গ্রীষ্মকাল মানেই রোদেলা দিন, ছুটি আর সমুদ্রের ধারে বেড়ানোর পরিকল্পনা। তবে রোদে বেশি সময় থাকলে এক অদৃশ্য শত্রুর মুখোমুখি হতে হয়—সূর্যের তাপে ত্বকে জমে ওঠা ট্যান বা রোদে পোড়া দাগ। অনেকেই মনে করেন ট্যান কেবল রঙ ফর্সা হওয়ার পথে বাধা, কিন্তু বাস্তবতা আরও গভীর। অতিরিক্ত ট্যান শুধু রঙ কালো করে না, ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা কেড়ে নিয়ে তাকে শুষ্ক ও রুক্ষ করে তোলে। তাই সময়মতো যত্ন না নিলে ত্বক তার স্বাভাবিক জৌলুস হারিয়ে ফেলে। প্রথমেই বুঝে নিতে হবে, ট্যান আসলে কী? সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি (UV rays) ত্বকের উপর সরাসরি প্রভাব ফেললে, ত্বক নিজেকে রক্ষা করতে মেলানিন নামক রঞ্জক পদার্থ নিঃসরণ করে। এই মেলানিনই ত্বকে কালচে ভাব এনে দেয়। অনেক সময় এটি সাময়িক হলেও নিয়মিত রোদে থাকার ফলে ট্যান স্থায়ী হয়ে যায়। এই সমস্যার সমাধানে বাজারে নানা ধরনের কেমিক্যাল পণ্য পাওয়া গেলেও, প্রাকৃতিক উপায়েই মিলতে পারে কার্যকর ফল।
প্রথমেই বলা যায় লেবু ও মধুর কথা। লেবুর রস প্রাকৃতিক ব্লিচিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করে, আর মধু ত্বকে আর্দ্রতা জোগায়। এক চামচ লেবুর রসের সঙ্গে এক চামচ মধু মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে দশ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেললে, নিয়মিত ব্যবহারে ট্যান অনেকটাই হালকা হয়ে আসে। এছাড়া টক দই এবং বেসনের প্যাকও দারুণ উপকারী। টক দই ত্বকের মৃত কোষ দূর করে আর বেসন ত্বক পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।ট্যান দূর করার আরেকটি কার্যকর উপাদান হল অ্যালোভেরা। অ্যালোভেরা জেল ত্বকে শীতলতা এনে দেয়, ত্বকের জ্বালা কমায় এবং নিয়মিত ব্যবহারে রোদে পোড়া দাগ হালকা করে তোলে। চাইলে ঘরেই অ্যালোভেরা গাছ থেকে জেল সংগ্রহ করে রাতে ঘুমানোর আগে লাগানো যেতে পারে।
চিরসুন্দর ত্বকের খোঁজে: মুখের দাগছোপ বা পিগমেন্টেশন দূর করার ১১টি কার্যকর উপায়”
অনেকেই জানেন না, আলু বা টমেটোও ট্যান দূর করতে পারে। আলুর রস প্রাকৃতিক ব্লিচ হিসেবে কাজ করে এবং ত্বকে উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে। টমেটোয় থাকা লাইकोপিন সূর্যের রশ্মি থেকে সুরক্ষা দেয় এবং ট্যান হালকা করে। এই উপাদানগুলিকে নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বকে সুস্থতা ফিরে আসে। তবে শুধু বাইরের যত্ন নয়, ভেতর থেকেও ত্বকের যত্ন নিতে হবে। প্রচুর জল পান করা, তাজা ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়া, পর্যাপ্ত ঘুম এবং ত্বক উপযোগী সানস্ক্রিন ব্যবহার করা অত্যন্ত জরুরি। সানস্ক্রিন ছাড়া বাইরে বের হওয়া একপ্রকার ত্বকের সঙ্গে অন্যায়। UVA এবং UVB রশ্মি প্রতিরোধে SPF 30 বা তার বেশি সানস্ক্রিন ব্যবহার করাই শ্রেয়। সবশেষে বলা যায়, ট্যান হওয়া স্বাভাবিক, কিন্তু তা দূর করাও সম্ভব—নিয়মিত ও প্রাকৃতিক যত্নের মাধ্যমেই। ত্বক যেন শুধু রঙে নয়, স্বাস্থ্যে, মসৃণতায় ও আভায় ভরে ওঠে। কারণ সৌন্দর্য কেবল বাহ্যিক নয়, তার যত্নে লুকিয়ে থাকে আত্মবিশ্বাসের দীপ্তি। তাই যত্ন নিন, সময় দিন, ত্বককে ভালোবাসুন।