কিশোরী বয়সেই এক অভিনব উদ্ভাবনের মাধ্যমে তাক লাগিয়ে দিয়েছে রাউরকেলার স্কুলছাত্রী তেজস্বিনী প্রিয়দর্শিনী। মাত্র ১৪ বছর বয়সে সে আবিষ্কার করেছে এমন এক মোটরবাইক, যা চলে শুধুমাত্র সংকুচিত বাতাসে — কোনো প্যাডেল বা জ্বালানির প্রয়োজন পড়ে না। তার এই “Compressed Air Bike” একবার চার্জে (১০ কেজি বাতাসে) চলতে পারে প্রায় ৬০ কিমি দূরত্ব।
কীভাবে এল এই আইডিয়া?
উদ্ভাবনের সূচনা হয়েছিল একদম দৈনন্দিন একটি দৃশ্য থেকে। একদিন স্থানীয় টায়ার মেরামতির দোকানে গিয়ে তেজস্বিনী লক্ষ্য করে, কীভাবে মেকানিক একটি এয়ার গান দিয়ে টায়ার খুলছিল। এই মুহূর্তেই তার মনে প্রশ্ন জাগে — যদি কেবল বাতাস দিয়ে এত শক্তি তৈরি হয়, তাহলে সেটা দিয়ে কি যানবাহন চালানো সম্ভব নয়? এই ভাবনা থেকেই শুরু হয় তার উদ্ভাবনের যাত্রা। বাবার সহযোগিতায় তেজস্বিনী তৈরি করে একটি সম্পূর্ণ নতুন গিয়ার মেকানিজম, যেখানে ব্যবহার হয়েছে একটি এয়ার ট্যাঙ্ক, স্টার্টার নোব,সেফটি ভালভ এবং প্রেসার ডায়াল। এই যন্ত্রাংশগুলোর সমন্বয়ে বাইক চালানো সম্ভব হয় প্যাডেল বা পেট্রোল ছাড়াই।
প্রসঙ্গত, তেজস্বিনী মনে করে, তার এই আবিষ্কার শুধু বাইকেই নয়, ভবিষ্যতে স্কুটার, গাড়ি এমনকি পাবলিক ট্রান্সপোর্টেও প্রয়োগ করা যেতে পারে। জ্বালানিবিহীন এমন টেকনোলজি পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব কমাবে, এবং দূষণহীন, সবুজ যানবাহনের দিকে এক বড় পদক্ষেপ হতে পারে। এই তরুণ উদ্ভাবকের কাজ ইতিমধ্যেই জাতীয় পর্যায়ে স্বীকৃতি পেয়েছে। তাকে ‘Promising Game Changer – Female’ ক্যাটাগরিতে মনোনীত করা হয়েছে SBI YONO 20 Under Twenty Awards-এ। তার স্বপ্ন — এই উদ্ভাবনকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুলে ধরা, যাতে ভারতীয় প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন বিশ্বজুড়ে মর্যাদা পায়।
পহেলগাঁও সন্ত্রাসের পর জলসীমান্তে কড়া বার্তা, আরব সাগরে নৌসেনার শক্তি প্রদর্শন
উলেখ্য, তেজস্বিনীর এই অসাধারণ যাত্রায় এক অবিচ্ছেদ্য অংশীদার তার বাবা নটবর গোঁচাইত। শুধু অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে নয়, প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম জোগাড় করতেও বাবার ভূমিকাই ছিল প্রধান। এই গল্প প্রমাণ করে দেয় — সঠিক সময়ে সাহস ও পারিবারিক সহায়তা পেলে বয়স কোনো বাধা নয়। ছোট্ট বয়সেই বিশাল কিছু গড়ে তোলা সম্ভব। তেজস্বিনী প্রিয়দর্শিনীর এই উদ্ভাবন শুধু একটি যন্ত্র নয়, বরং একটি পরিবর্তনের বার্তা। আজকের প্রজন্ম কতটা সচেতন, কল্পনাশক্তি কতটা প্রখর এবং পরিবেশ রক্ষায় কতটা দায়িত্ববান — তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ সে। এই ক্ষুদে বিজ্ঞানী এখন শুধু ওডিশার নয়, গোটা ভারতের গর্ব।