“সকালে ঘুম থেকে উঠে ইউটিউব রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে ইনস্টাগ্রাম—আমার দিন শুরু ও শেষ দুটোই স্ক্রিনে,” বলছিলেন কলেজ পড়ুয়া অর্ণব সেন। কথায় কথায় তিনি জানালেন, “সবাইকে হাসিখুশি দেখতে পাই, আমার জীবনের তুলনায় যেন সবাই অনেক এগিয়ে... মাঝে মাঝে ভীষণ একা লাগে।”
দিনের অধিকাংশ সময় ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম বা স্ন্যাপচ্যাটে কাটানো মানুষদের মধ্যে ডিপ্রেশন, অ্যাংজাইটি এবং ঘুমের সমস্যা অনেক বেশি দেখা যায়। কারণ, সোশ্যাল মিডিয়ায় সবার জীবনের শুধুমাত্র ‘ফিল্টার করা সুখী মুহূর্ত’ দেখে নিজেকে তুলনা করতে করতে মানুষ নিজের জীবনকে নিঃসঙ্গ, ব্যর্থ ও অর্থহীন বলে ভাবতে শুরু করে। ভার্চুয়াল সংযোগ যতই থাক, বাস্তব যোগাযোগ ও স্পর্শের অভাব মানসিক সুস্থতার ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধক। সেলফি পোস্ট করার চেয়ে কারও সঙ্গে মুখোমুখি কথা বলা অনেক বেশি নিরাময়মূলক। এই একাকিত্বই ধীরে ধীরে রূপ নিচ্ছে বিষণ্ণতায়। আজকের ডিজিটাল যুগে যখন আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় হাজার হাজার বন্ধুকে 'বন্ধু' বলি, তখন বাস্তবে কারো সাথে মনের কথা শেয়ার করতে পারিনা ।বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার মানসিক স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। নিরবিচারে রিল বা পোস্ট স্ক্রল করা, নিজের সঙ্গে অন্যের জীবনের তুলনা করা—এসব মানুষকে এক অজানা চাপে ফেলে। এতে আত্মবিশ্বাস কমে যায়, এবং অনেক সময় বিষণ্ণতা দেখা দেয়।” মানুষ নিজের জীবনের সাথে অন্যের জীবনের তুলনা করতে থাকে এবং বিষাদগ্রস্ত হয়ে পরে। একটি মানুষ জীবন আর একটি অন্য মানুষের জীবন থেকে আলাদা হবে , এটা খুবই নরমাল। সোশ্যাল মিডিয়ার একটি বড় বৈশিষ্ট্য হল, এখানে সবাই নিজের জীবনের সুন্দর মুহূর্তগুলোই তুলে ধরেন। সায়ন্তনী, এক স্কুল শিক্ষিকা, জানালেন, “সবাইকে এত সুখী দেখলে মনে হয়, আমার জীবনে কিছুই নেই। আসলে সোশ্যাল মিডিয়াতে আমরা বাস্তবতা দেখি না, দেখি সাজানো ছবি।”
সোনা জয়ের হ্যাটট্রিক: ভারতের অ্যাথলেটরা বাজিমাত করল ২০২৫-এ
মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সোশ্যাল মিডিয়ার সঙ্গে বিরতি নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার না করা, পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে মুখোমুখি সময় কাটানো, শরীরচর্চা ও মেডিটেশন, নতুন কিছু শেখা(অভিনয়, গান, আঁকা, রান্না, ফটোগ্রাফি), বই পড়া, ডায়েরি লেখা বা প্রকৃতির সান্নিধ্যে আসা—এসব অভ্যাস মানসিকভাবে সুস্থ রাখে। সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের যোগাযোগের এক শক্তিশালী মাধ্যম—তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু সেই মাধ্যমে যদি আমরা নিজেদের হারিয়ে ফেলি, তবে সেটা আর উপকারে আসে না। আজকের প্রজন্মকে দরকার ভারসাম্য রক্ষা করা—ডিজিটাল জগৎ আর বাস্তব জীবনের মাঝে। কারণ, ভার্চুয়াল দুনিয়ায় যতই ‘লাইক’ আসুক, বাস্তব ভালোবাসা আর সংযোগের বিকল্প কিছুই নেই। সঠিক নিয়ন্ত্রণ ও সচেতন ব্যবহারে আমরা নিজেদের জন্য সময় বের করতে পারি—যেটা আরও মূল্যবান, আরও জীবন্ত। বাস্তব জীবনের রঙ আরও উজ্জ্বল হয়।