দিঘার বুকে এই মুহূর্তে যেন এক জীবন্ত পুরীর আবির্ভাব—ধর্মীয় আচার, আলোয় ঝলমলে সৌন্দর্য আর ভক্তিভাবনায় মেতে ওঠা এক ঐতিহাসিক ক্ষণ। মঙ্গলবার বিকেল চারটেয় মহাযজ্ঞের মাহেন্দ্রক্ষণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আহুতিতে শুরু হচ্ছে নবনির্মিত জগন্নাথ মন্দিরের প্রাণপ্রতিষ্ঠা উপলক্ষে আয়োজিত বিরাট যজ্ঞ। অক্ষয় তৃতীয়ার শুভলগ্নে প্রভু জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার জীবন্ত প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে এই উৎসব ইতিমধ্যেই ধর্মপ্রাণ মানুষ ও আন্তর্জাতিক পর্যটকদের নজর কেড়েছে।
প্রসঙ্গত, মহাযজ্ঞের ভগবৎ আয়োজনে ব্যবহৃত হচ্ছে ১০০ কুইন্টাল আম ও বেল কাঠ এবং ২ কুইন্টাল ঘি। কলস স্থাপন থেকে শুরু করে বিভিন্ন তীর্থস্থান থেকে সংগৃহীত জল দিয়ে মঙ্গল কলস পূজিত হয়েছে যজ্ঞকুণ্ডে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে উপস্থিত থেকে যজ্ঞে অংশগ্রহণ করছেন ও আহুতি দিচ্ছেন, যা বাংলার রাজনীতির ইতিহাসেও এক বিশেষ দৃষ্টান্ত। তিন দেব-দেবীকে বিশেষ সুসজ্জিত খাটে ঘুম পাড়ানো হবে যজ্ঞের সমাপ্তির পর। আগামী ৩০ এপ্রিল তাঁদের ঘুম ভাঙিয়ে হবে প্রাণপ্রতিষ্ঠার স্নান ও পুণ্যাভিষেক। এ উপলক্ষে নিবেদন করা হবে ৫৬ ভোগ। ১৮৫ কিলোমিটার পথ জুড়ে—কলকাতা থেকে দিঘা পর্যন্ত—তোরণে তোরণে প্রভু জগন্নাথ ও মন্দিরের ছবি। আলোকসজ্জায় সেজে উঠেছে সৈকতনগরী। মন্দির চত্বরে চলছে মুখ্যমন্ত্রীর লেখা ও ইন্দ্রনীল সেনের কণ্ঠে গাওয়া জগন্নাথ বন্দনার গান, “তোমায় মোদের আস্থা, তোমায় মোদের বিশ্বাস…”মুখ্যমন্ত্রীর তদারকিতে মসৃণভাবে চলছে প্রতিটি আয়োজন। ভক্তদের যাতে গরমে অসুবিধা না হয়, তার জন্য প্রথমে ১২ হাজার, পরে সংখ্যা বাড়িয়ে ২২ হাজার গামছার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুজোর কাজে যুক্ত রয়েছেন ইসকনের ৬০ জন সদস্য এবং পুরী থেকে আগত রাজেশ দ্বৈতাপতি-সহ ৩৫ জন পুরোহিত।
দিঘায় জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধন উপলক্ষে উৎসবের আবহ
উলেখ্য, মন্দিরে বসানো হয়েছে সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা, দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে বসার সুব্যবস্থা। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন একাধিক মন্ত্রী ও প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তি—অরূপ বিশ্বাস, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী, মনোজ পন্থ, ডিজিপি রাজীব কুমার প্রমুখ। নৃত্যশিল্পী ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়, শিল্পী নচিকেতা ও জিৎ গঙ্গোপাধ্যায় উপস্থিত থেকে মঙ্গলবার মঞ্চে পারফর্ম করবেন। অতিথি, সাংবাদিক, শিল্পপতি এবং কর্মরত কর্মীদের জন্য পৃথক হোটেল, থাকার ও খাওয়ার সুব্যবস্থা করা হয়েছে। এমনকি ডেকরেটর ও ইভেন্ট কর্মীদের সঙ্গেও সরাসরি কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। বাংলার বুকে এই আন্তর্জাতিক মাপের ধর্মীয় আয়োজন যে শুধু ধর্মীয় আবেগকে নয়, পর্যটন ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে নতুন মাত্রা দিচ্ছে—তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে এই আয়োজন হয়ে উঠেছে এক ঐতিহাসিক স্মারক, যা বহুদিন মানুষের মনে রয়ে যাবে।