কাশ্মীর উপত্যকায় ফের জঙ্গি তৎপরতার ছায়া। পহেলগাঁওয়ে সদ্য ঘটে যাওয়া নৃশংস জঙ্গি হামলার পর বড় সিদ্ধান্ত নিল জম্মু ও কাশ্মীর সরকার। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে ৮৭টি সরকারি পর্যটনকেন্দ্রের মধ্যে ৪৮টি আপাতত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি গুলমার্গ, সোনমার্গ, ডাল লেকের মতো জনপ্রিয় পর্যটনস্থলগুলিতে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা।
গত মঙ্গলবার পহেলগাঁওয়ের এক বিলাসবহুল রিসর্টে ভয়াবহ হামলা চালায় সন্ত্রাসবাদীরা। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, হামলাকারীরা সেনাবাহিনীর পোশাক পরে এসেছিল এবং পর্যটকদের ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে হামলা চালায়। হামলার ঘটনায় একাধিক পর্যটক হতাহত হন। প্রায় ৪০ রাউন্ড গুলির শব্দে কেঁপে ওঠে এলাকা। হামলার দায় প্রথমে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ স্বীকার করলেও পরে তারা সেই দায় অস্বীকার করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পুলওয়ামার পর এটিই কাশ্মীরের মাটিতে সবচেয়ে বড় জঙ্গি আক্রমণ। এই ঘটনার পর গোয়েন্দাদের তরফে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, উপত্যকার অন্যান্য এলাকাতেও একই রকম হামলার ছক কষছে সন্ত্রাসবাদীরা। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, পহেলগাঁও হামলার পর সক্রিয় হয়ে উঠেছে স্লিপার সেলগুলি। ফোনে আড়িপাতা কথোপকথন থেকে জানা গিয়েছে, জঙ্গিদের উদ্দেশ্য এবার আরও বড় আঘাত হানা। নিরাপত্তার স্বার্থে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে নিম্নলিখিত গুরুত্বপূর্ণ ও সম্ভাবনাময় পর্যটনকেন্দ্রগুলি:
- ইউসমার্গ
- তৌসি ময়দান
- দুধপাথরি
- আহরওয়াল
- কৌসরনাগ
- বাঙ্গাস
- চান্দিগ্রাম
- বাঙ্গাস ভ্যালি
- উলার
- রামপোরা
- রাজপোরা
- চিয়ারহড়
- মুন্দিজ হাম্মাম মার্কুট জলপ্রপাত
- খাম্পু
- ভিজিটপ
- সান টেম্পল
- ভেরিনাগ গার্ডেন
- জামিয়া মসজিদ
পহেলগাঁও সন্ত্রাস: চিন-পাকিস্তান ঘনিষ্ঠতা ও ভারতের পাশে আমেরিকা—বিশ্ব কূটনীতিতে দ্বন্দ্ব স্পষ্ট
এছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি রিসর্ট ও হোটেল বন্ধ করা হয়েছে। কাশ্মীর পুলিশ ইতিমধ্যেই অ্যান্টি-ফিদায়েঁ স্কোয়াড মোতায়েন করেছে। সেনা ও আধা-সামরিক বাহিনীর সহায়তায় গঠিত এই বিশেষ দলগুলোকে সক্রিয় জঙ্গি অনুপ্রবেশ রুখতে তৎপর করা হয়েছে। পর্যটন এলাকাগুলিতে চালানো হচ্ছে টহলদারি, বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। এই ঘটনার জেরে কাশ্মীরের পর্যটন শিল্প বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে। বসন্তের মৌসুমে যখন উপত্যকায় পর্যটকের ঢল নামার কথা, তখন আতঙ্কে ভুগছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পর্যটনকর্মীরা। বহু রিসর্ট, হোটেল ও হোমস্টে বুকিং বাতিল করছে পর্যটকেরা। কাশ্মীর সরকারের এক আধিকারিক বলেন, "আমরা কোনো ঝুঁকি নিতে চাই না। পর্যটকদের নিরাপত্তা আমাদের কাছে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পর্যটনকেন্দ্রগুলি বন্ধ থাকবে।"