সর্বভারতীয় জয়েন্ট এন্ট্রান্স এগজামিনেশন (মেনস) ২০২৫-এর দ্বিতীয় পর্বে নজিরবিহীন সাফল্য পেল বাংলা। গোটা দেশের মধ্যে মাত্র ২৪ জন পরীক্ষার্থী ১০০ শতাংশ নম্বর পেতে সক্ষম হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের দুই মেধাবী পড়ুয়া — কাটোয়ার দেবদত্তা মাজি ও খড়গপুরের অর্চিষ্মান নন্দী। দুই কৃতীই তাদের অসাধারণ মেধা ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে রাজ্যের গর্ব হয়ে উঠেছেন। দেবদত্তা ও অর্চিষ্মান—দু’জনেই পরীক্ষায় ৩০০-র মধ্যে ৩০০ পেয়ে নিখুঁত স্কোর অর্জন করেছেন।
উলেখ্য, কাটোয়ার দুর্গাদাসী চৌধুরানী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী দেবদত্তা মাজি এর আগেও মধ্যমিকে ৭০০-র মধ্যে ৬৯৭ পেয়ে রাজ্যশ্রেষ্ঠ হয়েছিলেন। এবার জয়েন্ট মেনস-এও নিজের কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখলেন তিনি। বাংলা মাধ্যমের ছাত্রী হিসেবে এই বিরল সাফল্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। দেবদত্তার ইচ্ছা মহাকাশ বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করার। লক্ষ্য—আইআইএসসি বেঙ্গালুরুতে ভর্তি হওয়া। যদিও এতবড় সাফল্য অর্জনের পরও আত্মপ্রচারে নেই দেবদত্তা। সংবাদ মাধ্যমের সামনে আসতেও তাঁরা নারাজ। বাড়ির পরিবেশও যেন সম্পূর্ণ স্বাভাবিক—সাফল্যের চেয়ে ভবিষ্যতের প্রস্তুতিতে মনোযোগ দেবদত্তার পরিবারে। দেবদত্তার বাবা জয়ন্ত মাজি একজন অধ্যাপক, মা শেলি দাঁ (মাজি) কাটোয়ার একই বিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার শিক্ষিকা। বাড়ি কাটোয়ার বিদ্যাসাগর পল্লিতে হলেও তাঁদের আদি নিবাস পুরুলিয়ার আড়ষা।
অন্যদিকে, খড়গপুর ডিএভি মডেল স্কুলের ছাত্র অর্চিষ্মান নন্দীও জয়েন্ট মেনস-এ ১০০ শতাংশ নম্বর পেয়ে দেশের সেরা তালিকায় নাম লেখালেন। কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করে আইআইটি খড়গপুরেই ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তিনি—যে প্রতিষ্ঠান মাত্র ৪ কিমি দূরে তাঁর বাড়ি থেকে। অর্চিষ্মানের প্রাথমিক শিক্ষাজীবন শুরু হয়েছিল সাউরি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, বাংলা মাধ্যমে। পরে মায়ের চাকরির সূত্রে খড়গপুর শহরে চলে আসার পর তিনি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হন আইআইটি ক্যাম্পাসের মধ্যেই অবস্থিত ডিএভি মডেল স্কুলে। পরীক্ষার আগে হাওড়ার অঙ্কুরহাটিতে এক দুর্ঘটনার কবলে পড়লেও সেখান থেকে উঠে দাঁড়িয়ে প্রথম দফার জয়েন্টে ৯৯.৯৮ শতাংশ নম্বর পেয়েছিলেন অর্চিষ্মান। এবার দ্বিতীয় দফায় পেলেন নিখুঁত সাফল্য। তাঁর বাবা মিঠুন নন্দী একটি ওষুধ সংস্থায় কর্মরত, মা অনিন্দিতা মাইতি নন্দী বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী।
শ্রীমদ্ভগবত গীতা ও নাট্যশাস্ত্র ইউনেস্কোর ‘মেমোরি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড’ রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্ত
প্রসঙ্গত, দুই পরীক্ষার্থীর সাফল্য শুধু তাদের ব্যক্তিগত নয়—এ এক সামাজিক বার্তা। বাংলা মাধ্যমের শিক্ষার্থীরাও যে জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় দেশের সেরাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে, তার উজ্জ্বল প্রমাণ দেবদত্তা ও অর্চিষ্মান। একদিকে যেখানে দেবদত্তা দেশের মধ্যে মাত্র দুইজন ১০০ শতাংশ পাওয়া মেয়ের একজন, অন্যদিকে দুর্ঘটনার পরেও অর্চিষ্মানের ঘুরে দাঁড়ানো এক অনন্য অনুপ্রেরণা। এই কৃতিত্বের মধ্য দিয়ে ফের একবার প্রমাণ হল—প্রতিভা কখনও মাধ্যম, এলাকা বা পরিকাঠামোর গণ্ডিতে আটকে থাকে না। প্রয়োজন শুধুই স্বপ্ন, অধ্যবসায় এবং পরিবার-শিক্ষক-সমাজের সহযোগিতা।