পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম সীমান্তে অবস্থিত পুরুলিয়া জেলা শুধু খরা ও কঠোর ভূপ্রকৃতির জন্যই বিখ্যাত নয়, বরং প্রকৃতি, ইতিহাস, লোকসংস্কৃতি ও মানবিকতার এক অনন্য মেলবন্ধন এই ভূখণ্ডে খুঁজে পাওয়া যায়। ঝাড়খণ্ড সীমান্তঘেঁষা এই জেলার নানা পাহাড়, ঝরনা, বনভূমি ও প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন যেন এক ভিন্ন রকম সৌন্দর্যের দিক দেখায়। ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে পুরুলিয়া ক্রমেই এক আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক, পুরুলিয়ার ৭
অযোধ্যা পাহাড়. মালভূমির এক অংশ হিসেবে অন্তর্গত ছোটনাগপুর জেলার এ পাহাড় প্রকৃতি প্রেমীদেরই নয়, অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদেরও একটি প্রিয় জায়গা। চিরে উঠে গেছে ছোট ছোট পাথুরে পথ ঘন জঙ্গলের বুকে, চারিদিকে পাখির ডাক, আর পাহাড়ের মাথায় থেকে দেখা সূর্যাস্ত—সব মিলিয়ে অযোধ্যা পাহাড়ে সময় কাটানো মানেই এক অনন্য অভিজ্ঞতা। এই পাহাড়ের পায়ের দিকেই পাখি পাহাড় বেঁচে আছে, যে স্থানে গুহা ও প্রাকৃতিক গঠন দেখে বিস্ময়ে অভিভূত হবেন। এখানকার শিলাচিত্র ও নিসর্গ দেখে বোঝা যায়, প্রাগৈতিহাসিক যুগেও এই পাহাড় মানুষের বসবাসের সাক্ষী ছিল। যাঁরা একটু নিঃশব্দে প্রকৃতির কথা শুনতে চান, তাঁদের জন্য আদর্শ জায়গা। বামনি ঝরনা এমন একটি জলপ্রপাত, যেখানে প্রকৃতি যেন আপনের মনে নিজের গান গেয়ে চলে। পাহাড়ি খাদের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত জলধারা and তার আশেপাশের নিস্তব্ধতা প্রকৃতি প্রেমীদের এক আধ্যাত্মিক শান্তি দেয়। পুরুলিয়া মানে আবার অনন্যতম লোকসংস্কৃতির একটি প্রাণকেন্দ্র। চাল্টির পাহাড় ও চিরু পাহাড় অঞ্চলে আদিবাসী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতিবিম্ব স্পষ্ট হয়ে থাকে। বিশেষ করে ছৌ নৃত্য ও মুখোশশিল্প এখানকার সংস্কৃতির অন্যতম প্রতিনিধি। এখানে গেলে স্থানীয় শিল্পীদের হাতে তৈরি মুখোশের কাজ দেখার অভিজ্ঞতা হয় এবং কেনা—এ দুটোই এক অনন্য অভিজ্ঞতা। জয়চণ্ডী পাহাড় ভ্রমনপ্রিয় মানুষদের এক আদর্শ গন্তব্য। এটি শুধু পর্বতারোহণের জন্যই নয়, সিনেমাপ্রেমীদের জন্যও পরিচিত স্থান, কারণ সত্যজিৎ রায়ের 'হীরক রাজার দেশে' ছবির শ্যুটিং এখানেই হয়েছিল। এখানকার পাথরের গঠন ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছবির পর্দাকে জীবন্ত করে তোলে।
প্রাকৃতিক সিরামেই চুলে আসুক দীপ্তি: ঘরোয়া উপাদানেই মিলবে কন্ডিশনারের মতো মসৃণতা ও স্বাস্থ্য
তবে ইতিহাসপ্রেমীদের মন জয় করে নেয় দলমা বনাঞ্চল ও বরনেশ্বর পাহাড়। এই জায়গাগুলো শুধু পুরাতত্ত্ব নয়, প্রকৃতির প্রাণশক্তিকেও তুলে ধরে। বর্ষাকালে এই অঞ্চল একেবারে স্বপ্নের মতো লাগে। এখানে পাহাড়ের কঠোরতা যেমন আছে, তেমনই আছে আদিবাসী সংস্কৃতির কোমল ছোঁয়া। প্রকৃতি, সংস্কৃতি, ইতিহাস আর নির্জনতা – সব একসঙ্গে খুঁজে পাওয়া যায় এই জেলার প্রতিটি কোণে। একবার ঘুরে এলে বোঝা যায়, শহরের কোলাহল ছেড়ে প্রকৃতির বুক ছুঁয়ে জীবনকে নতুন করে আবিষ্কার করার মতো জায়গা সত্যিই আছে – পুরুলিয়াতেই।