“তুমি এত মোটা কেন?”
“একটু চিকন হলে ভালো লাগত।”
“ফিটনেস মানেই সিক্স-প্যাক!”
এইসব বাক্য আমাদের চেনা, কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ার রঙিন ছবির পেছনে যে এক অদৃশ্য চাপ এবং কষ্ট লুকিয়ে আছে, সেটা কি আমরা বুঝতে পারি? ফিটনেস আজকাল শুধু শরীরচর্চা নয়, বরং একটা সোশ্যাল মিডিয়া ট্রেন্ড — যেখানে ‘পারফেক্ট বডি’ না থাকলে, আপনাকে একঘরে করে দেওয়া হয়।
ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক, ইউটিউব—সর্বত্র এখন ছড়িয়ে আছে “বডি গোল”, “ফিটনেস চ্যালেঞ্জ”, “ট্রান্সফরমেশন ভিডিও”। ফিটনেস ইনফ্লুয়েন্সাররা বলছেন:
"ডায়েট না মানলে সফলতা আসবে না!" "এই ওয়ার্কআউট না করলে বডি হবে না!"
যদিও এর পেছনে অনেক সময় থাকে স্পনসরড কনটেন্ট, রেটুচিং বা অনিয়মিত স্বাস্থ্যকর পন্থা।
ফিটনেস ইতিবাচক যখন: স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ায়। শারীরিক-মানসিক সুস্থতা তৈরি করে। লাইফস্টাইল উন্নত করে
বডি শেমিং নেতিবাচক যখন: অন্যের শরীর নিয়ে কটুক্তি করা হয়। মোটা বা চিকন হওয়ার কারণে মানুষকে অপমান করা হয়। সোশ্যাল মিডিয়ার "পারফেক্ট বডি" দেখে মানুষ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়
বিশেষত কিশোর ও তরুণীরা এতে বেশি প্রভাবিত হয়। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাক্টিভ কিশোরীদের মধ্যে ৬৫% নিজেদের শরীর নিয়ে অসন্তুষ্ট থাকে।সমাধান ও সচেতনতা: স্বাভাবিক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হোক: সুস্থ দেহ মানেই "স্লিম" বা "মাসকুলার" হতে হবে, এটা ঠিক নয়। সকল শরীরের বৈচিত্র্যকে স্বীকৃতি দেওয়া জরুরি। ইনফ্লুয়েন্সারদের দায়িত্ব: যারা ফলোয়ারদের অনুপ্রাণিত করেন, তাঁদের উচিত বাস্তব অভিজ্ঞতা ও স্বাস্থ্যসম্মত পরামর্শ দেওয়া—not just filtered perfection. মিডিয়া শিক্ষার প্রয়োজন:স্কুল, কলেজে মিডিয়া লিটারেসি শেখানো উচিত, যাতে তরুণরা বুঝতে পারে—সোশ্যাল মিডিয়া রিয়েল লাইফ না। নিজেকে ভালোবাসুন: নিজের দেহ, রঙ, গঠনকে সম্মান দিন। সৌন্দর্যের সংজ্ঞা একেকজনের কাছে একেকরকম।
ফিটনেস সংস্কৃতি যদি আমাদের সুস্থ, সক্রিয় আর আত্মবিশ্বাসী করে তোলে—তবে তা অবশ্যই প্রশংসনীয়। কিন্তু যখন সেই ফিটনেসই পরিণত হয় একজন মানুষকে হীনমন্যতা বা অপমানের শিকার বানানোর মাধ্যম হয়ে, তখন সেটা আর স্বাস্থ্য নয়, বরং একটি সমাজিক রোগ।"বডি পজিটিভিটি" শুধু ট্রেন্ড নয়—এটা হওয়া উচিত প্রতিটি মানুষের অধিকার।