পহেলগাঁওয়ে ভয়াবহ হামলার ক্ষত এখনও শুকোয়নি। তার মধ্যেই কাশ্মীর উপত্যকায় ফের রক্ত ঝরল। এবার নিশানায় এক নিরীহ কাশ্মিরী — সমাজকর্মী ঘুলাম রসুল মাগরে। কূপওয়াড়ার কান্দি খাস এলাকায় নিজের বাড়িতে ঢুকে তাঁকে গুলি করে হত্যা করে জেহাদিরা। শনিবার রাতের এই মর্মান্তিক ঘটনায় নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়েছে উপত্যকাজুড়ে।
প্রসঙ্গত, ঘুলাম রসুল মাগরে (বয়স ৪৫) এলাকার একজন সুপরিচিত সমাজকর্মী ছিলেন। স্থানীয় মানুষের উন্নয়নের স্বার্থে কাজ করে আসছিলেন বহুদিন ধরেই। অভিযোগ, শনিবার গভীর রাতে তাঁর বাড়িতে ঢুকে তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় জঙ্গিরা। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। এখনও পর্যন্ত কোনও জঙ্গি গোষ্ঠী এই হামলার দায় স্বীকার করেনি। কী কারণে ঘুলামকে নিশানা করা হল, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, এটি জেহাদিদেরই পরিকল্পিত সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ড। এই ঘটনা এমন সময় ঘটল, যখন উপত্যকা ইতিমধ্যেই পহেলগাঁওয়ে সাম্প্রতিক এক জঙ্গি হামলায় ক্ষতবিক্ষত। ২২ এপ্রিল ঘটে যাওয়া ওই হামলায় আহত হন ২৫ জন পর্যটক ও এক স্থানীয় বাসিন্দা। উপত্যকার পর্যটন মরশুমে এমন নৃশংস হামলা ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে বড় প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে। পহেলগাঁও হামলার পর থেকেই উপত্যকাজুড়ে চিরুনি তল্লাশি শুরু করেছে সেনা ও পুলিশ। বিভিন্ন জেলায় বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা। সেনাবাহিনীর এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “এখন উপত্যকার প্রতিটি এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। জঙ্গিদের দমন করতে নিরলস অভিযান চালানো হবে।” এদিকে রবিবার নিয়ন্ত্রণরেখা (LoC) বরাবর ফের বিনা প্ররোচনায় গুলি চালিয়েছে পাকিস্তান সেনা। সকাল থেকেই টুটমারি গলি ও রামপুর সেক্টর এলাকায় পাক ঘাঁটিগুলি থেকে ছোট অস্ত্রের মাধ্যমে গুলিবর্ষণ করা হয়। ভারতীয় সেনা বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, "২৬-২৭ এপ্রিলের রাতে নিয়ন্ত্রণরেখায় পাক সেনা সংঘর্ষবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। ভারতীয় সেনা পাল্টা জবাব দিয়েছে।"
উল্লেখ্য, পহেলগাঁও হামলার পর পাক সরকার ‘শিমলা চুক্তি’ অমান্য করার হুঁশিয়ারি দেয়। এরপর থেকেই সীমান্তে লাগাতার সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করে চলেছে পাকিস্তান। এই পরিস্থিতিতে ভারতও কঠোর জবাব দিতে প্রস্তুত বলে সেনা সূত্রে খবর। কাশ্মীর উপত্যকায় একদিকে যেমন সন্ত্রাসবাদী হামলা বেড়েছে, তেমনই সীমান্তে পাকিস্তানের আগ্রাসনও উদ্বেগজনক মাত্রায় পৌঁছেছে। এমন অবস্থায় কেন্দ্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের নজর এখন পুরোপুরি জম্মু-কাশ্মীরের দিকে।