধুত্ব এবং সুনির্দিষ্ট ফলাফলের প্রতীক হয়ে উঠবে।’
সীমান্তে সেনা মোতায়েন এখনও রয়েছে। তবে উভয় সরকারই তাৎক্ষণিক সংঘর্ষের ঝুঁকি কমাতে কাজ করেছে এবং সাম্প্রতিক যোগাযোগগুলি ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রিত শিথিলতার ইঙ্গিত দিচ্ছে। সাত বছরেরও বেশি সময় পর মোদির এটাই হবে চিনে প্রথম সফর। এর আগে তিনি ২০১৮ সালে উহানে শি জিনপিংয়ের সঙ্গে একটি আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেছিলেন। বৈঠকে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের স্থায়ী সমাধান কি হবে
পুতিনের সঙ্গে বৈঠকও সমান গুরুত্বপূর্ণ। ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখে থাকা রাশিয়া ভারতকে ঐতিহ্যগত অংশীদার হিসেবে ধরে রাখতে চাইছে। পাশাপাশি চিনের সঙ্গে কৌশলগত ঘনিষ্ঠতাও বাড়াচ্ছে। মস্কো সম্প্রতি ভারত-চিন-রাশিয়া ত্রিপাক্ষিক আলোচনার ইঙ্গিত দিয়েছে। তিয়ানজিনে পুতিন-মোদি আলোচনায় বিষয়টি আসতে পারে।
উল্লেখ্য, মার্কিন আগ্রাসনকে পাল্লা দিতে ভারত ও চিনকে একজোট হওয়ার বার্তা একাধিকবার এসেছে বেজিংয়ের তরফে। হাতে হাত মিলিয়ে বিশ্বকে হাতি ও ড্রাগনের নাচ দেখানোর বার্তা দিয়েছিল চিন। যদিও সে বিষয়ে খুব একটা উচ্চবাচ্য করেনি ভারত। সম্প্রতি ভারতের উপর আমেরিকা ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপানোর পর নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত চিনের রাষ্ট্রদূত জু ফেইহং ট্রাম্পকে ‘মস্তান’ বলে তোপ দাগেন। তবে চিন ট্রাম্পের শুল্কনীতির বিরোধিতা ও মোদিকে স্বাগত জানালেও চিনের গতিবিধি একেবারেই সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ভারতের সঙ্গে চলা দ্বন্দ্ব দূরে সরিয়ে আমেরিকাকে টক্কর দিতে নয়াদিল্লিকে পাশে চায় বেজিং। রাজনৈতিক মহলের দাবি, সেই লক্ষ্যেই আপাতভাবে দুই দেশের কূটনৈতিক বিরোধ দূরে সরিয়ে রাখতে আগ্রহী বেজিং। এহেন পরিস্থিতিতেই মহাগুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসতে চলেছেন মোদি-জিনপিং। কেবল চিনা প্রেসিডেন্ট নন, রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গেও বৈঠক করবেন মোদি। বিশ্লেষকদের অনুমান, একজোট হয়ে আমেরিকাকে রোখার কৌশল কষতে পারে ভারত-চিন-রাশিয়া। প্রশান্ত মহাসগরীয় এলাকায় চিনকে রুখতে ভারতকে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা ছিল আমেরিকার। সেই পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দিতে পারে এই দ্বিপাক্ষিক বৈঠকগুলি।